কেন্দ্রের চক্রান্তে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে দুই বর্ধমানের দু’টি প্রকল্প— অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ায় এনটিপিসি-র তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও পশ্চিম বর্ধমানে বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কারখানা গোটানোর তোড়জোড় করছে কেন্দ্র, এমনই দাবি তাঁর।
বর্ধমান শহরে বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রশাসনিক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কেন্দ্র চাইছে, কাটোয়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র না হোক। আমাদের কাছে জমি চাওয়া হয়েছিল। ১০০ একর দিয়েছে রাজ্য সরকার। তা-ও ল্যান্ড ব্যাঙ্ক থেকে, যাতে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে গোলমাল না হয়। তার পরেও দেখছি, এটা তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।’’
কাটোয়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ইতিমধ্যে প্রায় তিনশো কোটি টাকা লগ্নি করেছে এনটিপিসি। বাম আমলে ৫৫৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হলেও পরে জমি-জটে থমকে যায় প্রকল্পটি। দরকার ছিল আরও ২৯৪ একর জমি। রাজ্য সরকার একশো একর জমি দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। বাকি জমি সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে কিনছে এনটিপিসি। সূত্রের খবর, মাত্র ২৪ একর জমি কেনা বাকি রয়েছে তাদের।
কিন্তু সম্প্রতি প্রকল্পে নিযুক্ত প্রায় অর্ধেক আধিকারিককেই বদলি করে দেয় এনটিপিসি। তার পরেই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা দানা বাঁধে জমিদাতাদের মধ্যে। জমিদাতা চাষি সাগর বন্দ্যোপাধ্যায়, নুর আলি শেখরা বলেন, ‘‘এখন যদি প্রকল্প না হয় তা হলে এলাকার অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। কারণ, দশ বছর ধরে চাষাবাদও তেমন হচ্ছে না।’’
তবে বিদ্যুৎ মন্ত্রক সূত্রের খবর, বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গয়াল বুঝিয়ে দিয়েছেন, কাটোয়া নিয়ে কেন্দ্র ‘ধীরে চলো’ নীতি নিচ্ছে। কারণ, নীতিগত ভাবে কেন্দ্র নতুন তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে লগ্নি করতে চায় না। কেন্দ্রের ভারী শিল্প প্রতিমন্ত্রী তথা আসানসোলের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়ের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘উনি (মমতা) সবেতেই চক্রান্ত দেখছেন। বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরে তো মজুত করা যায় না। কারিগরি দিকটাও ভাবতে হয়। এনটিপিসি-র প্রকল্পের জন্য যা সবচেয়ে ভাল হবে, সেটাই আমাদের সরকার করবে।’’
রেল অধিগৃহীত বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কারখানার ভাগ্য নির্ধারণের জন্য সম্প্রতি ‘ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইব্যুনাল’-এ পাঠিয়েছে কেন্দ্র। কারখানা বন্ধের চক্রান্ত হচ্ছে অভিযোগে আন্দোলনে নেমেছে নানা শ্রমিক সংগঠন। তারা শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের দ্বারস্থও হয়েছে। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ‘‘ভারত সরকার বলছে, বার্ন স্ট্যান্ডার্ড বন্ধ করে দেব। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন এই কারখানা অধিগ্রহণ করে বাঁচিয়েছিলাম। কারখানা ক্ষতিতে চলছে, এমনটা নয়। তবু তুলে দেওয়ার চক্রান্ত হচ্ছে।’’
বাবুল অবশ্য বলেন, ‘‘বার্ন স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে রেলমন্ত্রীর সঙ্গে দু’বার কথা হয়েছে। আবার কথা হবে।’’ শিল্প-পরিস্থিতি নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলে বাবুলের মন্তব্য, ‘‘চক্রান্তের কথা ছেড়ে উনি (মমতা) বরং রেলমন্ত্রীর সঙ্গে এক টেবিলে বসে কী চান, তা নিয়ে আলোচনা করুন।’’