বিভিন্ন স্তরের সাধারণ মানুষ হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে চিকিৎসা-গাফিলতি বা ভুল চিকিৎসার শিকার তো হচ্ছেনই। খোদ চিকিৎসকেরাও যে সেই বিভ্রাট-বিড়ম্বনা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না, তার জলজ্যান্ত দৃষ্টান্ত রানিগঞ্জের বাসিন্দা ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অশোককুমার টোডানি।
পিঠের ব্যথা নিয়ে ইএম বাইপাসের লাগোয়া একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন টোডানি। অস্ত্রোপচারের পরে ব্যথা তো কমেইনি, উল্টে তাঁর হাঁটাহাঁটিও কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল! ভিন্ রাজ্যে চিকিৎসা করাতে গিয়ে ওই চিকিৎসক জানতে পারেন, তাঁর শিরদাঁড়ার ভুল অস্ত্রোপচার হয়েছে। সেই অভিযোগ নিয়ে ২০১১ সালে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। আদালত নির্দেশ দিয়েছে, ক্ষতিপূরণ হিসেবে ওই হাসপাতাল এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে ১০ লক্ষ টাকা দিতে হবে। সেই অর্থ ছাড়াও মামলার খরচ বাবদ আরও ১০ হাজার টাকা পাবেন অশোককুমার।
টোডানি দীর্ঘদিন ধরে ‘স্লিপ্ড ডিস্ক’ রোগে ভুগছিলেন। মানবদেহের শিরদাঁড়ায় কশেরুকার মধ্যে ডিস্ক বা পাত থাকে। সেই নরম ডিস্ক বা পাত সরে গেলে স্নায়ুতে চাপ সৃষ্টি করে। তার ফলে পিঠে, কোমরে ব্যথা শুরু হয়। সোটাই ‘স্লিপ্ড ডিস্ক’। টোডানি জানান, ২০১১ সালের ১ মার্চ তিনি পিয়ারলেস হাসপাতালের ন্যাশনাল নিউরোসায়েন্স সেন্টারে রাহুল দে নামে এক নিউরোসার্জেনের দ্বারস্থ হন। ২ মার্চ তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। ‘‘অস্ত্রোপচারের পরে পিঠে, কোমরে ব্যথা বাড়তে থাকে। বাঁ পা অসাড় হয়ে যায়,’’ অভিযোগ টোডানির।
রাহুলবাবু ৪ মার্চ টোডানিকে আশ্বাস দেন, ফিজিওথেরাপি করলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু কে ফিজিওথেরাপি করবেন, তা তিনি জানাননি বলে টোডানির অভিযোগ। ৫ মার্চ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে রানিগঞ্জে ফেরার পরে তাঁর হাঁটাচলা কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। ২৮ মার্চ ফের পিয়ারলেসে এলে নিউরোসার্জন আবার তাঁকে আশ্বাস দেন, ব্যথা সেরে যাবে ফিজিওথেরাপিতেই।
ব্যথা কমাতে টোডানি কলকাতার কয়েক জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখান। তাঁরা জানান, অস্ত্রোপচারেই ভুল হয়েছে। ২০১১-র জুনে তিনি কোয়ম্বত্তূরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে যান তিনি। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানান, কলকাতায় ভুল অস্ত্রোপচারে ক্ষতিগ্রস্ত ডিস্কের পাশের ডিস্কটিও সরে গিয়েছে। ফলে আবার অস্ত্রোপচার করাতে হয়। ২০১১-র ডিসেম্বরে পিয়ারলেস হাসপাতালের ‘ন্যাশনাল নিউরোসায়েন্স সেন্টার’ ও চিকিৎসক রাহুল দে-র বিরুদ্ধে ক্রেতা আদালতে মামলা করেন টোডানি।
বিচারপতি ঈশানচন্দ্র দাস ও তারাপদ গঙ্গোপাধ্যায় গত ১৭ এপ্রিল রায়ে জানান, টোডানির শিরদাঁড়ায় যে-সমস্যা হয়েছিল, তাতে অস্ত্রোপচার ছিল চিকিৎসার একেবারে শেষ ধাপ। তার আগে ওষুধ, ফিজিওথেরাপি, ব্যায়ামের মাধ্যমেই তাঁর রোগমুক্তি হতে পারত।
অভিযুক্ত চিকিৎসক রাহুলবাবু বলেন, ‘‘রায় এখনও হাতে পাইনি। তাই কিছু বলব না।’’ ন্যাশনাল নিউরোসায়েন্স সেন্টারের ম্যানেজার অমিত মিত্র জানান, তাঁরা ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে আবেদন করবেন।