সাড়ে তিন মাসের মধ্যে ছ’টি খুন। তার মধ্যে মাত্র দু’টি অপরাধের কিনারা করেছে পুলিশ। একের পর এক খুনের ঘটনায় আতঙ্কে কাঁটা কেরলের আলাপুঝার বাসিন্দারা। ২০০ দিনের মধ্যে একের পর এক হত্যাকাণ্ড এই জেলাটিকে সংবাদের শিরোনামে এনে দিয়েছে।
শিশু থেকে বৃদ্ধা— কেউই রেহাই পাননি এই নৃশংস খুনগুলি থেকে। সাম্প্রতিকতম ঘটনাটি করুণাগাপ্পল্লির কারুর এলাকার। উদ্ধার হয় বিজয়লক্ষ্মী নামের ৪০ বছর বয়সি এক মহিলার মৃতদেহ। ১৯ নভেম্বর ওই এলাকার মাটি খুঁড়ে দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এই ক’দিনে যে ছয়টি মামলা নজর কেড়েছে, সেগুলির মধ্যে প্রধান মিল হল খুনের পর মৃতদেহ লোপাটের কায়দা। সব ক’টি ক্ষেত্রেই একই কায়দায় মাটির নীচে চাপা দেওয়া হয়েছিল দেহ। মালয়ালি মনোরমার প্রতিবেদন অনুসারে, প্রমাণ লোপাট করার জন্যই মৃতদেহ পুঁতে দেওয়া হয়েছিল।
কেরলের এই জেলাটি অপরাধের জন্য কুখ্যাত। তবে কয়েক দিনের ব্যবধানে পর পর মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ত্রাসের সঞ্চার হয়েছে।
বিজয়লক্ষ্মীর দেহ উদ্ধারের আগে ১০ সেপ্টেম্বর উদ্ধার করা হয় ৭৩ বছর বয়সি সুভদ্রা কালাভুরের দেহ। তাঁর ছেলের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করতে গিয়ে উঠে আসে শর্মিলা ও তার দ্বিতীয় স্বামী ম্যাথিউসের নাম। এর্নাকুলাম দক্ষিণ রেলওয়ে স্টেশনের কাছে করিথালা রোডে ‘শিবকৃপা’র বাসিন্দা সুভদ্রা হঠাৎ করেই নিখোঁজ হন।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, সোনার লোভে শর্মিলা তাঁদের কালাভুরের ভাড়াবাড়িতে সুভদ্রাকে ডেকে নিয়ে যান। সেখানে প্রথমে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ। পরে বাড়ির চৌহদ্দিতে দেহ পুঁতে দেওয়া হয়।
এর পরেও অভিযুক্তেরা তিনটির কম সোনার অলঙ্কার খুঁজে পেয়ে হতাশ হয়েছিল। ফোনের রেকর্ড ঘেঁটে জানা যায় খুন হওয়ার দিন সুভদ্রা কালাভুরেই ছিলেন। সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শর্মিলার বাড়িতে সুভদ্রাকে দেখতে পাওয়া যায়।
এর তিন সপ্তাহের মধ্যেই আরও একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনার হদিস মেলে আলাপুঝায়। ২ সেপ্টেম্বর একটি নবজাতকের মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসে। নবজাতককে খুন করেছিলেন মা ও তাঁর প্রেমিক। দুই সন্তানের মা আশা নামের ওই তরুণী রথীশ নামের এক যুবককে সঙ্গে নিয়ে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটান বলে জানা গিয়েছে।
পাল্লিপুরম অঞ্চলে শ্বাসরোধ করে একরত্তি শিশুকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। আশা ও রথীশের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের ফলে সেই শিশুটির জন্ম হয়েছিল বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। দু’জনকেই গ্রেফতার করে পুলিশ।
এর আগের ঘটনাটি ঘটেছিল এক মাস আগে, অগস্টের ১১ তারিখ। এ ক্ষেত্রেও হত্যা করা হয় এক নবজাতককে। থানাধীর এলাকার একটি ধানখেত থেকে আরও একটি নবজাতকের লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার নেপথ্যে ছিলেন ডোনা নামের এক ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ।
ফরেন্সিক বিজ্ঞানে স্নাতক ডোনা জোজি, তাঁর প্রেমিক থমাস জোসেফ এবং আরও এক সহযোগী অশোককে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রথমে ডোনা নিজের গর্ভাবস্থা গোপন করার চেষ্টা করেন। পরে শিশুটিকে জন্ম দেওয়ার পর জোসেফের হাতে তুলে দেন ডোনা। জোসেফ শিশুটিকে ধানখেতে পুঁতে দিয়েছিলেন।
জুলাই মাসে আরও একটি পুরনো হত্যা মামলার নিষ্পত্তি হয় অন্য একটি মামলার যোগসূত্র ধরে। বিস্ফোরণের মামলায় দুই অভিযুক্তের নামে একটি চিঠি পাঠানো হয় পুলিশের কাছে। ধৃত দু’জনের বিরুদ্ধে আরও তদন্ত করার কথা জানানো হয় চিঠিতে। সেই সূত্র ধরে কালা নামের নিখোঁজ মহিলার হত্যা রহস্যের কিনারা করে আলাপুঝা পুলিশ।
একটি বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে কালার দেহাবশেষ উদ্ধার করে পুলিশ। কালার স্বামীর পরিবারের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁরা পুলিশকে জানান, কালার স্বামী অনিলের পরামর্শে এই খুন।
১৮ এপ্রিল বছরের প্রথম ঘটনাটি যা সকলের নজর কেড়েছিল, তা হল ৬০ বছর বয়সি এক বৃদ্ধার মৃত্যু। রোসাম্মা পুমকাভুতে তার ভাই বেনির হাতে খুন হন। সোনা নিয়ে বিবাদের জেরে বেনি তাঁকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করেন। একই ভাবে তাঁর দেহও বাড়ির পিছনে পুঁতে দেওয়া হয়।