ধর্নামঞ্চে বক্তৃতা করছেন আইনজীবী অরুণ সরকার। —নিজস্ব চিত্র।
বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-সাংসদের দলের উল্টো সুরের মন্তব্যে অস্বস্তিতে পড়ে, নেতা-কর্মীদের ক্ষোভ বিক্ষোভ দলের অন্দরেই প্রকাশ করার নির্দেশ জারি করেছিল তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব। তবু প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরে দেওয়ার প্রবণতা অব্যাহত শিলিগুড়ির তৃণমূলেও।
শুক্রবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের ভূমিকা নিয়ে প্রকাশ্যেই অসন্তোষ প্রকাশ করলেন দলের রাজ্য কমিটির প্রাক্তন সহ সভাপতি তথা আইনজীবী সেলের নেতা অরুণ সরকার। অরুণবাবু রাজ্য বার কাউন্সিলেরও নির্বাহী সদস্য। শিলিগুড়ি আদালতের স্থায়ী ভবন তৈরি এবং ভক্তিনগর থানা এলাকাকে এই আদালতের এলাকায় অর্ন্তভুক্তির দাবিতে গত ২৬ দিন ধরে শিলিগুড়ি আদালতের আইনজীবীরা কর্মবিরতি চালাচ্ছেন। বিষয়টি জেনেও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী কেন একবারও আদালতে এসে আইনজীবীদের সমস্যা শুনলেন না তা নিয়ে অবস্থান মঞ্চ থেকে প্রশ্ন তুলেছেন অরুণবাবু। মন্ত্রীর এই ভূমিকায় একজন তৃণমূল সমর্থক হিসেবে তিনি নিজেকে ‘মর্মাহত’ এবং ‘লজ্জিত’ বলেও বক্তৃতায় উল্লেখ্য করেছেন।
দলের এক সময়ের সক্রিয় জেলা নেতা অরুণবাবু রাজ্য বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যানও ছিলেন। তবে তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা নেতাদের একাংশ জানিয়েছেন, সম্প্রতি অরুণবাবুকে দলের বৈঠক বা অনান্য কর্মসূচিতে নিয়মিত দেখা যায় না। জেলা নেতৃত্বের কাজকর্মে ‘বিরক্ত’ হয়েই অরুণবাবু দূরত্ব তৈরি করেছেন বলে ওই নেতাদের দাবি। তবে অরুণবাবু অবশ্য শুক্রবারের বক্তৃতার আগাগোড়া নিজেকে তৃণমূল সমর্থক বলে পরিচয় দিয়েছেন।
শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের আইনজীবীদের দাবি-দাওয়া শুনতে এ দিন আদালতে এসেছিলেন রাজ্য বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অসিত বরণ বসু। আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনার পরে, আদালত চত্বরে তৈরি অবস্থান মঞ্চে যোগ দেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। আদালতে ঢোকার পর থেকে অরুণবাবুই তাঁর সঙ্গেই ছিলেন। অবস্থান মঞ্চে চেয়ারম্যানকে বসিয়েই বক্তৃতা শুরু করেন অরুণবাবু। আইনজীবীদের দাবি-দাওয়া সম্পর্কে দু’এক লাইন বলেই সরাসরি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তৃণমূলের রাজ্য কমিটির প্রাক্তন সহ সভাপতি।
কেন মন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, তার যুক্তিও দিয়েছেন অরুণবাবু। তাঁর কথায়, “উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতমবাবু শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের একজন সদস্য। আদালত ভবন যে ওয়ার্ডে রয়েছে, সে ওয়ার্ডের কাউন্সিলরও গৌতমবাবু। তিনি আমাদের মন্ত্রীও। গত ২৬ দিন ধরে আইনজীবীরা আন্দোলন করছেন, কিন্তি তিনি (গৌতমবাবু) একদিনও এসে সমস্যার কথা শুনলেন না।”
অরুণবাবু দাবি করেছেন, গৌতমবাবুই একসময়েই শিলিগুড়ির আইনজীবীদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছিলেন। মন্ত্রী হওয়ার পরে আইনজীবীরা মন্ত্রীকে সংবর্ধনাও দিয়েছিল জানিয়ে বার কাউন্সিলের এই সদস্য বলেন, “মন্ত্রী হওয়ার পরে গৌতমবাবু আইনজীবীদের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন যখন সব আইনজীবীরা নিজেদের রুজি বিঘ্ন করে আন্দোলন করছেন তখন মন্ত্রী একবারও এলেন না। একজন তৃণমূল সমর্থক হিসেবে এই ঘটনায় আমি লজ্জিত এবং মর্মাহত।”
এ দিকে, এ দিন তৃণমূলের আইনজীবী সেলের বর্তমান নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়ে সেলের মাধ্যমে প্রস্তাবও পাঠিয়েছেন মন্ত্রী। তবে আন্দোলন শুরু হলেও, তাঁকে না জানানোয়, ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন গৌতমবাবু। তাঁর পাল্টা দাবি, “আন্দোলন শুরুর পরে একবারের জন্য আমাকে জানানো হল না। এই ঘটনার কোনও ব্যাখ্যা আমার নেই। যাই হোক আমি আমার নিজের কাজ করে যেতে চাই। বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় বসব।” অরুণবাবুর অভিযোগ প্রসঙ্গে গৌতমবাবুর বক্তব্য, “ওটা ওঁর ভাবনার প্রতিফলন। আমার কিছু বলার নেই। এতটুকু বলতে পারি, যিনি নিজেকে মর্মাহত বলেছেন, তিনিও আমাকে আন্দোলন নিয়ে কিছুই জানাননি।”
বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান পরিদর্শনের পরেও শিলিগুড়ি আদালতের কর্মবিরতি অবশ্য জারি থাকছে। চেয়ারম্যান অসিতবাবু অবশ্য ভক্তিনগর নিয়ে কোনও আলোচনা করেননি। শিলিগুড়ি আদালতের স্থায়ী ভবন নিয়ে রাজ্য সরকার এবং কলকাতা হাইকোর্টের সঙ্গে তিনি আলোচনা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। অসিতবাবু বলেন, “ভক্তিনগরের বিষয়টি নিয়ে দুই জেলার আইনজীবীদের দাবি-পাল্টা দাবি রয়েছে, এতে কাউন্সিল হস্তক্ষেপ করবে। তবে ২০১২ সালে শিলিগুড়ি আদালতের স্থায়ী ভবন তৈরির শিলান্যাস হলেও, তা এখনও কেন হল না সে বিষয়ে আলোচনা করব। আমরাও চাই দ্রুত কর্মবিরতি প্রত্যাহার হয়ে স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ ফিরুক।”
আইনজীবীদের একাংশ অবশ্য এ দিন দাবি করেন, বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের থেকে নতুন কোনও আশ্বাস শোনা যায়নি। বার অ্যসোসিয়েশনের সম্পাদক চন্দন দে বলেন, “আমাদের কর্মবিরতি জারি থাকছে। কোনও পদক্ষেপ করলে আলোচনা করে এগোব।”