মন্টু মণ্ডল।
যুবকের মৃত্যুতে ফের এনআরসি-ভীতির অভিযোগ উঠল।
রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীরা এ নিয়ে বারবার ভরসা জোগাচ্ছেন। দিল্লি গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে এনআরসি নিয়ে তাঁর আপত্তির কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেও এনআরসি-আতঙ্ক চেপে বসেছে মানুষের মনে। ইতিমধ্যে কয়েক জনের মৃত্যুতে অভিযোগ উঠেছে, বাপ-ঠাকুর্দার ভিটে থেকে উৎখাত হতে হবে, এই চিন্তাতেই মৃত্যু হয়েছে তাঁদের।
শনিবার হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের মন্টু মণ্ডলের (৩৮) মৃত্যুতে ফের উঠছে এমন অভিযোগ। মাটিয়ার চৈতা পঞ্চায়েতের দক্ষিণ কৃপালপুর গ্রামের মন্টু গত কয়েক দিন ধরে এনআরসি নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন বলে পরিবারের দাবি। নিজের ও স্ত্রীর ভোটার কার্ডে নাম ভুল ছিল। বাচ্চাদের খাদ্য সুরক্ষা কার্ডেও ভুলভ্রান্তি ছিল। স্ত্রী মনোহারা বিবি জানান, সংশোধনের জন্য কয়েক দিন খুব ছোটাছুটি করছিলেন স্বামী। দিনরাত বলতেন, ‘‘কাগজপত্রে ভুল থাকলে ভিটেমাটি ছাড়তে হবে। আগে এ সব ঠিক করা দরকার।’’
খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এ দিন বলেন, ‘‘সকলকে বলা হচ্ছে সংযত থাকতে। অযথা বিচলিত হবেন না। আমাদের লড়াই কেন্দ্রের সঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশ্বাসের উপরে ভরসা রাখুন। কাউকে বাংলা ছাড়তে হবে না।’’
কিন্তু আশ্বাসেও ভয় কাটছে কই!
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক দিন ধরে বসিরহাট ২ ব্লক অফিস এবং চৈতা পঞ্চায়েতে দৌড়াদৌড়ি করছিলেন মন্টু। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়েও কাজ হয়নি। দুশ্চিন্তাও কাটেনি। মনোহারার দাবি, শনিবার সকাল থেকে বাড়িতে তন্ন তন্ন করে জমি-বাড়ির কিছু কাগজ খুঁজছিলেন স্বামী। বার বার বলছিলেন, এ বার মনে হচ্ছে দেশ ছাড়তে হবে। বাচ্চাগুলোকে নিয়ে পথে বসতে হবে।
মনোহারা বলেন, ‘‘এ সব কথা বলতে বলতেই হঠাৎ আমার গায়ের উপরে ঢলে পড়লেন। জ্ঞান ছিল না। স্থানীয় এক ডাক্তারবাবুকে ডেকে আনি। উনি এসে বললেন, দেহে প্রাণ নেই।’’ মন্টুর দাদা সাইফুল বলেন, ‘‘কাজকর্ম ফেলে পঞ্চায়েত আর বিডিও অফিসে ছোটাছুটি করছিল ভাই। লাইন এতই লম্বা, কাজ কিছুই এগোয়নি। খুব চিন্তায় ছিল। আমরা বুঝিয়েছিলাম, কিছু একটা ব্যবস্থা নিশ্চয়ই হবে। কিন্তু কোনও কথায় যেন ভরসা পাচ্ছিল না।’’