কয়েক মাসের মধ্যে শহরের সমস্ত সিটি অটো তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল পরিবহণ দফতর। শুক্রবার শিলিগুড়িতে পরিবহণ দফতরে এক বৈঠকে এই কথা ঘোষণা করেন রাজ্য পরিবহণ দফতরে সহকারী সচিব তথা এআরটিও সৌমেন দাস। তার বদলে রাস্তায় নামার অনুমতি দেওয়া হবে চার চাকার ‘মাইক্রো ভ্যান’কে। পরিবহণ দফতর জানিয়েছে, আগামী মাসেই বৈঠক করে সমস্ত সিটি অটো মালিক ও সংগঠনগুলিকে তা জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। যে সমস্ত অটোগুলি বদলে দেওয়া হবে, সেগুলির বর্তমান মূল্য অনুযায়ী প্রয়োজনে ভর্তুকিও দেওয়া হবে বলে জানান জেলা পরিবহণ বোর্ডের সদস্য মদন ভট্টাচার্য। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিটি অটোর মালিকরা। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা না করেই কী ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, সে প্রশ্নও তুলছেন তাঁরা।
পরিবহণ দফতরের সহকারী সচিব জানান, দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতেই মূলত এই সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, “অটোগুলি বহু পুরোনো। অনেক ক্ষেত্রেই মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে। ফলে ব্যপক হারে দূষণ ছড়াচ্ছে। এটা বন্ধ করতেই এগুলি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” ব্যাপক হারে দূষণ ছড়ানো ছাড়াও সিটি অটো চালকদের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে অটো চালানোর অভিযোগ রয়েছে । এ নিয়ে বিস্তর অভিযোগও জমা পড়ে প্রতিদিনই। এআরটিও নিজেও সে কথা স্বীকার করেছেন। সিটি অটো উঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ সিটি অটো মালিকরা। গোটা বিষয়টাতে তাঁদের অন্ধকারে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সরকারি দলেরই অটো মালিকদের সংগঠন, শিলিগুড়ি সিটি অটো অপারেটর্স ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সম্পাদক নির্মল সরকার। তিনি বলেন, “আমাদের এ বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। কী হবে তাও জানি না। কোনও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার আগে আমাদের সঙ্গে কথা বললে ভাল হত। কারও ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এটা করা হচ্ছে কিনা তা দেখতে হবে।” সমস্ত অটো মালিকদের পক্ষে এই মূহুর্তে নতুন অটো কেনা সম্ভব নয় বলেও মনে করছেন তিনি। অপর এক অটো মালিক দার্জিলিং জেলা সিটি অটো ড্রাইভার্স অ্যান্ড ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক উজ্জ্বল ঘোষ বলেন, “পুরোনো বাতিল হওয়া অটো বদলানো হলে ঠিক আছে। তা ছাড়া মাইক্রোভ্যানগুলোর দাম বেশি। কিন্তু আসন সংখ্যা একই। ফলে লাভ কমবে। তা কিনতে উৎসাহ পাবেন না মালিকরা। এটা ভাবা উচিত ছিল পরিবহণ দফতরের।” অটোচালকদের অভিযোগের বিষয়টিকে আমল দিতে চাইছেন না পরিবহণ কর্তারা। মদনবাবু বলেন, “সব দিক মাথায় রেখে ভালর জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারি ভাবে সিদ্ধান্ত ঘোষণা হলে মালিকদের জানিয়ে দেওয়া হবে। তাঁদের সেটা মানতে হবে।” শিলিগুড়ি শহরে এই মুহুর্তে ১২ শো সিটি অটো চলে। বেআইনি মিলিয়ে ১৫ শো। মাইক্রো ভ্যান চলে শুধু মাত্র শহরের বাইরে, ও শহর সংলগ্ন এলাকায়। এর আগে বাম আমলে তিন চাকার এই সিটি অটোগুলিকে শিলিগুড়ি শহরের মধ্যে চালানোর জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। পরে এগুলি নিয়ে দূষণ ছড়ানো সহ বিভিন্ন অভিযোগ থাকায় তা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবছিল পরিবহণ দফতর।