বনধে বিপযর্য় জনজীবনে, ধৃত অশোক

চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিকে সামনে রেখে সাধারণ ধর্মঘট ‘সফল’ করতে উত্তরের ৪ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় একজোটে মিছিল-অবরোধে সামিল হলেন কংগ্রেস এবং বাম নেতারা। চা শ্রমিকদের ২৩টি সংগঠনের যৌথ মঞ্চের ডাকে বুধবার আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও দার্জিলিঙের বিস্তীর্ণ এলাকার জনজীবন বেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সরকারি অফিস খোলা থাকলেও হাজিরার হার ছিল তুলনামূলক ভাবে কম।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেন

শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৫২
Share:

চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিকে সামনে রেখে যৌথ মঞ্চের ডাকা সাধারণ ধর্মঘট ‘সফল’ করতে বুধবার সকালে পথে নামেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য, রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ সমন পাঠক, সিপিএমের জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকারের মতো প্রবীণ বাম নেতারাও। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের সামনে পুলিশ অশোকবাবুদের মিছিল আটকে দিলে রাস্তাতেই বসে পড়েন সবাই। তখন অশোকবাবু সহ ২৭ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিকে সামনে রেখে সাধারণ ধর্মঘট ‘সফল’ করতে উত্তরের ৪ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় একজোটে মিছিল-অবরোধে সামিল হলেন কংগ্রেস এবং বাম নেতারা। চা শ্রমিকদের ২৩টি সংগঠনের যৌথ মঞ্চের ডাকে বুধবার আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও দার্জিলিঙের বিস্তীর্ণ এলাকার জনজীবন বেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সরকারি অফিস খোলা থাকলেও হাজিরার হার ছিল তুলনামূলক ভাবে কম। পর্যটকদের কোথাও বাধা দেওয়া হয়নি। জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ার ৩ জেলা সহ ইসলামপুর এবং মেখলিগঞ্জ মহকুমার সর্বত্রই এ দিন সিংহভাগ স্কুল বন্ধ ছিল। বিভিন্ন জেলা থেকে এ দিন অন্তত দেড়শো’রও বেশি সমর্থককে গ্রেফতার করে পুলিশ।

Advertisement

রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে ডাকা প্রথম বড় মাপের ‘বনধ’-এ জনজীবন অনেকটা স্তব্ধ করে দিতে পেরে উত্তরের চা বলয়ে প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পাওয়ার আশায় বুক বাঁধছেন কংগ্রেস ও বামেদের স্থানীয় নেতারা। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টচার্যের মতো প্রবীণ বাম নেতাদেরও সাতসকালে রাস্তায় বসে পড়তে দেখা গিয়েছে। তাঁদের গ্রেফতার করে পরে অবশ্য ব্যক্তিগত জামিনে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে।

তবে সাধারণ চা শ্রমিকদের মধ্যে বিরোধী সংগঠনের আগের মতো নিয়ন্ত্রণ যে নেই, তা-ও এ দিন সামনে এসেছে। প্রথম থেকেই রেল চলাচলকে বনধের আওতার বাইরে রাখার ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু এ দিন ভোর সাড়ে ৫টা থেকে টানা ৫ ঘণ্টা ট্রেন অবরোধ হয় ডুয়ার্সের গারোপাড়া স্টেশনে। শিলিগুড়ির সঙ্গে ডুয়ার্সের রেল যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। যৌথ মঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক জিয়াউল আলমের অভিযোগ, বন্ধ ভাঙতে পুলিশকে ব্যবহার করায় রাজ্য সরকারের চা শ্রমিক বিরোধী মনোভাবও প্রকাশ্যে চলে এসেছে।

Advertisement

এ দিন বিধানসভাতেও উত্তরবঙ্গে চা শ্রমিকদের ধর্মঘট ভাঙার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে বাম দলগুলি প্রতিবাদ জানায়। সূর্যবাবু চড়া গলায় বলতে থাকেন, উত্তরবঙ্গের ধর্মঘটকারী চা শ্রমিকদের বেদম মারধর করা হচ্ছে। এ নিয়ে তিনি সরকারের বিবৃতি দাবি করেন। কিন্তু স্পিকার বিমান মুখোপাধ্যায় তা মানতে না-চাওয়ায় বাম বিধায়কেরা ওয়েলে নেমে এসে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পরে স্পিকার জানান, সরকারের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার সভায় বিবৃতি দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে তাঁকে। সভার বাইরে শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক জানান, তৃণমূল সরকার আসার পর মোট ২৭ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। এবার তা ৪০ টাকা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

শিলিগুড়িতে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য, রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ সমন পাঠক, দলের ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার, সিপিআই-এর জেলা সম্পাদক উজ্জ্বল চৌধুরীদের হাসমিচকে দাঁড়িয়ে সরকারি বাস সহ গাড়ি থামিয়ে চালকদের বন্ধে সামিল হতে আর্জি জানাতে দেখা যায়। পরে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের সামনে পুলিশ অশোকবাবুদের মিছিল আটকে দিলে রাস্তাতেই বসে পড়েন সকলে। সে সময় প্রাক্তন পুরমন্ত্রী সহ ২৭ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অশোকবাবু বলেন, “এ দিন ধর্মঘট সর্বাত্মক হয়েছে। দুর্ভাগ্য যে তৃণমূল বিরোধিতা করছে।” যৌথ মঞ্চের তরাই কমিটির আহ্বায়ক অভিজিৎ মজুমদারদেরও গ্রেফতার করে পুলিশ। জলপাইগুড়ি শহরেও রাস্তায় নামতে দেখা গিয়েছে সিপিএমের জেলা কমিটির আহ্বায়ক সলিল আচার্য সহ দলের অন্য নেতা কর্মীদের। বনধের বিরোধিতায় এ দিন পাল্টা মিছিল করে তৃণমূলও। শিলিগুড়িতে মিছিলে হেঁটেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। পরে মন্ত্রী বলেন, “বাসিন্দাদের ধন্যবাদ। কারণ, তাঁরা ধর্মঘট সমর্থন করেননি। চা বাগানের শ্রমিকদের সমস্যার কথা বলে বিজেপি, সিপিএম রামধনু জোট করে একের পর এক বন্ধ করছে।” পুরসভার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিয়ে ফেরার সময় শিলিগুড়ি কাছারি রোডে পোস্ট অফিসের সামনে বন্ধ পালনকারীদের মিছিল এবং তৃণমূলের মিছিল মুখোমুখি হয়। তাতে উত্তেজনা তৈরি হয়। অশোকবাবু বলেন, “শান্তিপূর্ণ মিছিল থেকে পুলিশ আমাদের গ্রেফতার করে। অথচ তৃণমূলের মিছিল করলে তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”

এ দিন আলিপুরদুয়ার আদালতে সরকারি আইনজীবী তথা তৃণমূল নেতা জহর মজুমদার ঢুকতে গেলে তার সঙ্গে বনধ সমর্থনকারীদের বচসা হয়। পরে পুলিশ বনধ সমর্থকদের সরিয়ে দিলে বিচারকরা আদালতে ঢোকেন। ডুয়ার্সের ওদলাবাড়ি, ডামডিম, মালবাজা, চালসা, নাগরাকাটা সর্বত্রই দোকানবাজার বন্ধ ছিল। তবে কয়েকটি চা বাগানে তৃণমূল সমর্থিত সংগঠনের সদস্য একাংশ শ্রমিকেরা কাজ করেছেন।

সকাল ১১টা নাগাদ জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া করলাভ্যালি বাগানের শ্রমিকরা অসম মোড়ের কাছে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অবরোধ চলে। কয়েকজন শ্রমিক প্রতীকী প্রতিবাদে রাস্তায় বসে চা ফুল ভাজা দিয়ে ভাতও খেয়েছেন। ধূপগুড়ি বানারহাট রোডে যান চলাচল বিপর্যস্ত হয়। অবরোধ হয় বিন্নাগুড়িতেও। বিপর্যস্ত হয় মেখলিগঞ্জও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement