মালদহ ও দুই দিনাজপুরের বাংলাদেশ সীমান্ত ব্যবহার করেও জঙ্গিরা উত্তরবঙ্গেও জাল বিছোতে চাইছে বলে আশঙ্কা করছে রাজ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। বর্ধমান-কাণ্ডের পরে এনআইএ গোয়েন্দারা তদন্তে নেমে বেশ কিছু তথ্যও পেয়েছেন। সূত্রের খবর, হিলি, কালিয়াচক, রায়গঞ্জের প্রত্যন্ত সীমান্ত এলাকায় জঙ্গিদের নিয়মিত যাতায়াতের স্পষ্ট তথ্য মিলেছে। বর্ধমান-কাণ্ডের পরে ওই তিন জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় নিয়মিত দেখা যেত এমন অন্তত ৩০ জন বেপাত্তা হয়ে গিয়েছে বলেও স্থানীয় সূত্রে গোয়েন্দারা জেনেছেন। ওই তথ্য পৌঁছেছে রাজ্য সরকারের হাতেও। এতদিন ‘রুটিন’ কাজ করলেও অবশেষে আসরে নেমেছে রাজ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও। ওই তিন জেলায় গড়ে ২ জন করে গোয়েন্দা কর্মীকে দিয়ে নজরদারি চালানো হচ্ছিল। এখন মালদহে পুরোদস্তুর আলাদা অফিস খুলছে রাজ্য গোয়েন্দা দফতর।
সম্প্রতি রাজ্য পুলিশের ডিজি জিএমপি রেড্ডি ও স্বরাষ্ট্র সচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় মালদহ সফরে যান। এর পরেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মালদহে নয়া অফিসের নির্দেশ জারি করেছে। একজন ডিএসপি, ২ জন ইন্সপেক্টর, এসআই, এএসআই সহ ৩০ জন কর্মী ওই অফিসে থাকবেন। রাজ্য পুলিশের এক কর্তা জানান, ধীরে ধীরে সীমান্তবর্তী সব কটি এলাকায় আলাদা অফিস খোলার কথা ভাবা হচ্ছে। তাতে নজরদারির সুবিধে হবে।
রাজ্য গোয়েন্দা দফতরের উত্তরবঙ্গের সদর দফতর শিলিগুড়িতে। বাম আমলে আলিপুরদুয়ারে রাজ্য গোয়েন্দা দফতরের একটি শাখা অফিস খোলা হয়। আলিপুরদুয়ারের গা ঘেঁষেই রয়েছে অসম। পাশেই ভুটান। লাগোয়া দুই জেলা কোচবিহার ও জলপাইগুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী। জঙ্গি কার্যকলাপ, অনুপ্রবেশ ও সীমান্তে সন্দেহভাজনদের উপরে নজরদারির ক্ষেত্রে ওই অফিস থাকায় বাড়তি সুবিধা হয় বলে গোয়েন্দা দফতর সূত্রের খবর। কিন্তু, মালদহ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে জেলা পিছু গড়ে ২ জন করে গোয়েন্দা অফিসার-কর্মী নিযুক্ত করা হলেও কোনও অফিস না-থাকায় নানা সমস্যা হচ্ছিল। বিশেষত, ওই অফিসার-কর্মীদের শিলিগুড়ি অফিস থেকেই যাতায়াত করতে হচ্ছিল।
বর্ধমান-কাণ্ডের পরে মালদহের কয়েকটি এলাকায় এনআইএ-এর তরফে তল্লাশি চালানো সেই সময়ে মালদহ ও দুই দিনাজপুরের সীমান্ত এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামে সন্দেহভাজনদের আনাগোনার ব্যাপারে বেশ কিছু তথ্য পান গোয়েন্দারা। সেই তথ্য পৌঁছয় রাজ্য পুলিশের ডিজির কাছেও। বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র দফতরে আলোচনার পরে সিদ্ধান্ত হয়, আলিপুরদুয়ারের মতো মালদহের রাজ্য গোয়েন্দা দফতরের অফিস খোলা হবে। পুলিশ সূত্রের খবর, আপাতত ১২ জন অফিসার-কর্মীকে মালদহ অফিসের জন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব অফিস খুলে সীমান্তবর্তী ওই তিনটি জেলায় নজরদারি আরও বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।