আর্থিক অনটন চরমে পৌঁছনোয় বকেয়া মাস মাইনের ভগ্নাংশ দিয়ে অফিসার-কর্মীদের ক্ষোভ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (এনবিএসটিসি) কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার সিউড়ির মত কোথাও বকেয়া মাস বেতনের ১০ শতাংশ, মালদহে ২৫ শতাংশ, কোচবিহারে ১৫ শতাংশ, বহরমপুরে ৩০ শতাংশ, আবার শিলিগুড়ি বা রায়গঞ্জের মত কোথাওবা ২৮-২৫ শতাংশ টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এতে কর্মীরা বেতনক্রম অনুসারে নূন্যতম ২ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা পেয়েছেন। তবে জানুয়ারি মাসের বেতন কবে হবে তা নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা কাটেনি। যার নিশ্চয়তা এখনও দিতে পারেননি নিগম কর্তৃপক্ষ। আর এতে ক্রমশই বাড়ছে কর্মীদের ক্ষোভ।
এনবিএসটিসি’র চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, “আমি বিভিন্ন মহলে কথাবার্তা বলছি। একটু দেরি হতে পারে, কিন্তু কর্মীরা প্রাপ্য টাকা পাবেন।”
সংস্থা সূত্রের খবর, চলতি আর্থিক বছরে নিগমের জন্য রাজ্য সরকার প্রায় ১২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। এতে বেতনের জন্য ভর্তুকি ৬৫ কোটি টাকার মত। সংস্থার স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা ২২৯৬ জন। চুক্তির ভিত্তিতে কর্মী রয়েছে ১২০০ জনের মত। চুক্তি ভিত্তিক কর্মীরা অবশ্য প্রতিমাসের ১০ তারিখে বেতন পেয়ে যান। এদের সকলের বেতন ৬ হাজার থেকে থেকে সাড়ে ৮ হাজার টাকার মধ্যে রয়েছে।
পরিবহণ সংস্থার নিজস্ব আয় মাসে ৮ কোটি টাকার মত। বেতন বাবদ মাসে লাগে ৬ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা। অন্যান্য খরচের জন্য মাসে আরও ৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা মত। কিন্তু গত বছর বকেয়া পেনশন, আদালতের মামলা সংক্রান্ত খরচ এবং স্বেচ্ছাবসরের জন্য তালিকাভুক্তদের কিছু মাসের সাধারণ বেতন দিয়ে গিয়ে সংস্থার বরাদ্দ ফুরিয়েছে। ১৯ কোটি টাকা শুধু বকেয়া পেনশন মেটাতেই রাখা হয়। এরপরে নিগমের কর্তারা পরিবহণ দফতরে নতুন করে ৪৭ কোটি টাকা মঞ্জুরের আবেদন করেছেন। তবে বরাদ্দ নিয়ে পরিবহণ বা অর্থ দফতরের কোনও সুবজ সংকেত মেলেনি।
নিগম সূত্রের খবর, বেহাল আর্থিক অবস্থার জেরে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিমাসে কর্মীদের ৭৪-৭৫ শতাংশ বেতন দেওয়া হয়। বাকি ২৫ শতাংশ বেতন বকেয়া থাকে। বর্তমানে কোচবিহার, শিলিগুড়ি, রায়গঞ্জ এবং বহরমপুর ডিভিশন মিলিয়ে এই বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৩২ কোটি টাকা। ডিপো ভিত্তিক টিকিট বিক্রির টাকা থেকে ওই বকেয়ার কিছু টাকা দেওয়া হয়। এদিনও সেই বকেয়ার টাকার ভগ্নাংশ দেওয়া হয়।
নিগমের কয়েকজন অফিসার জানান, এদিন ডিপো ধরে ধরে ১০ থেকে ৩৫ শতাংশ অবধি টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়॥
কর্মীদের সমস্যার কথা মেনে নিলেও বেতন নিয়ে আশাবাদী তৃণমূলের সংস্থার চালক, কর্মীদের সংগঠন। সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি আবদুর রহমান বলেন, “আর্থিক সমস্যা হয়েছে ঠিকই। সরকারিভাবে তা দেখাও হচ্ছে বলে শুনেছি।”