শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসজেডিএ)-র দুর্নীতির মামলায় সিবিআই তদন্তের দাবিতে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের একাংশ জোরকদমে আসরে নেমেছে।
এই অবস্থায়, এসজেডিএ-র দুর্নীতি মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে তারা যে সক্রিয়, তা বোঝাতে চাইছে রাজ্য সরকারও।
সরকারি সূত্রের খবর, নবান্নের নির্দেশ পেয়ে মামলায় অভিযুক্ত এসজেডিএ-র ইঞ্জিনিয়ারদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করতে সিআইডিকে অনুমতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বুধবার এসজেডিএ বোর্ডের বৈঠকে দুর্নীতি মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র মৃগাঙ্কমৌলি সরকারের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করার জন্য সিআইডিকে অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মৃগাঙ্কমৌলিবাবুকে আগেই সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছিল। আগামী ১২ মে ফের বোর্ডের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সে দিন মামলায় অভিযুক্ত আরও দুই ইঞ্জিনিয়র সপ্তর্ষি পাল ও প্রবীণ কুমারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিআইডিকে অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী দুর্নীতির সঙ্গে কোনও আপস করেন না। সেই মতোই সব কাজ হচ্ছে।”
এসজেডিএ-র বহু কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রথমে এফআইআর করার নির্দেশ দেন। এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান পদ থেকে সে সময়ে রাতারাতি সরিয়ে দেওয়া হয় রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যকে। চেয়ারম্যান হন গৌতমবাবু। শিলিগুড়ির তদানীন্তন পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন তদন্তে নেমে মৃগাঙ্কমৌলিবাবু সহ ৩ ইঞ্জিনিয়র, শঙ্কর পাল, সুব্রত দত্ত, অজয় মৈত্র, অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় সহ ১১ জনকে গ্রেফতার করেন। পুলিশ জেরা করে রুদ্রনাথবাবু, প্রাক্তন সিইও গোদালা কিরণকুমারকে। এসজেডিএ-র বোর্ড সদস্য জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিধায়ক শঙ্কর মালাকার, তৃণমূলের প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মা, তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলার সাংগঠনিক সভাপতি চন্দন ভৌমিককেও জেরা করে পুলিশ।
এই অবধি তদন্ত নিয়ে কোনও হইচই হয়নি। কিন্তু গত ২৮ ডিসেম্বর মালদহের তৎকালীন জেলাশাসক তথা এসজেডিএ-র প্রাক্তন সিইও গোদালা কিরণকুমারকে গ্রেফতারের পরে অস্বস্তিতে পড়ে রাজ্য সরকার। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ কমিশনারকে বদলি করা হয়। ২৪ ঘণ্টার মাথায় জামিনে মুক্তি পান কিরণকুমার। এর পরেই রাজ্য সরকার ওই মামলায় কয়েকজন নেতা-কর্তাকে আড়াল করতে চাইছে বলে অভিযোগ ওঠে। সিবিআই তদন্তের দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে মামলাও হয়।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার যে তদন্তে গড়িমসি করছে না, সেটা নিশ্চিত করতে মামলার দায়িত্ব সিআইডিকে তুলে দেওয়া হয়। তবে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যর বক্তব্য, “চেয়ারম্যান, বোর্ড সদস্যদের জেরা করেই ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলেই সিবিআই তদন্তের দরকার।” সিবিআই তদন্তের দাবিতে মামলা করেছেন কংগ্রেসের সুজয় ঘটকও। সেই সঙ্গে তিনি মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সন্দেহভাজনদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধ রাখার জন্য এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেটের কাছে আর্জি জানিয়েছেন।