মেয়েদের নিরাপত্তা কই, প্রশ্ন এসপি-কে

শহরের রাস্তায় মহিলাদের কেন বারবার ছিনতাইয়ের শিকার হতে হচ্ছে? আলোচনা সভায় গিয়ে এমনই প্রশ্নের মুখে পড়লেন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা। মহিলাদের নিরাপত্তা বিষয়ে বুধবার শহরের স্টেশন ফিডার রোডের একটি ভবনে আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল তেরাপন্থ মহিলা মণ্ডল।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৫ ০২:২১
Share:

নারী সুরক্ষা নিয়ে আলোচনা সভা। —নিজস্ব চিত্র।

শহরের রাস্তায় মহিলাদের কেন বারবার ছিনতাইয়ের শিকার হতে হচ্ছে? আলোচনা সভায় গিয়ে এমনই প্রশ্নের মুখে পড়লেন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা। মহিলাদের নিরাপত্তা বিষয়ে বুধবার শহরের স্টেশন ফিডার রোডের একটি ভবনে আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল তেরাপন্থ মহিলা মণ্ডল। সভায় মূল বক্তা ছিলেন পুলিশ কমিশনার। ছিল কমিশনারের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্বও। কেউ পুলিশ কমিশনারকে প্রশ্ন করলেন, ছিনতাই হয়ে যাওয়ার পরে জানিয়ে কী লাভ? কেউ নিজের একটি মামলার প্রসঙ্গ তুলে অভিযোগ করলেন, তদন্ত না করেই পুলিশ গ্রেফতারির হুমকি দিয়েছে। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে সব প্রশ্ন শুনে উত্তরও দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার। শিলিগুড়ির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার ওজি পালও সভায় ছিলেন।

Advertisement

প্রশ্নোত্তর পর্বের শেষে পুলিশ কমিশনার বললেন, ‘‘সবসময়েই পুলিশ সঠিক কাজ করে এমন নয়। ভাল-মন্দ দু’দিকই রয়েছে। তদন্ত বা অপরাধ রুখতে পুলিশের সবসময়েই জনসাধরণের সহযোগিতা প্রয়োজন। আপনাদের পরামর্শ, অভিযোগ শোনার জন্যই আলোচনা সভায় এসেছি। তবে শিলিগুড়ি শহরকে অপরাধ মুক্ত করতে সর্বস্তরের পুলিশকর্মীরা পরিশ্রম করেন।’’

এ দিনের সভার আলোচনার বিষয় ছিল ‘‘মহিলারা বাস্তবে সত্যি কতটা সুরক্ষিত’’। পুলিশ কমিশনার নিজের বক্তব্যে স্বীকার করে নেন দেশের অনেক শহরের মতো শিলিগুড়িতেও রাতের বেলায় একা মহিলা রাস্তায় চলাফেরা করতে পারেন না। বাড়িতে অথবা পরিবারের সদস্যদের কাছে মহিলাদের নানা ভাবে অত্যাচারিতা অথবা অপরাধের শিকার হওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেকসময়ে মহিলারা সে সব চেপে যান বলে দাবি করে সভায় উপস্থিত মহিলাদের কাছে কমিশনার আর্জি জানান, কোথাও কোনও অপরাধ হলে স্থানীয় থানা অথবা ১০০ নম্বরে ফোন করে জানাতে। কমিশনারের কথায়, ‘‘অভিজ্ঞতায় দেখেছি, একমাত্র সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলেই মহিলারা অভিযোগ জানান। এমন করবেন না। আগেই অভিযোগ জানান, তাহলে হয়ত অপরাধ গুরুতর জায়গায় পৌঁছনোর আগেই রুখে দেওয়া সম্ভব হবে।’’

Advertisement

কমিশনারের বক্তব্যের পরে শুরু হয় প্রশ্নোত্তর। বাবুপাড়া এলাকার বাসিন্দা পায়েল লুনাওয়াত প্রথম প্রশ্ন করেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘স্যার আপনি বলছেন ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে জানাতে, কিন্তু যখন বাইকে চেপে এসে কেউ আমাদের গলার হার টেনে নিয়ে চলে যায়। তখন কী ফোন করার মতো পরিস্থিতি থাকে?’’ পায়েল দেবীর অভিযোগ, একাধিকবার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটনায়, সন্ধ্যাবেলাতেও ফাঁকা রাস্তায় চলাফেরা করতে শহরের মহিলারা ভয় পাচ্ছেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘স্যার কেন বারবার মহিলাদের ছিনতাইয়ের শিকার হতে হচ্ছে, কেন আমাদের সন্ধ্যার সময়ে রাস্তায় বের হতে ভয় পেতে হচ্ছে?’’ পুলিশ কমিশনার পায়েল দেবীর প্রশ্নের যৌক্তিকতা মেনে নেন। তাঁর কথায়, ‘‘এটা সত্যি শিলিগুড়িতে এ ধরণের অভিযোগ বেড়ে গিয়েছিল। তবে সাদা পোশাকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কোথায় এ ধরণের ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে, তা চিহ্নিত করে পদক্ষেপ হয়েছে। পুলিশের উপরে ভরসা রাখুন।’’

শহরের অবাধে ড্রাগের কারবার বেড়ে চলেছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকার কাউন্সিলরও। এ দিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর সীমা সাহা। মঞ্চে কমিশনারের পাসে বসেই তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘ড্রাগের অবাধ কারবার চলছে। পানশালাগুলি তো বটেই বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ মদ বিক্রি হচ্ছে। তারফলে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে।’’ পুলিশি হেনস্থা, হুমকির অভিযোগ কমিশনারকে জানিয়েছেন সীমা বৈদ। তিনি জানান, তাঁদের বাড়ির পরিচারিকার মা একটি ভুয়ো অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তার ভিত্তিতে তদন্ত শুরুর আগেই পুলিশ হেনস্থা করতে শুরু করে, থানা থেকে গ্রেফতারির হুমকিও দেওয়া হতে থাকে। কুসুম ডোসি অভিযোগ করে জানান, একবার ১০০ ডায়ালে ফোন করেও পুলিশের সাহায্য পেতে দেরি হয়েছিল। হেনস্থা, হুমকির অভিযোগ নিয়ে কমিশনার বলেন, ‘‘কোনও পুলিশ অফিসার বা থানা হেনস্থা করছে বা হুমকি দিচ্ছে মনে হলে এসিপিকে জানান, সেখানে কাজ না হলে আরও উপরের আধিকারিকদের জানান। এমনকী আমিও যথাযথ কাজ করছি না বলে মনে হলে আমার উপরে অভিযোগ জানান। কিন্তু পুলিশের উপরে ভরসা হারাবেন না।’’

তেরাপান্থ মহিলা মণ্ডলের প্রচার সচিব জুলি বাত্রার কথায়, ‘‘চারদিকে যে ভাবে ছিনতাই, নারী নির্যাতন বেড়ে চলেছে, তার প্রেক্ষিতেই পুলিশ কমিশনারকে আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। উনি সভায় সব প্রশ্ন শুনে উত্তর দিয়েছেন। আমরা আশ্বস্ত্য হয়েছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement