উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র তোলা ঘিরে উত্তেজনা। নিজস্ব চিত্র।
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোনয়নপত্র তোলার আগের রাতে হস্টেলে গিয়ে হুমকি দেওয়া ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে। শুক্রবার ছিল উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র তোলার দিন।
বৃহস্পতিবার রাতে টিএমসিপি-র লোকজন বহিরাগতদের নিয়ে হস্টেলে ঢুকে তাঁদের সঙ্গে না থাকলে ‘দেখে নেওয়ার’, ‘রক্তগঙ্গা বইয়ে দেওয়ার’ হুমকি দেন বলে অভিযোগ। তাতে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে বেঁকে বসেন পড়ুয়াদের একাংশ। রাতেই উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হস্টেলে তা নিয়ে তুমুল উত্তেজনা তৈরি হয়। গভীর রাতে প্রায় চারশো ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণ এবং বিদ্যাসাগর হস্টেল ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। টিএমসিপি-র কয়েকজন নেতার সঙ্গে হস্টেলের ছাত্রদের হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। হস্টেলের ভিতরে নির্বাচনের প্রচারে ব্যানার দেওয়া নিয়ে প্রতিবাদ করায় তৃণমূলের এক ছাত্র নেতা হস্টেলের এক পড়ুয়াকে চড় মারে বলেও অভিযোগ। তা নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের তরফে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
এ দিন তার জেরে কিছু ছাত্র জোট বেঁধে কোনও রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে না গিয়ে নিজেরাই মনোনয়ন পত্র তোলেন। যাঁরা সকলেই টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে যাবেন বলেই ছাত্র সংগঠনগুলির একাংশ মনে করছেন। আবার অনেকে ছাত্র পরিষদের সঙ্গে গিয়েছেন। অন্য দিকে সদ্য ছাত্র পরিষদ ছেড়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদে যাওয়া ছাত্র নেতা মুক্তিনাথ শর্মা পুনরায় ছাত্র পরিষদে ফিরে আসায় বেকাদায় পড়েছে টিএমসিপি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন কমিশনের আহ্বায়ক কনককান্তি বাগচি বলেন, “রাতে হস্টেলে গোলমাল হয়েছে বলে পরে শুনেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তা বিভাগের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন।” ওই আধিকারিক অলক মজুমদার জানান, গোলমাল হচ্ছে খবর পেয়ে গভীর রাতে তাঁরা গিয়েছিলেন। পুলিশকে জানানো হয়।
যদিও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকা ছাত্রনেতা পঙ্কজ সিংহ বলেন, “কাউকে চড় মারার বা হুমকি দেওয়ার প্রশ্ন নেই। কোনও গোলমাল হয়েছে বলে জানা নেই।” তাদের দাবি, ছাত্র সংসদের নির্বাচনে তারাই জয়ী হবেন।
বেলা ১২টা থেকে নির্ধারিত ৩ ঘন্টা সময়ে মোট ২৮৬ টি মনোনয়ন পত্র দেওয়া হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচনে ৭৯টি মোট আসন। তার মধ্যে ২৮টি বিজ্ঞান বিভাগে এবং বাকিগুলি কলা এবং বাণিজ্য বিভাগের। যার মধ্যে জলপাইগুড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের ৮ টি আসন রয়েছে। জলপাইগুড়ি ক্যাম্পাস থেকেই এ দিন সেখানে মনোনয়নপত্র বিলি করা হয়েছে। সঠিক ভাবে তা জানা না-থাকায় বিভ্রান্তি ছড়ায়। ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টুডেন্ট কনসোলিডেশনের (আইএসসি) ছাত্র নেতা প্রদীপন গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “নির্বাচন কমিশন সর্বদল বৈঠক ডেকে সমস্ত কিছু না জানানোতেই এই সমস্যা হচ্ছে।” টিএমসিপি, ছাত্র পরিষদ উভয়েই শতাধিক মনোনয়ন পত্র তুলেছে। কোনও ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে না থাকা ছাত্ররা অন্তত ৩৫টি মনোনয়নপত্র তুলেছে। ৩০ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমা করার দিন। ৬/৭ টি করে মনোনয়ন পত্র তুলেছে আইএসসি, এসএফআই।
এ দিন মনোনয়নপত্র তোলাকে ঘিরে সকাল থেকেই উত্তেজনা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। বিশেষ করে কলা বিভাগের সামনে। সেখানে অর্থনীতি বিভাগের ভবন থেকে এ দিন মনোনয়নপত্র দেওয়া হয়। উভয়পক্ষই স্লোগান দিতে থাকে। ২০১১-র পর দুই বছর বাদে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হচ্ছে। আগে ছাত্র পরিষদের নিয়ন্ত্রণে ছাত্র ছাত্র সংসদের খরচ নিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ স্লোগান তোলে। সারদা কাণ্ডে সাধারণ বাসিন্দাদের টাকা মদন মিত্র কী করেছেন সেই প্রশ্ন তুলে ছাত্র পরিষদ পাল্টা স্লোগান তোলে। মনোনয়ন পত্র তুলতে বহিরাগতদের ঢোকা নিয়ে ছাত্র পরিষদ এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদ উভয়েই পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র তথা ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি রোনাল্ড দে মনোনয়নপত্র তোলার জায়গায় গিয়ে স্লোগান দিলে টিএমসিপি-র নেতারা তেড়ে যান। পুলিশকে দেখতে বলেন। তেমনই টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি নির্ণয় রায়কে সেখানে ঘোরাফেরা করতে দেখে প্রশ্ন তোলেন ছাত্র পরিষদের নেতারাও। রোনাল্ড জানান, শিক্ষাক্ষেত্রে হুমকির রাজনীতি করতে চাইছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। বৃহস্পতিবার রাতে ছাত্ররা তা রুখে দিয়েছে। নির্ণয় বলেন, “হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। ছাত্র পরিষদদের নেতা তথা ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক রোনাল্ড এবং তাঁর লোকজন ৩ বছর ধরে ছাত্র সংসদের টাকা নয়ছয় করেছে। তা আড়াল করতেই মিথ্যে অভিযোগ তুলছে। তাতে লোক লাভ নেই। নির্বাচনে আমরাই জিতব।”
এ দিন এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সম্পাদক তথা রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্যের সব কলেজ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করব। নির্বাচনে অংশ নিতে না দিলে আশেপাশে রাস্তায়, রেললাইনে বসে আন্দোলন করব।”