বাংলাদেশি ছিটমহলের বাসিন্দারা কেউ সেদেশে ফিরতে না চাইলেও ভারতীয় ছিটমহলের ৭৩৪ জন বাসিন্দা স্বদেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হতে চান। ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সাম্প্রতিক সমীক্ষায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
ছিটমহল বিনিময়ের সম্ভাবনা বাস্তবায়িত হলে দু’দেশের ছিটমহলের বাসিন্দাদের মধ্যে কত সংখ্যক পরিবার ঠিকানা বদল করতে আগ্রহী তা জানতে গত ২৭-২৮ নভেম্বর কমিটির তরফে সমীক্ষা করা হয়। বাংলাদেশ ভূখণ্ড ঘেরা ভারতের ১১১টি ছিটমহলে কমিটির ২৬টি সমীক্ষক দল ও ভারত ভূখণ্ড ঘেরা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের ৫টি সমীক্ষক দল বাসিন্দাদের মতামত জানতে চান। সংশ্লিষ্ট ছিটমহলগুলিতে কেন্দ্রীয়ভাবে শিবির করে ঠিকানা বদলে আগ্রহীদের নাম নথিভূক্ত করা হয়। সমস্ত তথ্য পর্যালোচনা করে ওই চূড়ান্ত পরিসংখ্যান উঠে এসেছে।
ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সহকারি সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “সংসদে স্থলসীমান্ত চুক্তি বিল পেশের উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ছিটমহল সমস্যার সমাধানের আশা বেড়েছে। এ জন্য পুনর্বাসন নিয়ে নতুন সমস্যার আশঙ্কা এড়াতে আগেভাগে ঠিকানা বদলে আগ্রহীদের সংখ্যা জানতে সমীক্ষা হয়। তাতেই এই পরিসংখ্যান উঠে এসেছে।” তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য বলেন, “কে কী বলছেন জানিনা, চুক্তি হলে ভারতীয় ছিটমহলের সমস্ত বাসিন্দার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারকে ওই ব্যয়ভার বহন করতে হবে।
কমিটি সূত্রেই জানা গিয়েছে, আজ মঙ্গলবার সমীক্ষার রিপোর্ট কোচবিহারের জেলাশাসকের মাধ্যমে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠানো হবে। কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, ও পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র ও বিদেশমন্ত্রকের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হবে। দু’দেশের ১৬২টি ছিটমহলে ২০১১ সালের ‘হেডকাউন্ট’ অনুযায়ী জনসংখ্যা ৫১ হাজার ৪৮৪ জন। তাঁদের মধ্যে ৩৭,৩৬৯ জন ভারতীয় ও ১৪,২১৫ জন বাংলাদেশের ছিটমহলের বাসিন্দা। এঁদের কোনও দেশের নাগরিকত্ব, ভোটাধিকার, রেশন কার্ড নেই। কমিটির কর্তারা জানিয়েছেন, ছিটমহল বিনিময় হলে ভারতের ছিটমহলগুলি বাংলাদেশের ও বাংলাদেশের ছিটমহলগুলি ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে মিশে যাবে। যাঁরা যেখানে থাকতে চান তাঁরা সেদেশের নাগরিকত্ব পাবেন। কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, “রিপোর্ট পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তা পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”
কমিটি সূত্রের খবর, ভারতীয় ছিটমহলের বাসিন্দাদের মধ্যে ঠিকানা বদল করে যাঁরা ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হতে চান, তাঁদের মধ্যে চারশো জন লালমনিরহাট জেলা লাগোয়া এলাকার ছিটমহলে থাকেন। বাকিদের মধ্যে পঞ্চগড় জেলা লাগোয়া এলাকায় ছিটমহলের তিন শতাধিক বাসিন্দা রয়েছেন। কুড়িগ্রাম জেলা লাগোয়া ভারতীয় ছিটমহলের ২২ জন ভারতের মূল ভূখণ্ডে আসতে আগ্রহী। ঠিকানা বদলে আগ্রহীদের সংখ্যা জানতে প্রথম দফার সমীক্ষার তুলনায় এ বার আগ্রহীদের সংখ্যা কমেছে।
কমিটির এক কর্তা জানান, ২০১৩ সালে কমিটির উদ্যোগে ছিটমহলে প্রথম সমীক্ষা হয়। সেসময় ভারতের ছিটমহলগুলি থেকে ১৪৯টি পরিবারের ৭৪৩ জন বাসিন্দা ঠিকানা বদল করতে আগ্রহের কথা জানান। তাঁদের মধ্যে তিন জনের মৃত্যু ও দু’টি পরিবারের সদস্যদের মতবিরোধে দুই ভাই দু’দেশের সঙ্গে থাকতে চাইছেন বলে সংখ্যা কমেছে। বাংলাদেশের ছিটমহলগুলির বাসিন্দারা তখনও নিজেদের ভারতীয় ভূখণ্ডে যুক্ত করতে চেয়েছেন।
কমিটি সূত্রেই জানা গিয়েছে, ছিটমহল বিনিময় হলে কমিটির উদ্যোগে ঠিকানা বদলে আগ্রহীদের জন্য জমির ব্যবস্থা করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। কমিটির দাবি, বর্তমানে বাংলাদেশি ছিটে ৪৭ একর খালি জমি রয়েছে। বিনিময়ের পর ভারতীয় ছিটের ১৪৯টি পরিবারকে সহজে তাদের নিকট আত্মীয়দের বাড়ি লাগোয়া এলাকায় পুনর্বাসন দেওয়া যাবে। বাংলাদেশের ছিটের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তাঁরা সকলেই ভারতের বাসিন্দা অনেকেরই আত্মীয়। জমিজমা থেকে কর্মসংস্থান প্রভৃতি নির্ভরতার কারণে ঠিকানা বদলে আগ্রহী নন।