বেহাল শিলিগুড়ির সূর্য সেন পার্ক। শিশুদের খেলার জন্য এমন অনেক রাইডই ভেঙে পড়ে আছে। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
একটা সময়ে বাঘাযতীন পার্কের টানে শহরের নানা প্রান্তের প্রবীণরা ছুটে যেতেন। কচিকাঁচারাও বিকেলে হইহই করার জন্য বেছে নিত ওই পার্ক। কিন্তু, সেই পার্ক ক্রমশ হতশ্রী হয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে সন্ধ্যার পরেই পার্কের অনেকটা এলাকা যেন নেশার আসর হয়ে ওঠে বলে অভিযোগ। জনতার চাপে পড়ে টনক নড়ে পুরসভা-প্রশাসনের।পুরবোর্ডের প্রশাসক বোর্ডের আমলে ওই পার্কের খোলনলচে পাল্টানো হচ্ছে। কিন্তু, সেটি কবে সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে তা অবশ্য কারও কাছে স্পষ্ট নয়। দিনরাত নজরদারির ব্যবস্থা রাখার দাবিও উঠেছে।
নজরদারি না থাকলে কী হতে পারে তারও দৃষ্টান্ত কম নেই। অনেক পার্কেই সকালে উঠে প্রাতর্ভ্রমণকারীদের অনেকেরই প্রথম কাজ হয়, মাঠের আনাচে-কানাচে ছনিয়ে থাকা মদের বোতল, চিপসের ফাঁকা পাউচ সাফ করা। ডাবগ্রাম থেকে বাঘা যতীন পার্ক কোনটিই ব্যতিক্রম নয়। কোথাও দেওয়াল টপকে আসর বসে বলে অভিযোগ। কোথাও নানা যোগসাজশে গেট খুলে যায়।
বস্তুত, শিলিগুড়ির পার্কের এ হেন বেহাল দশার কথা জানেন সকলেই। এটাও নেতা-কর্তাদের প্রায় সকলেরই জানা, শহরের অধিকাংশ পার্ক দেখভালের অভাবে নষ্ট হতে বসেছে। শহরের কেন্দ্রে সূর্য সেন পার্ক ছাড়াও ছোট বড় সব মিলিয়ে অন্তত ৩৮ টি পার্ক রয়েছে। সেগুলির মধ্যে বাবুপাড়া বয়েজ ক্লাবের কাছে থাকা পার্ক, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে আশ্রমপাড়া শিশু উদ্যানের মতো বেশ কয়েকটি পার্কের হাল ফেরানোর দাবি বহুদিনের। তৎকালীন মেয়র পারিষদ দেবশঙ্কর সাহা এ ব্যাপারে কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান। তবে সেগুলি যথাযত ব্যবস্থা সে ভাবে নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। কিছু ক্ষেত্রে নামমাত্র সংস্কার কাজ করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে তাও করা হয়নি। শহিদনগর এলাকায় পার্ক, গাঁধীনগর পার্ক সংস্কার করে আরও উন্নত মানের করার দাবি তুলেছেন বাসিন্দাদের একাংশ। প্রাক্তন মেয়র পারিষদ দেবশঙ্করবাবু বলেন, “আমাদের সময় কিছু পার্কের সংস্কার কাজ হয়। আর্থিক কারণেও ভাল করে কাজ করার ক্ষেত্রে সমস্যা ছিল।”
বাম জমানায় পার্কগুলির রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্ব দেওয়া হত বলে দাবি করেন প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম। বাম জমানায় পার্ক অ্যান্ড গার্ডেন্স বিভাগটি তিনি নিজেই অনেকদিন দেখেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের সময় শহরে কতগুলি পার্ক রয়েছে সেগুলি নথিভুক্ত করানো হয়। পার্কগুলি সংস্কার করতেও অর্থ বরাদ্দ হয়েছে একাধিকবার। কিন্তু কংগ্রেস, তৃণমূল বোর্ড দখলের পর পার্কগুলি বেহাল হয়ে পড়ে।” নুরুলবাবুর দাবি, তিনি শেষ পুরভোটে যে ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হন সেই ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে দুটি পার্ক নিজের কাউন্সিলের তহবিলের টাকা থেকেই কিছুটা সংস্কার করিয়েছিলেন।
বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগের তির গিয়েছে বামেদের দিকেই। কারণ, বামেদের হাতে পুরবোর্ড থাকার সময়ে শহরে পার্ক সংস্কারের ব্যাপারে পুরকর্তারা উদ্যোগী হননি বলে অভিযোগ। কংগ্রেস-তৃণমূল বোর্ড প্রায় ৪ বছর পুরসভা চালালেও হাল ফেরেনি পার্কের। পুরবোর্ড ভেঙে প্রশাসক বোর্ড হয়েছে। পুরভোটের বেশি দেরি নেই।
এই অবস্থায়, শহরের পার্কের হাল ফেরাতে যেন যুদ্ধ শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। সম্প্রতি বেশ কিছু পার্ক সংস্কারে ৩২ লক্ষ টাকা অনুমোদন করা হয়েছে। তা দিয়ে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে চিলড্রেন পার্ক, কলেজ পাড়ার শিশু উদ্যান, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে শক্তিগর এলাকার একটি পার্ক, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে একটি পার্ক, ২২ এবং ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রান্তিক শিশু উদ্যান, শিলিগুড়ি পার্ক সংস্কার করা হচ্ছে। শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের সহায়তায় সূর্যসেন পার্ককে টয়টেন চালানোর পরিকাঠামো তৈরি-সহ উন্নতি করণের বিভিন্ন কাজ চলছে।
খোদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব নিজে আসরে নেমেছেন। মন্ত্রী বলেন, “সব কটি পার্কের হাল ফিরিয়ে শহরবাসীর চাহিদা পূরণের চেষ্টা হচ্ছে। অনেক টাকা বরাদ্দ করে কাজ চলছে। গ্রীষ্মের গোড়াতেই বেশির ভাগ কাজ হয়ে যাবে। সব পার্ক বাসিন্দাদের জন্য খুলে দেওয়া হবে।” ভোটের ময়দানে আমজনতার মন কাড়ার জন্য নেতারা যে বাড়তি তৎপর হবেন তা অবশ্য অনেকেই বুঝতে পারছেন।
(শেষ)