ঘটনাস্থলে পথ অবরোধ বাসিন্দাদের। নিজস্ব চিত্র।
এক বৃদ্ধাকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ ওঠার পরে উত্তেজিত জনতা বুলডোজার নামিয়ে রাস্তার পাশে গজিয়ে ওঠা দু’টি হোটেল ও একটি সেলুন ভেঙে আগুনে পুড়িয়ে দিল। ওই বৃদ্ধার নাতনিরও শ্লীলতাহানি করা হয় বলে অভিযোগ।
রবিবার সকালে জলপাইগুড়ি শহরের স্পোর্টস কমপ্লেক্স লাগোয়া এলাকায় এই ঘটনার পরে বৃদ্ধাকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে পুলিশ এক ট্যাক্সিচালককে গ্রেফতার করেছে। উত্তেজিত জনতা এদিন ভাঙচুর চালানোর পরে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভও দেখায়। জেলার পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ওই এলাকায় বেআইনি ভাবে মদ বিক্রির অভিযোগে আরও কয়েকজনকে খোঁজা হচ্ছে।” পুলিশ জানিয়েছে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৪৭ এবং ৩৫৪ ধারায় ওই ট্যাক্সিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ওই বৃৃদ্ধা ও তাঁর নাতনির ডাক্তারি পরীক্ষাও করানো হয়েছে।
এ দিন উত্তেজিত বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়ান পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা তৃণমূল নেতৃত্ব। জলপাইগুড়ি পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্পোর্টস কমপ্লেক্সের সামনে গড়ে ওঠা বেআইনি ট্যাক্সি স্ট্যান্ড এবং হোটেল সহ অন্য দোকানগুলিতে নিয়মিত মদের আসর বসে। অসামাজিক কাজ চলে। দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যে মহিলারা রাস্তায় চলাফেরা করতে পারেন না। পুলিশকে জানানোর পরেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ১ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলার জয়ন্তী পাল বলেন, “ঝুপড়ি হোটেলগুলি গড়ে ওঠার সময় আপত্তি জানিয়েছি। সেখানে চলা মদের আসরের কথা পুরসভার চেয়ারম্যান ও পুলিশকে বলেছি। কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।” পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে স্পোর্টস কমপ্লেক্সের সামনের এলাকায়। ওই কারণে আমরা পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা সমস্ত দোকান ও ট্যাক্সি স্ট্যান্ড তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ঠিক ছিল কালী পুজো মিটে গেলে অভিযান করা হবে। কিন্তু তার আগেই ঘটনা ঘটে গেল।”
যদিও পুলিশ কর্তারা দাবি করেছেন, এলাকার পরিস্থিতির কথা তাঁদের জানা ছিল না। কোতোয়ালি থানার আইসি আশিস রায় বলেন, রাজবাড়ি পুকুর সংলগ্ন এলাকার পরিস্থিতি নিয়ে অভিযোগ জানার পরে নিয়মিত তল্লাশি চলছে। স্পোর্টস কমপ্লেক্সের আশপাশের এলাকার কথা জানা ছিল না সেখানেও তল্লাশি চলবে। জেলাশাসক পৃথা সরকার বলেন, “যেখানে যেখানে বেআইনি ভাবে মদ বিক্রির অভিযোগ উঠছে, সেখানে কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” আবগারি দফতরের সুপারিন্টেন্ডেন্ট পিনাকী দাস বলেন, “আমরা মাঝে মধ্যেই তল্লাশি করি। স্পোর্টস কমপ্লেক্স এলাকাতেও আমরা তল্লাশি করছি।”
মহিলা তৃণমূলের ১ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি মিলি রায় জানান, শনিবার রাতে স্পোর্টস কমপ্লেক্সের সামনে গজিয়ে ওঠা ট্যাক্সিস্ট্যান্ডের এক চালক ওই বৃদ্ধার ঘরে জোর করে ঢুকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। তাঁর সাত বছরের নাতনিরও শ্লীলতাহানি করে। ওই বৃদ্ধা তাঁর স্বামীর সঙ্গে রাস্তার পাশে নিজেদের দোকানে থাকেন। তাঁর স্বামী বলেন, “স্ত্রীর চিত্কার শুনে পাশের ঘর থেকে বার হয়ে দেখি ওই ট্যাক্সি চালক ধস্তাধস্তি করছে। বাধা দিতে গেলে সে আমাকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। সকালে ঘটনাটি এলাকার লোকজনকে জানাই। ঘটনার কথা জানাজানি হতে এলাকায় উত্তেজনা চরমে ওঠে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযুক্ত শঙ্করকে খুঁজে বার করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। আনা হয় বুলডোজার। স্পোর্টস কমপ্লেক্সের দরজার সামনে দরমার বেড়া দিয়ে তৈরি দু’টি হোটেল একটি সেলুন ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে আগুন দেওয়া হয়। তবে সেই হোটেল ও সেলুনের মালিকরা পলাতক। দোকান ভাঙার পরে উত্তেজিত জনতা ট্যাক্সি স্ট্যান্ড সহ স্পোর্টস কমপ্লেক্স লাগোয়া রাস্তার পাশের সমস্ত দোকান তুলে দেওয়ার দাবিতে সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ জলপাইগুড়ি-পাহাড়পুর মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। বেলা পৌনে ১টা পর্যন্ত অবরোধের জেরে যাত্রীদের নাকাল হতে হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে অবরোধ উঠে যায়।