ল্যাপটপ থেকে শর্ট সার্কিট, ভস্মীভূত হস্টেলের ১০টি ঘর

ল্যাপটপ চার্জে দিয়ে ঘরবন্দি করে সকাল বেলায় বেরিয়ে চলে গিয়েছিলেন এক আবাসিক। সেই ল্যাপটপের তার থেকেই শর্ট সাকির্টের কারণে বন্ধ ঘরে আগুন লেগে যায়। সেই আগুন ছড়িয়ে ভস্মীভূত হয়েছে শিলিগুড়ির দাগাপুরের একটি তিনতলা বেসরকারি হস্টেলের দোতলার ১০টি ঘর। প্রাথমিক তদন্তের পরে বন্ধে ঘরে চার্জে লাগানো ল্যাপটপ থেকেই আগুন ছড়িয়েছে বলে দমকল সূত্রে জানানো হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৫৩
Share:

(বাঁ দিকে) আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ছাত্রাবাস। পুড়ে যাওয়া ঘরে বেঁচে যাওয়া জিনিসের খোঁজ। শনিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

ল্যাপটপ চার্জে দিয়ে ঘরবন্দি করে সকাল বেলায় বেরিয়ে চলে গিয়েছিলেন এক আবাসিক। সেই ল্যাপটপের তার থেকেই শর্ট সাকির্টের কারণে বন্ধ ঘরে আগুন লেগে যায়। সেই আগুন ছড়িয়ে ভস্মীভূত হয়েছে শিলিগুড়ির দাগাপুরের একটি তিনতলা বেসরকারি হস্টেলের দোতলার ১০টি ঘর। প্রাথমিক তদন্তের পরে বন্ধে ঘরে চার্জে লাগানো ল্যাপটপ থেকেই আগুন ছড়িয়েছে বলে দমকল সূত্রে জানানো হয়েছে। হস্টেলে আগুনে জখম হয়েছেন ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পাঠরতা এক ছাত্রী। তাঁকে রক্ষা করতে আহত হয়েছেন আরও এক ছাত্র। যদিও, পুলিশ এবং দমকল সূত্রে জানানো হয়েছে, দু’জনের কারও আঘাতই গুরুতর নয়। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়েছে।

Advertisement

এ দিকে আগুনের ঘটনার পরে তিন তলার হস্টেল পরিদর্শন করার পরে দমকল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাড়িটিতে অগ্নিপ্রতিরোধের কোনও ব্যবস্থা ছিল না। এমনকী দমকলের অনুমোদনের মেয়াদ তিন মাস আগে পেরিয়ে গেলেও, তা পুর্ননবীকরণ করা হয়নি। দমকলের মাটিগাড়ার স্টেশন ম্যানেজার অতনু চন্দ বলেন, “ল্যাপটপ থেকেই আগুন ছড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বাড়ির ছাদের জলের ট্যাঙ্কে, দুর্ঘটনার সময় জলই ছিল না। এমনকী ফায়ার লাইসেন্সেরও জানুয়ারি মাসে মেয়াদ ফুরিয়েছে। আমরা তদন্তের রিপোর্ট উচ্চতর কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাব।” বাড়ির মালিক অবশ্য দমকল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ অস্বীকার করে, তাঁর কাছে যাবতীয় নথি রয়েছে বলে পাল্টা দাবি করেছেন।

পঞ্চনই সেতু লাগোয়া তিনতলার হস্টেলে ৮০ জন পড়ুয়ার থাকার ব্যবস্থা থাকলেও, শনিবার হস্টেলে ৩৫ জন ছিলেন। হস্টেলের দোতলায় ছাত্রীদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে, একতলা এবং তিন তলা ছাত্রদের জন্য বরাদ্দ। শিলিগুড়ির বিভিন্ন কারিগরি কলেজ সহ সাধারণ স্কুল ও কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা ওই হস্টেলে থাকেন। কী ঘটেছিল এ দিন? সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ দোতলার একটি ঘর থেকে গলগল করে ধোঁয়া বের হতে দেখেন কয়েকজন ছাত্রী। তাঁদের চিৎকারে তিন তলা থেকে ছাত্রেরা নেমে আসেন। মুহূর্তের মধ্যে দোতলা জুড়ে কালো ধোঁয়ায় ভরে যায় বলে ছাত্র-ছাত্রীরা জানিয়েছে। দোতলার বেশিরভাগ ঘরেই অবশ্য এ দিন ছাত্রী না থাকায় বন্ধ ছিল। যে ঘরগুলিতে ছাত্রীরা ছিলেন, তাঁরাও দ্রুত নীচে নেমে আসেন। অনুষ্কা শর্মা নামে ইঞ্জিনিয়ারিঙের এক ছাত্রী ভয়ে চিৎকার করতে থাকলে, তাকে জানালার পাল্লা ভেঙে বের করে আনা হয়। সে সময় ওই ছাত্রী মাথায় অল্প চোট পান। কিছুক্ষণ শ্বাসকষ্টেও ভোগেন তিনি। তাঁকে বের করে আনার সময় অশ্বিন ঝা নামে আরও এক ছাত্র পড়ে গিয়ে হাতে এবং মাথায় চোট পান বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement

হস্টেলের আবাসিক নিধি শর্মার কথায়, “কলেজ যেতে তখন তৈরি হচ্ছিলাম। হঠাৎই চিৎকার শুনে, দরজা খুলে বাইরে এসে দেখি, গলগল করে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। এক ছুটে নীচে নেমে আসি। আমার বই খাতা, জামা কাপড় সব পুড়ে গিয়েছে।” হস্টেল সূত্রে জানানো হয়েছে, দশটি ঘরে থাকা ছাত্রীদের যাবতীয় কিছু ভস্মীভূত হয়েছে। হস্টেল থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

দমকলের তিনটি ইঞ্জিন গিয়ে দেড় ঘন্টার চেষ্টায় আগুন আয়ত্বে আনে। দমকলের অভিযোগ, বাড়ির দোতলা বা তিনতলায় ওঠার সিঁড়িগুলিও অপরিসর। বাড়িটিও অত্যন্ত ঘিঞ্জি বলে দমকল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ। শিলিগুড়ি পুলিশের এসিপি মানবেন্দ্র দাস ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তবে রাত পর্যন্ত কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি বলে জানা গিয়েছে।

হস্টেলের তিনতলার এক আবাসিক, ময়নাগুড়ির বাসিন্দা কৌশিক দেবনাথ বলেন “এখানে আগুন নেভানোর জন্য কোনও ব্যবস্থা আমাদের চোখে পড়েনি। তবে মোটামুটি কম ভাড়ায় থাকা-খাওয়া পাওয়া যায়। তাই থাকি। আপাতত কয়েকদিনের জন্য বাড়ি চলে যাচ্ছি। পরে সব মিটলে ফিরব কিনা ভাবব।” অপর এক আবাসিক শেখর দাস তখনও আতঙ্কিত। শিলিগুড়িতে তিনি আত্মীয়ের বাড়ি চলে গিয়েছেন। তিনি বলেন, “এভাবে ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হয় জানলে বাড়ি থেকে আর থাকতে দেবে কিনা জানি না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement