সুন্দরবনে পরিযায়ী পাখির সমাহার। ছবি: সুগত সাহা।
জুলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (জেডএসআই) এবং রাজ্য বন দফতরের উদ্যোগে সুন্দরবনের পাখিদের নিয়ে প্রকাশিত হল নতুন বই ‘বার্ডস অব দ্য সুন্দরবন বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ’। লেখক, জেএসআই অধিকর্তা কৈলাস চন্দ্র এবং সংস্থার দুই পক্ষীবিজ্ঞানী গোপীনাথ মহেশ্বরণ ও অমিতাভ মজুমদার।
সল্টলেকের অরণ্য ভবনে বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে সোমবার হাজির ছিলেন রাজ্যের ‘হেড অব দ্য ফরেস্ট ফোর্স’ রবিকান্ত সিনহা, প্রধান মু্খ্য বনপাল বিনোদকুমার যাদব-সহ বন দফতর এবং জেএসআই-এর আধিকারিকরা। অমিতাভ জানান, কয়েক বছর ধরে নিবিড় সমীক্ষা এবং সুন্দরবনের পাখিদের উপর আগেকার রিপোর্টগুলির উপর ভিত্তি করে বইটি লেখা। এতে সুন্দরবনের মোট ৪২৮টি স্থানীয় ও পরিযায়ী পাখির ছবি এবং বিবরণ রয়েছে।
এরই মধ্যে পক্ষী পর্যবেক্ষকদের একাংশের থেকে জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনার অন্তর্গত সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় এ বার শীতে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা বেড়েছে। তাঁদের অনেকে মনে করছেন, লকডাউনে দীর্ঘ দিন পরিবহণ বন্ধ থাকার ফলে পরিবেশ অনেকটা দূষণ মুক্ত হয়েছে। এ বছরে পর্যাপ্ত বর্ষাও হয়েছে। তাই কনকনে শীতে ভেড়ি, জলাশয় এবং নদীর চরে দেখা মিলতে শুরু করেছে পরিযায়ী পাখিদের।
অরণ্যভবনে বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে জেডএসআই এবং বন বিভাগের আধিকারিকরা— নিজস্ব চিত্র।
সন্দেশখালির বাসিন্দা, পক্ষীপ্রেমী মহম্মদউল্লা বলেন, ‘‘লকডাউনের ফলে পরিবেশ অনেকটা দূষণমুক্ত হয়েছে বলেই পরিযায়ী পাখিদের মিলছে। বাদাবন আর তার আশপাশের পরিবেশ এবার পরিযায়ী পাখিদের কলকাকলিতে ভরা।’’ স্থানীয় বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম জানান, বসিরহাট মহকুমার হাড়োয়া, মিনাখাঁ, সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ, স্বরূপনগর-সহ বিভিন্ন এলাকায় আগে শীত পড়লেই দেখা মিলত বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস এবং চরের পাখির। গত কয়েক বছর সংখ্যায় তারা কমতে শুরু করেছিল। ফের তারা ফিরে এসেছে। তবে কিছু চোরাশিকারি রাতের অন্ধকারে ফাঁদ পেতে এই পরিযায়ী পাখি ধরে বাজারে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
গত কয়েক ধরে হিঙ্গলগঞ্জের সামশেরনগর ও আশপাশের অঞ্চলে পাখি এবং পরিবেশ কাজে যুক্ত প্রশান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ বারের শীতে কমন স্যান্ডপাইপার, কমন রেডশ্যাঙ্ক, প্যাসিফিক গোল্ডেন প্লোভার, গ্রে হেডেড ল্যাপউইং, ইউরেশিয়ান কারলিউ, টেরেক স্যান্ডপাইপার, টেমেনিঙ্ক স্টিন্টের মতো পরিযায়ী পাখির পাশাপাশি স্থানীয় পাখি হুইমব্রেল, লার্জ ইগ্রেট, স্ট্রায়াটেড হেরনদের দেখা মিলেছে ভাল সংখ্যায়। তা ছাড়া ঝিঙেখালি জঙ্গলের পাশে নদীতে দেখা গিয়েছে পরিযায়ী হাঁস টাফডেড ডাক, নর্দার্ন শোভেলার, ইউরেশিয়ন উইজিয়নদের।’’
পাখি বিশারদ অর্ক সরকার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘লকডাউন এর সময় যে দূষণমুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু আনলক পর্ব শুরু হওয়ার পরে সেই দূষণমুক্ত পরিবেশ তো আর নেই। তাই লকডাউনের কারণে শীতে বেশি পাখির দেখা মিলছে বলা এখনই ঠিক হবে না। এ বিষয়ে নিবিড় সমীক্ষার প্রয়োজন।’’ জেডএআই-এর বিজ্ঞানী কৌশিক দেউটি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘রাজ্য বন দফতরের সহযোগিতায় জেএসআই-এর তরফে সুন্দরবনের বেশ কয়েকটি অঞ্চলের পাখিদের নিয়ে পর্যায়ক্রমে গবেষণার কাজ হচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: কাশ্মীরে সাজানো সংঘর্ষে খুনের অভিযোগে সেনা ও পুলিশ
রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল বিনোদকুমার বলেন, ‘‘আগামী ১২ জানুয়ারি থেকে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে পরিযায়ী পাখি সুমারি শুরু করবে বন দফতর। সুন্দরবন এলাকাতেও হবে সুমারি। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক জলাভূমি দিবসে সুমারির প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরি হবে। তা হাতে আসার পরেই এ বার শীতের পরিযায়ী পাখির আনুমানিক সংখ্যা বলা সম্ভব হবে।’’
আরও পড়ুন: ১৩ জানুয়ারি থেকে করোনা টিকাকরণ, জানাল স্বাস্থ্য মন্ত্রক