ময়নাগুড়ির অসম মোড়ে চলছে অনশন। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।
কামতাপুরি ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে ‘কামতাপুরি ভাষা ও সংস্কৃতি বাঁচাও কমিটি’ গড়ে আন্দোলনে নামলেন আত্মসমর্পণকারী কেএলও জঙ্গিরা। সোমবার থেকে ময়নাগুড়ির অসম মোড়ে মঞ্চ তৈরি করে তিন দিনের রিলে অনশনে বসেছেন তাঁরা। প্রথম দিন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ২৪ জন আত্মসমর্পণকারী কেএলও জঙ্গি ওই রিলে অনশনে যোগ দেন। এর পরেও তাঁদের দাবি বিবেচনা করার আশ্বাস না দেওয়া হলে তাঁরা আমরণ অনশনে বসার হুমকি দিয়েছেন।
কমিটির অভিযোগ, কামতাপুরি ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং সাংস্কৃতিক বিকাশের দাবি দীর্ঘ দিনের হলেও কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাই তাঁরা ওই দাবিতে পৃথক ধারায় আন্দোলন গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। সংগঠনের নেতৃত্বের দাবি, পৃথক ভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হলেও তাঁদের সঙ্গে কামতাপুর পিপলস পার্টির (কেপিপি) বিরোধের কোনও সম্ভাবনা নেই। সংগঠনের সভাপতি মৃণাল রায় ওরফে প্রেম বলেন, “বিভিন্ন দল বিভিন্ন নামে আন্দোলন করছে। কিন্তু লক্ষ্য এক। আমরা রাজনৈতিক দলের বাইরে থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হয়ে উত্তরবঙ্গ জুড়ে প্রচার সংগঠিত করে আন্দোলন গড়ে তুলব।” যদিও কেপিপি নেতৃত্বের বক্তব্য, এ ব্যাপারে তাঁদের সঙ্গে কোনও কথা বলেননি এই কমিটির সদস্যেরা। কেপিপি-র সাধারণ সম্পাদক নিখিল রায় বলেন, “হঠাত্ করে কেন এই আন্দোলন জানি না। ওঁদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়নি।” কেপিপি সূত্রে জানা গিয়েছে, আন্দোলনের কর্মসূচি ঠিক করতে আগামী ১৬ নভেম্বর কোচবিহারে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি আলোচনায় বসবে। সেখানে কামতাপুরি ভাষা ও সংস্কৃতি বাঁচাও কমিটির আন্দোলন নিয়েও কথা হবে।
জলপাইগুড়ি প্রশাসনের কর্তারা অবশ্য কেউ এ বিষয়ে মুখ খোলেননি। মহকুমাশাসক সীমা হালদার বলেন, “ওঁরা মাইক ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে আন্দোলনে বসেছেন। এর বাইরে কিছু বলতে পারব না।”
গত ২২ সেপ্টেম্বর আত্মসমর্পণকারী কেএলও জঙ্গিরা ধূপগুড়িতে মিলিত হয়ে কামতাপুরি ভাষা ও সংস্কৃতি বাঁচাও কমিটি গঠন করেন। এর আগে গত ১১ সেপ্টেম্বর ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি নিয়ে তাঁরা রাজ্য নির্বাচন কো-অর্ডিনেটর পৃথ্বীশ দাশগুপ্তের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। গত ২১ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কো-অর্ডিনেটর শিলিগুড়িতে গেলে সেখানে ২৫ দফা দাবি সংবলিত স্মারকলিপি দেওয়া হয়। কমিটি নেতৃত্বের অভিযোগ, তাঁদের দাবি বিবেচনা করে দেখার মতো কোনও আশ্বাস লিখিতভাবে জানানো হয়নি। এর পরেই তাঁরা আলোচনায় বসে পৃথক সংগঠন গড়ে আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নেন। মৃণালবাবু জানান, ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও সাংস্কৃতিক বিকাশের পাশাপাশি তাঁরা বীর চিলা রায় ও ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার জন্মদিনকে জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা, প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত কামতাপুরি ভাষায় পঠন-পাঠনের জন্য স্কুল স্থাপন, মহকুমা ও ব্লক স্তরে কামতাপুরি ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র চালু করা ইত্যাদি দাবি রেখেছেন। সেই সঙ্গে অনুপ্রবেশ বন্ধের দাবি রাখা হয়েছে। এলাকার অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য জমির সদব্যবহার, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপনের কথাও বলা হয়েছে।