বিজেপি নেতা মুকুল রায়। —ফাইল চিত্র।
জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) হচ্ছে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। তারাপীঠে বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘খুব পরিষ্কার ভাবে বলছি, এনআরসি হচ্ছে না। যাঁরা ভ্রান্ত প্রচার করছেন, তাঁরা অন্যায় করছেন, ভুল করছেন, ভারতের মানুষের সঙ্গে তঞ্চকতা করছেন।’’
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে আন্দোলন শুরু হওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দাবি করেছেন, এনআরসি নিয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি। পরের দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও মোদীর বক্তব্যকে সমর্থন করেন। তার পর থেকে রাজ্য বিজেপি নেতারাও এনআরসি নিয়ে ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ কৌশল নিয়ে চলছেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বার বারই বলছেন, তাঁরা এনআরসি চান এবং এ রাজ্যে তা দরকার। কিন্তু তা কবে এবং কী ভাবে হবে, তা কেন্দ্রীয় সরকার ঠিক করবে। দলের নেতা হিসাবে তাঁর এর বেশি কিছু জানা নেই। মুকুল এ দিন সেই কাজে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন।
রাজ্য বিজেপি অবশ্য বিষয়টি নিয়ে এত জোরালো ভাবে কিছু বলতে নারাজ। রাজ্য দলের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘মুকুলবাবুর কাছে খবর থাকতে পারে। আমার কাছে এনআরসি নিয়ে কোনও খবরই নেই। আমরা শুধু সিএএ নিয়ে প্রচার করছি।’’ কিন্তু সিএএ নিয়ে রাজ্য বিজেপি যে প্রচার পুস্তিকা তৈরি করেছে, সেখানে তারা সাফ জানিয়েছে, এর পরে এনআরসি হবে। সিএএ বিরোধী আন্দোলন শুরুর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও বহু বার সংসদের ভিতরে-বাইরে বলেছিলেন, সারা দেশেই এনআরসি হবে। যদিও পুজোর আগে কলকাতায় এসে তিনি এনআরসি নিয়ে প্রচার করতে বারণ করেছিলেন রাজ্য নেতাদের।
এই ভাবে এনআরসি নিয়ে বিজেপির এক এক সময় এক এক রকম কথা বলাকে তাদের বিভ্রান্তি ছড়ানোর কৌশল বলে মনে করছে বিরোধীরা। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিজেপি বুঝেছে, মানুষ ওদের নাগরিকত্ব সংক্রান্ত সব পদক্ষেপের বিরোধী। তাই সকালে, দুপুরে, রাতে এক এক রকম বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। কে কী বললেন, তাতে কিছু এসে যায় না। এ রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এনআরসি করতে দেবেন না।’’ সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘বিজেপি রাবণের মতো দশ মুখে দশ রকম কথা বলছে। প্রধানমন্ত্রী বলছেন, এনআরসি নিয়ে চর্চাই হয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, সারা দেশে এনআরসি হবে। বাংলার নেতারা কখনও বলছেন, এখানে তো কেউ এনআরসি করছে না। আবার বলছেন, দু’কোটি লোককে ঘাড় ধরে বার করে দেব। এগুলো সবই মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা। যিনি যেমন ভাবেই কথা বলুন, সঙ্ঘ-বিজেপির আসল উদ্দেশ্য হল, ধর্মের নামে ভেদাভেদ তৈরি করা।’’ কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিজেপি নেতারা প্রতিনিয়ত ডাহা মিথ্যা বলছেন। সিএবি সংসদের একাধিক কমিটিতে গিয়েছিল। তখন অনেকেই আপত্তি জানিয়েছিলেন। অথচ, অমিত শাহ সংসদে অবলীলায় বললেন, কমিটিতে সর্বসম্মতিতে সিএবি গৃহীত হয়েছে। অর্থাৎ, মানুষকে ভুল বোঝানোই যে বিজেপি-র কাজ, তা বারে বারে প্রমাণিত হচ্ছে।’’