খড়িবাড়ি ব্লকের চার প্রান্তে রয়েছে চারটি সরকারি ব্যাঙ্ক। অথচ দীর্ঘদিন ধরেই কৃষি ঋণের জন্য চাষিদের ভরসা ছিল চড়া সুদের মহাজন। সরকারি কিষান ক্রেডিট কার্ড (কেসিসি) এবং জয়েন্ট লায়াবিলিটি গ্রুপ (জেএলজি) তৈরির মাধ্যমে ঋণের ব্যবস্থা থাকলেও চাষিরা তা পাচ্ছিলেন না বলে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ। ব্যাঙ্কের তরফে আবার জমির মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্র এবং পুরানো ঋণ শোধ না করা-সহ সমস্যার কথা তুলে ধরা হচ্ছিল। শেষে অভিযোগ পৌঁছয় কলকাতা-সহ বিভিন্ন মহলে। এতেই তৎপরতা শুরু হয় প্রশাসনিক মহলে।
সোমবার দুপুরে তিনমাস পর খড়িবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির হলঘরে ‘ব্লক লেবেল ব্যাঙ্কার্স কো-অর্ডিনেশন’ কমিটির টানা বৈঠক হয়। ঠিক হয়, আগামী ৭ অগস্ট থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক এবং কৃষি দফতরের অফিসারদের উপস্থিতিতে যৌথভাবে চাষিদের জমির কাগজপত্র পরীক্ষা করে ঋণের ছাড়পত্র দেওয়ার কাজ শুরু করবে। আর এরজন্য কৃষি দফতর চাষি পিছু একটি জমির জমির তথ্য সম্বলিত শংসাপত্র দেবে। যার মাধ্যমে ব্যাঙ্ক ঋণ দেবে। আগামী ৮ মাসের মধ্যে তিন হাজার চাষিকে ঋণ দেওয়া হবে। দার্জিলিং জেলার খড়িবাড়ি-ফাঁসিদেওয়া ব্লকের সহ-কৃষি অধিকর্তা মেহফুজ আহমেদ বলেন, “খড়িবাড়ি ব্লকে জমির মালিকানার সমস্যা প্রবল। এ বার তা অনেকটাই মিটবে বলে আশা করছি।” সমস্ত ব্যাঙ্কের তরফে জেলার লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার উমেশ চন্দ্র চুয়ালসিংহ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, “কৃষি দফতরের শংসাপত্রের ভিত্তিতে এবার থেকে ব্যাঙ্কগুলি ঋণ দেবে।” এই ব্লকে ২০১১ সাল থেকে ১২ হাজার চাষিকে কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের আওতায় আনার কাজ শুরু হয়। কিন্তু তাঁদের অর্ধেকের উপর এখনও কার্ড পাননি বলে অভিযোগ।
পানিট্যাঙ্কি নিগম কৃষক সঙ্ঘের চিফ-কো অর্ডিনেটর দীনেশ বর্মন জানান। ফামার্স ক্লাব গড়ে কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের আবেদন করেই ঘুরতে হচ্ছে। জয়েন্ট লায়াবিলিটি গ্রুপ’ তৈরি করেও অনেকেই ঋণ পাননি। ব্যাঙ্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারেরা বারবার বদলি হওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। এবার কাগজপত্র পরীক্ষা করে ঋণের ব্যবস্থার আশ্বাস মিলেছে। অনেকেরই মহাজনের থেকে নিস্তার মিলবে।”
ময়নাগুড়ি ফামার্স ক্লাবের তরফে কৃষ্ণকান্ত বর্মন বলেন, “বোরো ধানের চাষ চলছে। এর পর আমনের মরশুম। মাঝে সব্জি ও আলু চাষ হয়েছে। সেপ্টেম্বর থেকে পুরো মরশুম শুরু হয়ে যাবে। এখন আমাদের টাকা দরকার। কৃষি দফতর এবং ব্যাঙ্কের লোকজনকে সেটাই বলেছি। দ্রুত ঋণ মিলবে বলে আশ্বাস মিলেছে।” চাষিরা জানান, দ্রুত ঋণের ব্যবস্থা ছাড়াও কেসিসি হলে পাম্প সেট, ট্র্যাক্টর, ধান ঝাড়াই মেশিন, এমন নানা কৃষি সরঞ্জামে ভর্তুকিও পাবেন।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, কৃষি ঋণ মেলে ৭ শতাংশ হারে। সময়ের আগে শোধ করে ছাড় ৩ শতাংশ। সেখানে মাসিক ৫-১০ শতাংশ হারে চাষিরা মহাজনদের থেকে টাকা নেন। যদিও কৃষি ঋণের আওতায় থাকা ব্লকের ৮ হাজার চাষির প্রায় ১০-১৫ শতাংশ ঋণ শোধ করেননি বলে অভিযোগ। এক্ষেত্রে ওই চাষিরা কোনও জয়েন্ট লায়াবিলিটি গ্রুপ-এর আওতায় থাকলে, সেই গ্রুপের অন্য চাষিরাও ঋণ পাচ্ছেন না। এ দিন ফার্মাস ক্লাবের মাধ্যমে ওই চাষিরা যাতে ঋণ শোধ করেন, তার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।