জল ভেঙে নতুন জেলা গঠনের সভায়। বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
মালবাজার থেকে চ্যাংরাবান্ধা ব্রডগেজ তৈরির কাজ শেষ। তৈরি হয়েছে নতুন স্টেশনও। কিন্তু এই লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি। এ সংক্রান্ত পুরো বিষয়টিই জানেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই এই ট্রেন চালু করতে এ বার রাজ্য সরকার উদ্যোগী হবে বলেও জানিয়ে দিলেন তিনি। বুধবার আলিপুরদুয়ারের জেলা ঘোষণার সরকারি মঞ্চ থেকে তিনি বলেন, “মালবাজার, চ্যাংরাবান্ধা রেল লাইনের কাজ রেলমন্ত্রকে থাকার সময় শুরু করিয়েছিলাম। কাজও প্রায় শেষ। তবু সেখানে ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি। আমি রেল কর্তৃপক্ষের কাছে ওই লাইন চালু করার অনুরোধ করব।” মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের কথাতেই ডুয়ার্স জুড়ে এই রেলপথকে ঘিরে ফের আশা তৈরি হয়েছে।
রেল সূত্রের খবর, প্রথম এনডিএ সরকারে রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই মালবাজার চ্যাংরাবান্ধা মিটারগেজ রেলপথ চালু হয়। ২০০১ থেকে ২০০৩ সাল অবধি লাইনে ট্রেন চললেও তৃণমূল নেত্রী রেলমন্ত্রী পদ ছাড়ার পরেই ওই রেলপথও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ইউপিএ জমানাতে ফের এই রেলপথ ব্রডগেজে উন্নীতকরণের প্রস্তাব রেল বাজেটে পাশ করান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০০৯ থেকে কাজ শুরু হয়ে ২০১১ তে অধিকাংশ কাজ শেষও হয়ে যায়। ২০১১ সালের অক্টোবর মাস থেকে রেলপথে পরীক্ষামূলকভাবে ইঞ্জিনও চালানো হয়। সাধারণ বাসিন্দাদের মধ্যে আশার সঞ্চার হলেও আচমকাই ফের তার কাজ বন্ধ হয়। এরপর নানা মহলে দাবি জানিয়েও লাইন চালুর বিষয়ে কোন সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ।
মালবাজারের ব্যবসায়ী সংগঠন মার্চেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন দীর্ঘদিন ধরেই এই রেলপথ চালুর দাবিতে সরব হয়েছে। সীমান্ত শহর চ্যাংরাবান্ধার সঙ্গে রেলযোগাযোগ স্থাপন হলে মালবাজারের ব্যবসার প্রসার ঘটবে বলে সংগঠনের আশা। ব্যবসায়ী সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক মোহিত শিকদার বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যে এই চ্যাংরাবান্ধা মালবাজার লাইনের বিষয়টি জানেন তা আমরা জানতাম। কিন্তু আলিপুরদুয়ারে এসে তিনি তা চালুর বিষয়ে সরব হবেন তা ভাবতে পারিনি। ওঁর বক্তব্য শুনে এই রেলপথ চালুর আন্দোলন আরও জোরালো হবে।” ডুয়ার্স রেল বাঁচাও কমিটির পক্ষ থেকে কেন্দ্রে নতুন সরকার গঠনের পর রেলমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়াকে মালবাজার চ্যাংরাবান্ধা রেলপথ চালুর বিষয়ে দাবিপত্রও পাঠানো হয়। কমিটির অন্যতম আহ্বায়ক শান্তিরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আমাদের সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। রেলের উচিত দ্রুত মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধে সাড়া দিয়ে লাইনটি চালু করার।”
মালবাজার থেকে চ্যাংরাবান্ধা ৬২ কিলোমিটার এই রেলপথ চালু হলে বড়দিঘী, নেওড়া, লাটাগুড়ির মত এলাকাগুলির সঙ্গে রেলপথে যোগাযোগ তৈরি হবে। লাটাগুড়ির পর্যটন ব্যবসাতেও এই রেলপথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে পর্যটন ব্যবসায়ীদের ধারণা। লাটাগুড়ি, মালবাজার, বড়দিঘী সর্বত্র নতুন স্টেশন তৈরির কাজও প্রায় সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে।
রেলের আধিকারিকেরা জানান, প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেলেও সামান্য বরাদ্দের অভাবে পুরো কাজটাই থমকে রয়েছে। আলিপুরদুয়ার রেল ডিভিশনের এডিআরএম বনিশেস লাকড়া বলেন, “চ্যাংরাবান্ধা মালবাজারে ব্রডগেজের কাজ প্রায় শেষ হয়ে গেলেও স্টেশনগুলিতে লুপ লাইন বানানো, সিগন্যালিং ব্যবস্থা তৈরির মতো কিছু কাজ বাকি রয়েছে।”