উদ্ধার করা ইঞ্জেকশন ও নেশার ওষুধ। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
এক শ্রেণির ব্যবসায়ীর মদতে সিরিঞ্জ, নেশার ওষুধ জাঁকিয়ে বিক্রি হচ্ছে শিলিগুড়িতে। বিধান মার্কেট, ক্ষুদিরামপল্লি, চম্পাসারি, বাগডোগরা, নকশালবাড়ি, মাটিগাড়ার খুচরো ও পাইকারি বিক্রেতারা নির্বিচারে চড়া দামে তা বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওষুধ বিক্রেতা ও ড্রাগ কন্ট্রোল দফতরের একাংশের ভূমিকা নিয়েও পুলিশের অন্দরে সংশয় রয়েছে। পক্ষান্তরে, ওষুধ ব্যবসায়ীদের বড় অংশের অভিযোগ, পুলিশ সব জানা সত্ত্বেও পদক্ষেপ করছে না। এই অবস্থায়, সোমবার রাতে শিলিগুড়ির নিউ জলপাইগুড়ি ফাঁড়ির অম্বিকানগর এলাকা থেকে এক ব্যক্তিকে নেশার ওষুধ ও ইঞ্জেকশন বিক্রির অভিযোগে গ্রেফতার করছে পুলিশ। পুলিশি প্রাথমিক জেরায় সে নকশালবাড়ি ও বিধান মার্কেট এলাকা থেকে ওষুধ সংগ্রহ করেছিল বলে জানিয়েছে। শিলিগুড়ি পুলিশ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে এই জায়গাগুলি থেকে নিয়মিত এই সমস্ত ওষুধু বিক্রি হচ্ছে বলে জানতে পেরেছে।
শিলিগুড়ি পুলিশের ডিসি (হেড কোয়ার্টার) অংমু গ্যামসো পাল বলেন, “আমরা নেশার সামগ্রী বেআইনিভাবে বিক্রি ও সেবনের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযান চালাব। কথা বলা হবে ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগের সঙ্গেও।” সোমবার রাতে অম্বিকানগর এলাকা থেকে গোবিন্দ সাহা নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার কাছ থেকে ৩১০ টি ব্যথার ওষুধের শিশি ও ২৫ টি ইঞ্জেকশন সিরিঞ্জ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগেও এনজেপি, ভক্তিনগর, শিলিগুড়ি, মাটিগাড়া এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে.প্রচুর নেশার ওষুধ, কাশির সিরাপ, ঘুমের ওষুধ। তবে পুলিশেরই একাংশের দাবি, ওষুধ সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রণের চূড়ান্ত ক্ষমতা রয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোল দফতরের হাতেই। ফলে ওষুধ বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে তাঁরা সরাসরি কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেন না।
ড্রাগ কন্ট্রোল দফতরের শিলিগুড়ির বিভাগীয় ডেপুটি ডিরেক্টর নীতিশ দাস কুণ্ডু অবশ্য এমন ঘটনা তাঁদের জানা নেই বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা বিষয়টি জানা নেই। আমাদের কাছে কোনও অভিযোগও আসেনি। তবে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।” ড্রাগ কন্ট্রোলে পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মীর অভাবে নিয়মিত নজরদারি করা যায় না বলে তিনি দাবি করেন। যদিও শিলিগুড়ি বা জেলার কোনও জায়গা থেকে এই ওষুধ বিক্রি হয় না বলেই দাবি করেন ওষুধ বিক্রেতাদের সংগঠন বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের শিলিগুড়ির সচিব বিজয় গুপ্ত। তিনি বলেন, “এই সব ওষুধগুলি নেশার জন্য বিহার থেকে আনা হয় বলে শুনেছি। আমাদের এখানে কেউ এমন করলে তাঁকে বয়কট করে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য করা হয়। তবে ধৃত পাচারকারী যখন বলছে, খোঁজ নিয়ে দেখব।”
তবে ঢালাও নেশার জন্য ঘুমের ওষুধ, ব্যথা কমানোর ওষুধ, কাশির সিরাপ বিক্রি হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন ব্যবসায়ী সংগঠন ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিত্ দাস। তিনি বলেন, “শিলিগুড়ি ও লাগোয়া বহু জায়গায় এমন অনেক ব্যবসায়ী অসাধু উপায়ে বেশি দামে ওষুধ বিক্রি করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব কড়া হাতে দমন করা উচিত। আমাদের কাছে সাহায্য চাইলে আমরা তা করতে রাজি।”
পুলিশ সূত্রের খবর, ইঞ্জেকশনের জন্য ব্যবহার হওয়া ওষুধ গুলির প্যাকেটের দাম ১০ থেকে ২০ টাকা। কিন্তু মাদকাসক্তদের ব্যবসায়ীরা চড়া দামে সে সব ওষুধ বিক্রি করে। মাদকাসক্তদের হাতে সরাসরি বা দালালদের হাতে ৭০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি করে। সেগুলি দালালদের হাত হয়ে আরও বেশি দামে বিকোয়। নিউ জলপাইগুড়ি ফাঁড়ির এক পুলিশ কর্মী খগেন বর্মন বলেন, “এই মাদকাসক্তরাই শহরে চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি, কেপমারি সহ ছোট-বড় ৮০ শতাংশ অপরাধ ঘটায়। এই নেশাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে অপরাধ অনেকাংশে কমবে।”