মুখ্যমন্ত্রীর সফর। তাই নির্দেশ এল বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসের অনুষ্ঠান কাটছাঁটের। পুলিশের এই বিতর্কিত নির্দেশের জেরে তাঁরা পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অনেকটাই ছেঁটে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগ জলপাইগুড়ি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের। বাতিল করা হয়েছে প্রতিবন্ধীদের মিছিল। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মকর্তাদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য পুলিশ কর্তারা প্রতিবন্ধীদের নিয়ে মিছিল না করার নির্দেশ দেন। প্রতিবন্ধী দিবসের অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি মঞ্চ খুলে ফেলার কথা বললেও তা মেনে নেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থারা কর্তারা।
তবে জেলা পুলিশ কর্তারা ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন কর্তাদের এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন। তাঁদের দাবি, বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজক সংস্থার সঙ্গে প্রতিবন্ধীদের মিছিল বাতিল করা অথবা মঞ্চ খুলে ফেলা নিয়ে কোনও কথা হয়নি। নিরাপত্তার কথা ভেবে তাঁদের বলা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী চলে যাওয়ার পরে যেন তাঁরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু করেন। কারণ, যে ক্লাব রোড ধরে মুখ্যমন্ত্রী মঙ্গলবার রাতে সেচ দফতরের বাংলোতে পৌঁছবেন এবং বুধবার স্পোর্টস ভিলেজের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাবেন সেই রাস্তার ধারে অনুষ্ঠানের মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। ভিড়ের জন্য নিরাপত্তার সমস্যা হতে পারে। ওই কারণে অনুষ্ঠানের সময় কিছুটা পিছিয়ে দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসের মতো একটি দিনে প্রতিবন্ধীদের কোনও অনুষ্ঠানকে কাটছাঁট করার নির্দেশ কেন দিতে যাব? ওঁদের সঙ্গে মিছিল নিয়ে কোনও কথা হয়নি। এমনকি প্যান্ডেল খুলে ফেলার কথাও ওঠেনি। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমরা অনুষ্ঠানের সময় সামান্য পিছিয়ে নিতে বলেছি।”
তবে জেলা পুলিশের দাবি উড়িয়ে জলপাইগুড়ি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন কর্তাদের সাফ অভিযোগ, পুলিশ কর্তাদের নির্দেশে তাঁরা এবার প্রস্তুতি নেওয়ার পরেও অনুষ্ঠান ছেঁটে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন। রবিবার রাত থেকে পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনার পরে হতাশ সংস্থার কর্তারা সোমবার দুপুরের পরে আলোচনায় বসে মিছিল বাতিলের কথা ঘোষণা করেন। সংস্থার সভাপতি সুখেন সেন বলেন, “রবিবার আচমকা পুলিশ কর্তারা জানান, অনুষ্ঠানের মঞ্চ খুলে ফেলতে হবে। আমরা বলেছি সাধারণ মানুষের চাঁদার টাকায় তৈরি মঞ্চ অনুষ্ঠান না করে খুলতে পারব না। মুখ্যমন্ত্রীর যাতায়াতে কোনও সমস্যা সৃষ্টি হবে না এটা জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। আমরা মিছিল বাতিল করেছি। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সময় পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
গত তিন দশক ধরে বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের উদ্যোগে অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে জলপাইগুড়ি শহরে মিছিল করেন প্রতিবন্ধীরা। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় আড়াই হাজার প্রতিবন্ধী মিছিলে অংশ নিয়ে থাকেন। এবারও তাঁদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কিন্তু অনুষ্ঠানে যোগ দিলেও তাঁদের কেউ এদিন মিছিলে অংশ নিতে পারবেন না। ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের সম্পাদক সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, “রবিবার রাতে পুলিশের বিভিন্ন কর্তার সঙ্গে আলোচনা করেছি। লাভ হয়নি। ভাবতে পারিনি এমন বাধা আসবে।”