ব্যান্ডেল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ফাইল চিত্র।
উত্তর ভারতের কয়লা যোগানের সমস্যার জের পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎ উৎপাদনে পড়বে না বলেই দাবি করল রাজ্যের বিদ্যুৎ দফতর। সম্প্রতি দেশের উত্তরাংশে এই সমস্যা দেখা দেওয়ায় প্রশাসনের কর্তাদের মধ্যে জোর গুঞ্জন শুরু হয়। পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎ দফতরেও এ বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, এমন পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার এই সমস্যার মোকাবিলা করবে কী ভাবে? কিন্তু, দফতরের শীর্ষ আধিকারিকরা এ বিষয়ে আশ্বস্ত রয়েছেন বলেই সূত্রের খবর। পশ্চিমবঙ্গে কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দায়িত্ব রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম লিমিটেড। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে কয়লা আনা থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সব কিছুর দায়িত্বে তারাই। নিগমের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এই মুহূর্তে পাঁচটি কয়লা-চালিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। সেগুলি হল, বীরভূমের বক্রেশ্বর, পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট, মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি, পুরুলিয়ার সাঁওতালডিহি ও হুগলির ব্যান্ডেল। এই পাঁচটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র চালাতে পাঁচটি কয়লার খনি লিজ নিয়েছে বিদুৎ নিগম। তাই এই পাঁচটি কেন্দ্রে কয়লার যোগান পর্যাপ্ত রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ দফতরের এক আধিকারিক।
পূর্ব বর্ধমান, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার কয়লা খনিগুলি থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিদ্যুৎ নিগম কয়লা নেয়। যে কয়লা খনিগুলি থেকে বিদ্যুৎ নিগম থেকে কয়লা নেয়, সেগুলি হল, পাছওয়াড়া (উত্তর), বড়জোড়া, বড়জোড়া (উত্তর), গঙ্গারামচক ও গঙ্গারামচক ভাদুলিয়া। বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্তা বলেন, "দেশের একটি প্রান্তে কয়লার যোগান কমেছে। সে দিকে আমরা সজাগ দৃষ্টি রেখে চলছি। তবে আমাদের পরিস্থিতি তেমন নয়। কারণ, পশ্চিমবঙ্গে যে পরিমাণ তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, তাতে যতটা কয়লার প্রয়োজন, তা আমরা রাজ্যের পাঁচটি কয়লা খনি থেকেই পেয়ে যাই। তাই আমাদের রাজ্যে বিদ্যুতের যোগান নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না।"
প্রসঙ্গত, কয়লার ঘাটতি নিয়ে গভীর সঙ্কটের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ভারতে। এই আবহে ভারতীয় রেল একটি বড় পদক্ষেপ করতে চলেছে। বিদ্যুতের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধির কারণে কয়লার প্রয়োজনীয়তাও বেড়েছে। এর জন্য ভারতীয় রেল গত কয়েক সপ্তাহে প্রতিদিন প্রায় ১৬টি মেল/ এক্সপ্রেস এবং যাত্রীবাহী ট্রেন বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে। ২৪ মে পর্যন্ত ৬৭০টি যাত্রীবাহী ট্রেন বাতিল করার জন্য রেলমন্ত্রক একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এর মধ্যে ৫০০টিরও বেশি ট্রেন দূরপাল্লার মেল এবং এক্সপ্রেস।
এ প্রসঙ্গে কলকাতার মেয়র তথা পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “পেট্রল ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আগে কেন্দ্রীয় সরকার ক্রাইসিসের মধ্যে ফেলেছিল দেশের জনতাকে। এখন তো দেখছি, কয়লার জোগান নিয়েও দেশে ক্রাইসিস দেখা দিয়েছে। আসলে কেন্দ্রীয় সরকার নিজেই এখন ক্রাইসিসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এর তুলনা কেবল তুঘলক জমানার সঙ্গেই করা যায়।”