মেডিক্যালের হস্টেলে নেশা রুখতে কড়াকড়ি

হস্টেল চত্বরের সামনে ইতস্তত পড়ে রয়েছে ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ। কোথাও স্তুপাকৃতি রাংতা। হস্টেলের পিছনের দিকে ছড়িয়ে রয়েছে ফাঁকা মদের বোতল, বিয়ারের ক্যান। উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হস্টেল চত্বরের আশপাশে মাঝেমধ্যেই ওই ছবি দেখা যায়। রাত-বিরেতে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় হইহল্লার ঘটনাও ঘটে।

Advertisement

সংগ্রাম সিংহ রায়

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৪ ০৮:৩৭
Share:

হস্টেল চত্বরের সামনে ইতস্তত পড়ে রয়েছে ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ। কোথাও স্তুপাকৃতি রাংতা। হস্টেলের পিছনের দিকে ছড়িয়ে রয়েছে ফাঁকা মদের বোতল, বিয়ারের ক্যান। উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হস্টেল চত্বরের আশপাশে মাঝেমধ্যেই ওই ছবি দেখা যায়। রাত-বিরেতে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় হইহল্লার ঘটনাও ঘটে। সম্প্রতি মেডিকেলের এক ছাত্রী ও দুই ছাত্রকে প্রায় মাঝরাতে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় দেখা গেলে এলাকায় ব্যাপক শোরগোল পড়ে যায়। এতদিন তা নিয়ে কোনও হেলদোল ছিল না। কলকাতায় এসএসকেএম হাসপাতালের হস্টেলে ইন্টার্নের মৃত্যুর পরে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

শুক্রবার শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হস্টেলের নিরাপত্তা নিয়ে বৈঠকে বসেন কর্তৃপক্ষ। বৈঠকে নিরাপত্তা নিয়ে একাধিক নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে হস্টেলের রেজিস্টার চালু করা হবে বলে ঠিক হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অনুপ কুমার রায়, মেডিকেল সুপার অমরনাথ সরকার, সমস্ত বিভাগের অধ্যাপকরা, ডিন ও হস্টেলের মনিটররা। অধ্যক্ষ অনুপবাবু বলেন, “বৈঠকে কয়েকটি বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। নিরাপত্তা জোরদার করতে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তার কাছে একগুচ্ছ প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। এসএসকেএমের মত ঘটনা যাতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে না ঘটে সে জন্য আগাম ব্যবস্থা নিতে চাইছি।”

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট ৬টি হস্টেল রয়েছে। মেয়েদের তিনটি ও ছেলেদের জন্য তিনটি হস্টেল রয়েছে। ছেলে ও মেয়ে মিলিয়ে মোট ৭২০ জন রয়েছেন, যাঁরা হস্টেলের সুবিধা নেন। এর মধ্যে ৫৫০ জন ছাত্রছাত্রী, ১০০ জন ইন্টার্ন এবং ৭০ জন হাউস স্টাফ রয়েছেন। এর বাইরে অবৈধ ভাবে আরও ৪০ জন রয়েছেন যাঁরা পাশ কর গিয়েছেন কিন্তু এখনও হস্টেল ছেড়ে যাননি। এতদিন ছটি হস্টেলের কোনওটিতেই রেজিস্টার ব্যবহার হত না। ফলে কারা আসছে তার কোনও হিসাবই ছিল না কর্তৃপক্ষের কাছে। এতদিন আবাসিকদের রাত ১০টার পরে বাইরে থাকা চলবে না বলে নির্দেশ ছিল। এর আগে কয়েকটি ঘটনা ঘটলেও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের। তবে সাম্প্রতিক ঘটনার পর আর ঝুঁকি নিতে চাইছেন না তাঁরা। এবার থেকে রেজিস্টার চালুর ব্যপারে কড়াকড়ি করা হবে বলে বৈঠকে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়।

Advertisement

ছয় দাওয়াই

• হস্টেলে হাজিরায় নজর রাখতে থাকবে রেজিস্টার।

• ছেলেদের হস্টেলে থাকবেন নিরাপত্তারক্ষী।

• হস্টেল পরিদর্শন করবে ভিজিল্যান্স কমিটি।

• ভিজিল্যান্স কমিটির সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর ভাবনা।

• ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে জোর।

• ভর্তির ফর্মের সঙ্গেই এ বার থাকবে নিরাপত্তা নিয়ে পরামর্শ।

এতদিন ছেলেদের হস্টেলে কোনও নিরাপত্তারক্ষী রাখা হত না। রেজিস্টার ব্যবহারের জন্য নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েনের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। সমস্ত সিদ্ধান্ত দ্রুত কার্যকর করার জন্য স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তার কাছে সুপারিশ পাঠানো হবে বলে অধ্যক্ষ জানিয়েছেন। আপাতত মোট ৮০ জন নিরাপত্তারক্ষী রয়েছেন। আলাদা করে হস্টেলের জন্য কোনও নিরাপত্তারক্ষী না থাকলেও মেয়েদের হস্টেলে তাঁদের মধ্যে থেকেই পালা করে নিরাপত্তা রক্ষা করা হত। কর্মীরা সবাই প্রাক্তন সমরকর্মী।

নিরাপত্তা কঠোর করতে শক্তিশালী করা হচ্ছে ভিজিল্যান্স কমিটিকেও। এতদিন ভিজিল্যান্স কমিটি, কোনও ঘটনা ঘটলে ঘটনার তদন্ত করত ও রিপোর্ট দিত। কিন্তু এবার থেকে নিয়মিত হস্টেল পরিদশর্ন করবে এই কমিটি। এ দিনের বৈঠকেই কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী সোমবার থেকেই হস্টেল পরিদর্শন শুরু করবেন তাঁরা বলে জানিয়েছেন কমিটির প্রধান অধ্যক্ষ অনুপবাবু। আপাতত কমিটিতে ৮ জন সদস্য রয়েছেন। সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর ভাবনা এখনও না থাকলেও তাঁদের কাজের সময় আরও বাড়ানোর ব্যপারে পরামর্শ দেন ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যসোসিয়েশনের সম্পাদক সন্দীপ সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, “আমরা ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর ব্যপারে জোর দিতে বলেছি। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও খেলাধূলার অনুষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ানোর উপরেও জোর দেওয়া হোক, তা আমরা চাইছি।” আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে ভর্তির ফর্মের সঙ্গে কিছু সতর্ক বার্তাও প্রচার করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement