চা শ্রমিকদের মজুরি চুক্তি নিয়ে তৃতীয় দফায় ত্রিপাক্ষিক বৈঠকেও কোনও নিষ্পত্তি হল না। বুধবার উত্তরকন্যায় রাজ্য শ্রম কমিশনারের উপস্থিতিতে মালিক এবং শ্রমিক পক্ষকে নিয়ে ওই ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়। মালিকপক্ষের তরফে তিন বছরে ২১ টাকা মজুরি বৃদ্ধির প্রস্তাব রাখা হলেও উপস্থিত ২৫ টি চা শ্রমিক সংগঠনের কেউই মানতে চাননি। এমনকী বৈঠক শেষে বিরোধী শ্রমিক সংগঠনের কিছু লোকজন উত্তরকন্যার প্রধান ফটকে জড়ো হয়ে স্লোগানও দেন। তার উপর এ দিন বৈঠকে শুরু থেকে শাসক দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি’র সভানেত্রী দোলা সেন বৈঠকে অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা কথা বলার সময় বারবার বাধা দেন বলেও অভিযোগ। এই অবস্থায়, আগামী ২০ দিনের মধ্যে পরবর্তী ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিরোধী সংগঠনগুলির অভিযোগ, তাদের তরফে কেউ কিছু বলতে গেলেই দোলাদেবী উত্তেজিত হয়ে, ‘বাম জমানায় ৩৪ বছরের কিছু হয়নি। এখন আপনাদের বলার অধিকার নেই’ বলে চুপ করিয়ে দিতে থাকেন। এমনকী শ্রম কমিশনারকে বারবার তিনি পরিচালনার চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ। তা নিয়েও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলি প্রকাশ্যেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। বৈঠকে কথা বলার গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে বলে দাবি করেন। বৈঠকের শেষের দিকে সিটু নিয়ন্ত্রিত চা বাগান মজদুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল আলমের সঙ্গে দোলা দেবীর বচসাও হয়। আইএনটিইউসি’র চা শ্রমিক সংগঠনের নেতা মনি ডারনাল কিছু বলার সময়ও দোলাদেবী বাধা দেন বলে অভিযোগ।
জিয়াউল আলমের অভিযোগ, “বৈঠকে কেউ কিছু বলতে গেলেই দোলাদেবী বাধা দিচ্ছিলেন। পুরো বৈঠকে তাকে খারাপ ছাড়া ভাল কোনও কথা বললেন না। লেবার কমিশনার যেখানে ২০১১ সালের মহার্ঘভাতা বিষয়টি সামনে রেখে সেই ভিত্তিতে মজুরি ঠিক করার কথা মালিকপক্ষকে বলছেন তখন দোলাদেবী বাধা দিয়ে মহার্ঘ্যভাতার বিষয়টি পরে আলোচনার জন্য চেঁচাতে থাকেন। তাতে মালিকপক্ষও উৎসাহী হন। শ্রমিক স্বার্থ ছেড়ে উনি মালিকের হয়ে কেন কথা বলছেন বুঝছি না।”
দোলাদেবী অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার বিরোধীদের ওই অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন। তা ছাড়া যারা আজ গণতন্ত্রের কথা যাঁরা বলছেন তাঁদের জমানায় বৈঠকে কাউকে ডাকা হতো না। আমরাই সমস্ত শ্রমিক সংগঠনগুলিকে ডেকে বৈঠক করছি। তাই ওদের মুখে গণতন্ত্রের কথা মানায় না। তা ছাড়া বৈঠকের শেষের দিকে জিয়ায়ুল আলম বন্ধ বাগান নিয়ে প্রশ্ন করলে সেটি আজকের আলোচনা সূচিতে রয়েছে কি না শ্রম কমিশনারের কাছে জানতে চাই। তাতেই উত্তেজিত হয়ে ওঠেন জিয়াউল আলম।”
দোলাদেবী অবশ্য জানান, শ্রমিক স্বার্থেই তাঁরা সরকারিভাবে নির্ধারিত ২০৬ টাকা ন্যূনতম মজুরির বিষয়টি তুলে মজুরি ঠিক করার কথা বলেছেন। ২৩ টাকা করে প্রতি বছরে মজুরি বৃদ্ধির কথা তাঁরা জানান। আরএসপি নিয়ন্ত্রিত ডুয়ার্স চা বাগান ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মনোহর তিরকি, এআইসিসিটিইউ নিয়ন্ত্রিত তরাই সংগ্রামী চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি অভিজিৎ মজুমদার, কো অর্ডিনেশন কমিটি অব প্লান্টেশন ওয়ার্কার্সের আহ্বায়ক চিত্ত দেরা দোলাদেবীর ওই ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আইএনটিইউসি’র দার্জিলিং জেলা নেতা দিলীপ দাস বলেন, “আমাদের প্রতিনিধি মণি ডারনাল কথা বলার সময় দোলাদেবী বাধা দেন। এমনকী ব্যক্তিগত আক্রমণের চেষ্টাও করেন। এটা কাম্য নয়।
এ দিনের বৈঠকের আগে ২৫ ফেব্রুয়ারি এবং ২২ মার্চ নতুন মজুরি চুক্তি ঠিক করতে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে। শ্রম কমিশনার জাভেদ আখতার বলেন, “এ দিন বৈঠকে মালিকপক্ষ নতুন মজুরি চুক্তির ব্যাপারে তিন বছরে ২১ টাকা বৃদ্ধির কথা বলেছেন। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলি দৈনিক মজুরি ২৮৫ থেকে ৩৩৮ টাকার মতো নানা প্রস্তাব দেন। পরবর্তী বৈঠকে তা নিয়েই আলোচনা হবে।” এ দিন বৈঠকে যুগ্ম শ্রম কমিশনার মহম্মদ রিজওয়ান জানান, ইতিমধ্যেই চা বাগানের শ্রমিকদের মজুরির বিষয়টি সরকারের ন্যুনতম মজুরি আইনের অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে তা লাগু হওয়ার কথা। সে সময় থেকে আর মজুরি ঠিক করতে চুক্তির প্রয়োজন হবে না।
চা বাগান মালিকদের কনসালটেটিভ কমিটি অব প্লান্টেশন অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল মনোজিৎ দাশগুপ্ত বলেন, “আমরা এ দিন প্রাথমিক ভাবে একটি প্রস্তাব দিয়েছি। আলোচনা চলাকালীন শ্রমিক সংগঠনগুলি বাগান অচল না করে সেই অনুরোধ করা হয়েছে।’’