প্রাক্তন বনাম বর্তমান মন্ত্রীমেয়র পদের জন্য এমনই টক্কর হতে চলেছে শিলিগুড়ি পুরসভায়। বামেদের অশোক ভট্টাচার্যের জবাবে তৃণমূলের গৌতম দেব। শুধু উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীই নন, তাঁর স্ত্রী শুক্লা দেবও শিলিগুড়ি পুর-ভোটে প্রার্থী হতে পারেন বলে দলের অন্দরের খবর।
বুধবার এ কথা জানাজানি হতেই শুরু হয়েছে বিরোধীদের টিকা-টিপ্পনী। কারও কটাক্ষ, নানা কারণে মন্ত্রিসভায় পদ হারানোর আশঙ্কায় শাসক দলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি এ বার মেয়র হতে আগ্রহী। আবার কেউ বিঁধেছেন, “মন্ত্রী এবং মেয়র একই লোক মানেডাল থেকেও পাড়ব, মাটিতে ঝরে পড়াটাও ছাড়ব না!” জবাবে মন্ত্রী বলছেন, “দল আমায় যে পদে রাখবে, সে পদেই থাকব। যে পদ ছাড়তে বলবে, ছেড়ে দেব।” পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “এলাকাবাসীর ইচ্ছেই শেষ কথা। তাঁরা যা চাইবেন, তাই হবে।”
গৌতমবাবুকে সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ ধরেই মঙ্গলবার বামেদের তরফে মেয়র পদের জন্য (আনুষ্ঠানিক ভাবে নয়) শোনা গিয়েছিল সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টচার্যের নাম। মন্ত্রী হওয়ার আগে গৌতমবাবু পুর-নির্বাচনে একাধিক বার জিতেছেন ১৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। বিদায়ী বোর্ডেও তিনি তৃণমূলের পরিষদীয় দল নেতা
ছিলেন। ওই ওয়ার্ডের কলেজপাড়ায় তাঁর বাড়ি। এ বার ওয়ার্ডটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। ফলে, গৌতমবাবু পাশের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে লড়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। সেখানে পদযাত্রা করেছেন। গৌতমবাবুকে প্রার্থী করার পক্ষে সিলমোহর দিয়েছে দলও।
তৃণমূলের অন্দরের খবর, কলেজপাড়ায় এ বার মন্ত্রীর স্ত্রী শুক্লাদেবীকে প্রার্থী করার কথা প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে। এলাকার তৃণমূল-কর্মীরা দল বেঁধে বাড়িতে গিয়ে ‘শুক্লা বৌদিকে’ ভোটে দাঁড়াতে অনুরোধও করেছেন। স্বামীর সুরেই শুক্লাদেবীও বলছেন, “এলাকার মানুষজন যখন চাইছেন, তখন তাঁদের আর্জিকে তো মর্যাদা দিতেই হয়।”
কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় একই সঙ্গে দলের বিধায়ক। অতীতে সুব্রত মুখোপাধ্যায় মেয়র এবং বিধায়ক পদ একই সঙ্গে সামলেছেন। দক্ষিণপন্থী রাজনীতিতে দ্বৈত ভূমিকা নতুন কিছু নয় বলে তৃণমূলের একাংশের ব্যাখ্যা। কিন্তু বিরোধীদের বক্তব্য, গৌতমবাবুর ‘ব্যাপারই আলাদা’।
মন্ত্রিত্র এবং দলের জেলা সভাপতির পদ ছাড়া, মন্ত্রী এখন শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি, উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল, জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালের রোগী-কল্যাণ সমিতির সভাপতির মতো নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। উত্তরবঙ্গ থেকে তৃণমূলের ওয়ার্কিং কমিটির একমাত্র মনোনীত সদস্যের নামও গৌতম দেব। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের কটাক্ষে, “উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদটাই বোধ হয় বাকি রয়েছে!”
তৃণমূল সূত্রের দাবি, ঘনিষ্ঠ মহলে মন্ত্রী বলে থাকেন, “দায়িত্ব কমলে আমার তো ভালই হয়।” তবে দলে মন্ত্রীর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা-কর্মীরা বলেন, “ও সব কথার কথা। বলার জন্য বলা।”
এ বার মেয়র পদের জন্যও গৌতমবাবুই লড়বেন জেনে বিজেপি-র জেলা সভাপতি রথীন বসুর প্রতিক্রিয়া, “কিছুই বাদ যাবে না দেখছি।” “এক কাঁধে এতগুলো দায়িত্ব, মানুষটা সুস্থ থাকলে হয়”, বলে বিঁধেছেন কংগ্রেসের জেলা সভাপতি শঙ্কর মালাকার।
এমনিতে গৌতমবাবুকে মেয়র-পদে অশোকবাবুর সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ ধরেই ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছিলেন বামেরা। সিপিএম সূত্রের দাবি, মন্ত্রী ভোটে লড়ছেন বলে নিশ্চিত হওয়ার আগে পর্যন্ত অশোকবাবুর জন্য ১৮, ১৬ বা ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কথা ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু গৌতমবাবুর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জেনে তাঁরা আপাতত ৬ নম্বর ওয়ার্ডটিকেই (ডাঙ্গিপাড়া ও লাগোয়া এলাকা) অশোকবাবুর জন্য বাছতে চান।
গত বিধানসভা ভোটে ওই ওয়ার্ড থেকে প্রায় ১,৫০০ ভোটের ব্যবধানে এগিয়েছিলেন অশোকবাবু। সে কথা মাথায় রেখেই আপাতত পরবর্তী পরিকল্পনা ছকছে তাঁর দল।