ই-টেন্ডারে ছাই বেচে লাভ এনটিপিসির

লাভের কড়ি এ বার ছাই বেচে। চড়া দামে ছাই বেচে লক্ষ্মীলাভ করতে চলেছে এনটিপিসি-র ফরাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এই কেন্দ্র থেকে গত বছরে ছাই বেচে এনটিপিসি আয় করে ৬ কোটি টাকা। ই-নিলামে চড়িয়ে সেই অঙ্ক ৫ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৯ কোটিতে। এনটিপিসি সূত্রে খবর, ছাই বিক্রির টাকা দিয়ে ‘অ্যাশ ফান্ড’ গড়া হবে। সেতু তৈরি, রাস্তা সংস্কারের মতো পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজেও হাত দেওয়া হবে।

Advertisement

বিমান হাজরা

ফরাক্কা শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৫ ০১:২৩
Share:

‘অ্যাশ পন্ড’। ফরাক্কায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

লাভের কড়ি এ বার ছাই বেচে।
চড়া দামে ছাই বেচে লক্ষ্মীলাভ করতে চলেছে এনটিপিসি-র ফরাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এই কেন্দ্র থেকে গত বছরে ছাই বেচে এনটিপিসি আয় করে ৬ কোটি টাকা। ই-নিলামে চড়িয়ে সেই অঙ্ক ৫ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৯ কোটিতে। এনটিপিসি সূত্রে খবর, ছাই বিক্রির টাকা দিয়ে ‘অ্যাশ ফান্ড’ গড়া হবে। সেতু তৈরি, রাস্তা সংস্কারের মতো পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজেও হাত দেওয়া হবে।
এত দিন টেন্ডার ছাড়াই এই ছাই একটি কমিটির সুপারিশ মতো কার্যত জলের দরে বিক্রি করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। এ নিয়ে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছিল এনটিপিসির অন্দরেও। তা ছাড়া, ছাই নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কম অশান্তি হয়নি ফরাক্কায়। বিতর্ক এড়াতে এ বছর ই-টেন্ডারের মাধ্যমে ছাই বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন এনটিপিসি কর্তৃপক্ষ। দেশের মধ্যে ফরাক্কা দিয়েই প্রথম এই ই-টেন্ডার ব্যবস্থা চালু করা হল।
সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত ‘মেটাল স্ক্র্যাপ ট্রেডিং কর্পোরেশন’-কে ই-টেন্ডারের দায়িত্ব দেয় এনটিপিসি। শুক্রবার এই ই-টেন্ডারে ৪৪টি ঠিকাদার সংস্থা যোগ দেয়। তার মধ্যে ৩৩টি সংস্থা ২০১৫-’১৬ অর্থ বছরের জন্য সর্বোচ্চ টন প্রতি ৬০৬ টাকা দর দিয়ে ছাই কেনার টেন্ডার জমা দিয়েছে, যা গৃহীতও হয়েছে। গত বছরেও এই দর ছিল টন প্রতি ১১৬ টাকা। আর ‘সাইলো’ থেকে উৎপন্ন ছাইয়ের দাম যেখানে গত বছরে ছিল টন প্রতি ১৭০ টাকা, এ বারে তার সর্বোচ্চ দর মিলেছে প্রতি টন ৪০০ টাকা। ২১০০ মেগাওয়াটের ফরাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে সাইলো ও ইএসপি (ইলেকট্রো স্ট্যাটিক প্রেসিপিটেটর্স) থেকে উৎপন্ন ৫.৭৫ লক্ষ টন ছাই বিক্রি করা হবে। তাতেই ওই ২৯ কোটি টাকা আদায় হবে।
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দাবি, এই ছাই ভাল মানের। যা সিমেন্ট, অ্যাসবেসটস্‌ ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। ফরাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে এই মুহূর্তে কয়লা লাগে বছরে ১ কোটি ৬ লক্ষ টন। তা থেকে ছাই উৎপন্ন হয় প্রায় ৩৬ লক্ষ টন। ‘সাইলো ও ইএসপি’ থেকে পাওয়া ৫.৭৫ লক্ষ টন ছাই ছাড়া বাকি ৩০ লক্ষ টন রাফ ছাই ‘পন্ড অ্যাশ’ হিসেবে পাইপ লাইনের মাধ্যমে অ্যাশ পন্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। একে মোটা ছাই বলে। এই ছাই বিক্রি হয় না, ব্যবহৃত হয় জমি ভরাট, বালির বিকল্প হিসেবে বাড়ি তৈরির মশলা, সড়ক নির্মাণ, ইট তৈরিতে।

Advertisement

এনটিপিসির প্রাক্তন জেনারেল ম্যানেজার রাকেশ কুমারের হিসেব মতো, এই মুহূর্তে দেশে এনটিপিসি-র বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩৭,৯০৪ মেগাওয়াট। তা থেকে গত বছর ছাই উৎপন্ন হয় ৫৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন। আরও ২২,৬৮৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। কাজ শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে ৯,৮১০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

তিনি বলেন, ‘‘ছাইকে ঠিক মতো ব্যবহার করতে না পারলে পরিবেশগত সমস্যা তৈরি হবে।’’ তিনি জানান, এনটিপিসি-র প্রধান লক্ষ্য উৎপন্ন ছাইকে ১০০ শতাংশ সামাজিক উন্নয়নের কাজে লাগিয়ে আয় বাড়ানো। আগে এই ছাই ছিল বর্জ্য বা ইন্ডাসট্রিয়াল ওয়েস্ট। এখন তাকে প্রয়োজনীয় এবং বিক্রয়যোগ্য করে তোলাই এনটিপিসি-র প্রধান লক্ষ্য।

Advertisement

ফরাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের এক পদস্থ কর্তার মত, এনটিপিসি-র বদরপুর, দাদরি, টান্ডা, কহলগাঁওতে ছাইয়ের চাহিদা তুলনায় কম। কিন্তু ফরাক্কায় লাগোয়া একটি সিমেন্ট কারখানা ছাড়াও রাজ্যের একাধিক কারখানায় এবং বাংলাদেশে উৎকৃষ্ট ছাইয়ের চাহিদা আছে। বাংলাদেশে চাহিদা আছে পন্ড অ্যাশেরও।

গত দু’বছর ধরে পন্ড অ্যাশের রাফ ছাই ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ককে ফোর লেনের সম্প্রসারণের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ফরাক্কা থেকে পাওয়া ৩৬ লক্ষ মেট্রিক টন ছাইয়ের ৯১.৪ শতাংশই অর্থাৎ ৩৩.৩৮ লক্ষ মেট্রিক টন ছাই-ই গত বছর ব্যবহার করা সম্ভব হয়েছে চাহিদা থাকার কারণেই। সেই একই কারণে সাইলো ও পিএসপি থেকে উৎকৃষ্ট মানের ছাই কেনার জন্য ৪৪ জন ক্রেতা ই-টেন্ডারে অংশ নিয়েছেন, যা আগে সংস্থার পক্ষে অকল্পনীয় ছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement