সংগঠনের খামতি প্রার্থীতে মেটাতে চায় বিজেপি

সাংগঠনিক শক্তির বিচারে শিলিগুড়িতে এখনও তৃণমূল কিংবা সিপিএমের চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে বিজেপি। সে কথা বিজেপির নেতা-কর্মীদের অনেকেই একান্তে স্বীকারও করেন। সেই সাংগঠনিক খামতি যতটা সম্ভব আড়াল করতে প্রার্থী তালিকায় চমক আনতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিজেপির দার্জিলিং জেলা শাখা। দলীয় সূত্রের খবর, পাড়ায়-পাড়ায় ঘুরে, একাধিক অভিজাত রেস্তোরাঁয় বৈঠক করে নানা পেশার বিশিষ্টজনদের ওই প্রার্থী তালিকায় সামিল করে ফেলেছে বিজেপি।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৫ ০২:৪৪
Share:

বিজেপির প্রার্থী তালিকা নিয়ে বৈঠকে দার্জিলিঙের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া সহ জেলা নেতারা।

সাংগঠনিক শক্তির বিচারে শিলিগুড়িতে এখনও তৃণমূল কিংবা সিপিএমের চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে বিজেপি। সে কথা বিজেপির নেতা-কর্মীদের অনেকেই একান্তে স্বীকারও করেন। সেই সাংগঠনিক খামতি যতটা সম্ভব আড়াল করতে প্রার্থী তালিকায় চমক আনতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিজেপির দার্জিলিং জেলা শাখা। দলীয় সূত্রের খবর, পাড়ায়-পাড়ায় ঘুরে, একাধিক অভিজাত রেস্তোরাঁয় বৈঠক করে নানা পেশার বিশিষ্টজনদের ওই প্রার্থী তালিকায় সামিল করে ফেলেছে বিজেপি। শিলিগুড়ি শহরে একডাকে পরিচিত বিশেষজ্ঞ চিকিত্‌সক, আইনজীবী, ক্রীড়াবিদ, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্ণধার, প্রাক্তন বাম নেতার নামও ওই তালিকায় রয়েছে। সব ঠিকঠাক চললে আগামী সপ্তাহেই ওই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার কথা।

Advertisement

বিজেপির দার্জিলিং জেলা সভাপতি রথীন বসু বলেন, “আমাদের দার্জিলিঙের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। আমরা যত দ্রুত সম্ভব তালিকা চূড়ান্ত করে ঘোষণা করতে চাইছি।” বিজেপির দার্জিলিঙের সাংসদ জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে মোট ৩০৮ জন প্রার্থী হতে চেয়ে আবেদন করেছেন। নানা স্তরে তা নিয়ে আলোচনার করে তালিকা তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে সাংসদের দাবি। দলের একাধিক নেতা জানান, ওই তালিকায় শিলিগুড়িবাসীকে চমকে দেওয়ার মতো কয়েকজনের নাম থাকতে পারে।

শিলিগুড়ি পুরসভার ওয়ার্ড সংখ্যা ৪৭টি। ২০০৯ সালে পুরভোটে বিজেপি ৩০টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিতে হিমশিম খেয়েছে। বাকি ওয়ার্ডে কোনও প্রার্থী ছিল না বিজেপির। গত লোকসভা ভোটে মোদী-হাওয়ার সুবাদে শহরের প্রায় অর্ধেক ওয়ার্ডে বিজেপি প্রথম স্থানে ছিল। দ্বিতীয় স্থানে তৃণমূল। অধিকাংশ জায়গায় সিপিএম বিজেপির আড়ালে পড়ে যায়। কিন্তু, সেই পরিস্থিতি এখন অনেকটাই বদলেছে। বিশেষত, সংগঠনের জোরে তৃণমূল অনেক আগেই কোমর বেঁধে প্রচারে নেমেছে। সম্ভাব্য মেয়র হিসেবে ওয়ার্ড বাছাই করে প্রচারে নেমেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। পাল্টা প্রচারে নেমে পড়েছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। তিনিও ওয়ার্ড বেছে প্রচার করছেন। ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে অশোকবাবুই যে মেয়র হবেন তা একরকম বুঝিয়ে দিয়েছে সিপিএম। কংগ্রেস এখনও আসরে না নামলেও তাদের নেত্রী তথা প্রাক্তন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্তের বদলে অন্য কাউকে মেয়র হিসেবে তুলে ধরার কথা ভাবছে।

Advertisement

এই প্রেক্ষাপটে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে বিজেপি। কেন্দ্রের শাসক জোটের প্রধান দলের তরফে এখনও বিজেপির সম্ভাব্য মেয়রের নাম সামনে আনা হয়নি। ভোটে জিতলে কে মেয়র হতে পারেন তা নিয়ে বিজেপি নেতারা একান্ত আলোচনায় অত্যুত্‌সাহী কর্মী-সমর্থকদের তেমন ভাবে কোনও ইঙ্গিত দিতে পারছেন না। ফলে, বিজেপির নেতা-কর্মীরা অনেকেই হতাশায় ভূগছেন। কেউ কেউ এটাও জানিয়ে দিচ্ছেন, লোকসভা ভোটে এগিয়ে থেকেও পুরভোটের প্রস্তুতিতে এতটা পিছিয়ে শুরু করলে শেষটা ভাল করা মুশকিল হতে পারে।

বিজেপির অন্দরের খবর, সব দিক ভেবেই প্রার্থী তালিকা জমজমাট করার জন্য জেলার নির্বাচন কমিটির নেতারা মরিয়া। বিজেপি সূত্রে অনুযায়ী, ওই তালিকায় ৩০৮ জনের মধ্যে ৩ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, ৩ জন প্রবীণ ইঞ্জিনিয়র, ২ জন চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, ১২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা, ১১ জন আইনজীবী পেশায় যুক্ত। রয়েছেন ৫৪ জন গৃহবধূ, ৫ জন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রবীণ কর্মীও আবেদন করেছেন। প্রাক্তন বাম কাউন্সিলর থেকে শুরু করে বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে একদা যুক্ত থাকা আবেদনকারীর সংখ্যা ২৫ জন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তরফে ৩ জন আবেদন করেছেন। যাঁদের এরকজন মাদ্রাসার শিক্ষক। তপশিলি জাতি, উপজাতি, নেপালি সম্প্রদায়ের আবেদনকারীর সংখ্যা ১২ জন।

বিজেপি সূত্রেই জানা গিয়েছে, একজন নামী চিকিত্‌সককে মেয়র হিসেবে তুলে ধরার পক্ষে রয়েছেন দলের একাংশ। পক্ষান্তরে, বিজেপির নেতা-কর্মীদের অন্য অংশ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কোনও ব্যক্তিত্বকে মেয়র হিসেবে সামনে রাখার পক্ষপাতি। পেশায় চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ও বিজেপির এক শীর্ষ নেতাকেও মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরা হোক বলে চাইছেন দলের একাংশ। কিন্তু, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বনাম প্রাক্তন পুরমন্ত্রীর লড়াইয়ে পাল্লা দিতে বিজেপি আদপে কাউকে তুলে ধরতে পারে কি না সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছে গোটা শিলিগুড়ি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement