সিপিআইয়ের সম্মেলনে মঞ্জুকুমার মজুমদার। —নিজস্ব চিত্র।
লোকসভা ভোটের সময় থেকেই দার্জিলিং জেলায় বিজেপির শক্তিবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ বেড়েই চলছে বামেদের মধ্যে। বাম শরিক সিপিআই নেতারাও সেই উদ্বেগের কথা স্বীকার করলেন দলের জেলা সম্মেলনের প্রতিবেদনে। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির মিত্র সম্মিলনী হলঘরে সিপিআই-র দুই দিনের জেলা সম্মেলন শুরু হয়েছে। সেখানে প্রথম দিনেই বিদায়ী জেলা সম্পাদক উজ্জ্বল চৌধুরী’র সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
গত ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে নকশালবাড়িতে সিপিএমের জেলা সম্মেলনে বিজেপি’র ভোট এবং সংগঠন বৃদ্ধি নিয়ে একইভাবে চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন জেলা সিপিএম নেতৃত্বও। এর মোকাবিলায় বামেদের আরও ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলন করা প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে দিলেন সিপিআই নেতারাও। সেখানে শাসক তৃণমূলের পাশাপাশি বিজেপি’কেই অন্যতম শক্তি হিসাবে চিহ্নিতও করা হয়েছে।
সিপিআই-র জেলা সম্মেলনে উদ্বোধন করেছেন দলের রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদার। তিনি বলেন, “রাজ্যে তৃণমূলের অপশাসন তো রয়েছেই। যোগ হয়েছে বিজেপিও। সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি ছাড়াও সরকারিভাবে বেসরকারিকরণের মোড়কে মুড়ে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। এই দুই-এর বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই।” তিনি জানান, ইতিমধ্যে ১৭টি বামপন্থী দলকে নিয়ে নানা বিষয় ভিত্তিক আন্দোলন হচ্ছে। আমরা দলগতভাবে চাইছি, বৃহত্তর বামফ্রন্ট। রাজ্য বামফ্রন্টে তা আলোচনাও চলছে।
গত লোকসভা নির্বাচনে দার্জিলিং আসনের সমতলের শিলিগুড়ি, মাটিগাড়ি-নকশালবাড়ি, ফাঁসিদেওয়া বিধানসভায় বিজেপি উল্লেখযোগ্যভাবে প্রথম স্থান দখল করে। মোর্চার সমর্থন থাকায় পাহাড়ের দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং মহকুমার প্রত্যাশিতভাবে দলের ভাল হয়। আর ভোটের পর দেখা যায়, শিলিগুড়ি পুরসভার ৪৭টি আসনের মধ্যে ২২টি ওয়ার্ডে তাঁরা এক নম্বরে রয়েছে। এর পরে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে দলীয় দফতর খোলা, দলবদল ছাড়াও শহরে আগের তুলনায় বহুগুণে বেড়েছে বিজেপি। ইতিমধ্যে পুর এলাকায় প্রার্থী ঠিক করার কাজেও নেমেছে দল। সিপিআই-এর সম্মেলনের প্রতিবেদনে এই বাস্তব পরিস্থিতির কথা তুলে ধরা হয়েছে।
আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে শিলিগুড়ি পুরসভা এবং মহকুমা পরিষদ নির্বাচন হওয়ার কথা। সেখানে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসকে রুখতে সারদা, এসজেডিএ, পুরসভার কাজকর্মকে সামনে রেখে বামেরা একজোট হয়ে রাস্তায় নামার পরিকল্পনা নিয়েছে। আবার বিজেপিকে রুখতে সম্প্রীতি দিবস, মানবন্ধন, প্রতিবাদ দিবসের প্রস্ততি শুরু হয়েছে। ঘটনাচক্রে এদিনই শিলিগুড়িতে জেলা বামফ্রন্টের সভার পর আগামী দুই মাস ধরে শহর এবং গ্রামে ‘দুই’ শক্তিকে রুখতে নানা কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “তৃণমূলের বিরুদ্ধে আমরা লাগাতার আন্দোলনে নামছি। তবে বিজেপি’র উত্থানও উদ্বেগের। ওঁদের সাম্প্রদায়িক নীতি ছাড়াও জনবিরোধী নীতি বিরুদ্ধেও আন্দোলন হবে।”
বিজেপি’র দার্জিলিঙের মোর্চা সমর্থিত সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া অবশ্য জানান, মানুষ বামেদের ৩৪ বছর দেখেছে। তৃণমূলকেও সাড়ে তিন বছর ধরে দেখছে। সাংসদের অভিযোগ, “দুই দলের চরিত্রগত কোনও পার্থক্য নেই। সন্ত্রাস, অনুন্নয়ন ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে দু-দলের বিরুদ্ধেই। তাই মানুষ ভরসা করছে বিজেপি’কে। পুরসভা, পঞ্চায়েত ভোট কেন আগামী সব ভোটে তা প্রমাণ হয়ে যাবে।”
তবে সবই ভোটের রাজনীতি বলে দাবি করেছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তাঁর কথায়, “আমরা মানুষের পাশে থেকে কাজ করছি। মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন। সেখানে কী কী করছেন তা নিয়ে ভাবছি না। আসলে যা হচ্ছে পুরোটাই ভোটের রাজনীতি।” এদিন ফ্রন্টের জেলা আহ্বায়ক অশোকবাবু জানান, রামঘাটের আন্দোলনকারীদের সংবর্ধনা, বস্তিবাসীদের পুরসভা অভিযান, যুবক এবং মহিলাদের মিছিল, বাঘাযতীন পার্কে অবস্থান বিক্ষোভ হবে। জেলা সিপিএমের সম্পাদক জীবেশ সরকার জানান, ১৪ জানুয়ারি আনন্দ পাঠকের স্মরণসভায় বিমান বসু এবং সূর্যকান্ত মিশ্র উপস্থিত থাকবেন। তবে দীনবন্ধু মঞ্চে সম্প্রতি কোনও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের জন্য দেওয়া হচ্ছে না। আমরা এর বিরোধিতা করছি।
সিপিএমের ২৩ তম জলপাইগুড়ি জেলা সম্মেলন শুরু হচ্ছে আজ, শুক্রবার। জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ হল ঘরে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন দলের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র। সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। আগামী শনিবার ফণীন্দ্রদেব ইন্সটিটিউট ময়দানে প্রকাশ্য সমাবেশের মধ্য দিয়ে সম্মেলন শেষ হবে। জেলা সিপিএম আহ্বায়ক সলিল আচার্য জানান, দু’দিনের সম্মেলনে সাড়ে তিনশো প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন।