হিমুলে পিএফ জমা নিয়ে জট কাটেনি, ক্ষোভ

একদা উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় দুধ সরবরাহকারী সংস্থা হিমুলের কর্মীদের বকেয়া প্রভিডেন্ট ফান্ড মেটানো নিয়ে টালবাহানা চলছেই। হিমুল সূত্রের খবর, একাধিকবার নোটিস দেওয়ার পর গত শুক্রবার সংস্থার বকেয়া ৬৭ লক্ষ টাকা না পেয়ে হিমুলের পাঁচটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘সিজ’ করেন পিএফ কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৪ ০২:০৪
Share:

একদা উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় দুধ সরবরাহকারী সংস্থা হিমুলের কর্মীদের বকেয়া প্রভিডেন্ট ফান্ড মেটানো নিয়ে টালবাহানা চলছেই। হিমুল সূত্রের খবর, একাধিকবার নোটিস দেওয়ার পর গত শুক্রবার সংস্থার বকেয়া ৬৭ লক্ষ টাকা না পেয়ে হিমুলের পাঁচটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘সিজ’ করেন পিএফ কর্তৃপক্ষ। সোমবার কলকাতায় প্রাণী সম্পাদক বিকাশ দফতরে বকেয়া পিএফ মেটানো নিয়ে বৈঠক হয়। সেখানে ওই টাকা মেটানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও ঠিক কবে তা হবে তা এখনও পরিষ্কার নয়। বিশেষ করে ওই টাকার অনুদান বৈঠকের পর অর্থ দফতরে পাঠানো হয়েছে বলেও প্রাণী সম্পাদক বিকাশ মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ দাবি করেছেন। বুধবার প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী স্বপনবাবু বলেন, “পিএফের বকেয়া মিটিয়ে দিচ্ছি। দফতরের অফিসারদের সঙ্গে পিএফ কর্তাদের কথা হয়েছে। অর্থ দফতরের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। খুব দ্রুত ওই বকেয়া মিটিয়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলি চালু হয়ে যাবে বলে আশা করছি। নতুনভাবে হিমুলকে চাঙ্গা করার নানা পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। দ্রুত শিলিগুড়িতে বৈঠক ডাকা হবে। ন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট বোর্ডে সাহায্যের আবেদন করা হচ্ছে।”

Advertisement

২০০৫ সাল থেকে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস অবধি হিমুলের তরফে পিএফের কিছু কিছু টাকা বিভিন্ন সময়ে জমা পড়লেও প্রায় ৬৭ লক্ষ টাকা বকেয়া থেকে যায়। এর পরেও ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাস অবধি কর্মীদের পিএফের অংশ প্রায় ৭৫ লক্ষ টাকা জমা পড়লেও হিমূল কর্তৃপক্ষের প্রায় ৭৫ লক্ষ বকেয়া পড়ে। গত বছরই পিএফ কর্তৃপক্ষ হিমুলকে সব কিছু চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেন। এর পরে একাধিকবার নোটিস পাঠালেও টাকা জমা না পড়ায় শেষে মাটিগাড়ার দুধের কারখানার তিনটি এবং চম্পাসারির পশু খাদ্য প্রস্তুককারক কারখানার ২টি অ্যাকাউন্ট সিজ করা হয়।

কর্মী আর অফিসারদের অভিযোগ, আর্থিক ভাবে ধুঁকতে থাকা সংস্থাকে চাঙা করার জন্য এক বছরে একাধিক বার সরকারের কাছে প্রকল্প তৈরি করে পাঠানো হয়েছে। গত সোমবার মুখ্যমন্ত্রী শিলিগুড়িতে থাকাকালীন ১৬ কোটি টাকার প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। লোকসভা ভোটের আগে জরুরি ভিত্তিতে ২ কোটির মত চাওয়া হয়েছিল। নানা টালবাহানায় তা আর বরাদ্দ হয়নি। এখনও ওই টাকা থেকেই ৬৭ লক্ষ টাকা দেওয়া বলে শোনা যাচ্ছে। এই টাকা আগে দেওয়া হলেই সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সিজ হত না বলে কর্মীদের একাংশের দাবি। কর্মীরা জানান, বাম আমল থেকেই হিমুল ধুঁকতে শুরু করে। নতুন রাজ্য সরকার ক্ষমতায় এসে গত তিন বছরে হিমূলের খোলনলচে বদলানোর আশ্বাস দিলেও এক দফায় কিছু বকেয়া মেটানোর জন্য ৫ কোটি টাকা ছাড়া কিছুই দেয়নি। গত ২৪ মে-র পর ভোটের আচরণবিধি ওঠে গেলেও বকেয়া মেটানো নিয়ে সরকার বা আধিকারিকেরা কার্যত উদাসীন ছিলেন বলে অভিযোগ।

Advertisement

হিমুল নিয়ে সরকারের ভূমিকার কড়া নিন্দা করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে হিমুল যে এলাকার, সেই মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি কেন্দ্রের কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকারও। অশোকবাবু বলেন, “রাজ্যে আমোদ অনুষ্ঠানের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে। হিমুলের কর্মীদের পিএফ-এ টাকা জমা পড়ছে না। বাম আমলে এমন কখনও হয়নি।” কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্করবাবু বলেন, “উত্তরবঙ্গ উন্নয়নের কাজ কতটা কী হচ্ছে তা হিমুলের দশা দেখলে মানুষ বুঝতে পারবেন। সংস্থা বাঁচাতে লাগাতার আন্দোলন করব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement