এক হাত মাটি খুঁড়লেই বেরিয়ে আসছে হাড়গোড়, মাথার খুলি। কুকুরের দল কখনও মাটি খুঁড়ে মৃতদেহের অংশ মুখে করে এলাকায় ছড়ায়। আর তা ঘিরেই শুরু হয়ে যায় হইচই। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে থাকা বেওয়ারিশ লাশ নির্দিষ্ট সময় পরে পুঁতে ফেলতে পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে সমস্যা দেখা দিচ্ছে বলে অভিযোগ। বুধবার হাসপাতালের ফরেন্সিক বিভাগের প্রধান এবং সেখানকার কর্মীরা ওই অভিযোগ তুলেছেন। কর্তৃপক্ষ জানান, মাসে গড়ে ২৫টি অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির দেহ ময়নাতদন্তের পর মর্গে রাখা থাকে। নিয়মমাফিক তিন দিন পর মৃতের কেউ দেহ না নিলে তা পুঁতে ফেলা হয়। পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে সেই কাজে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
কুকুরে মৃতের দেহাংশ মুখে করে এলাকায় ফেলে বলে বাসিন্দারাও সমস্যা নিয়ে একাধিকবার কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। সমস্যা নিয়ে বৈঠকও হয়েছে। ব্যবস্থা হয়নি। কর্তৃপক্ষ জানান, শিলিগুড়ি পুরসভাকে একবার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বৈদ্যুতিক চুল্লিতে শ্মশানে সেগুলি পোড়ানোর। মেডিক্যাল কলেজ এলাকা পুরসভার বাইরে বলে সেই প্রস্তাব মানায় সমস্যা রয়েছে বলে পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন। পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত অবশ্য দাবি করেন, “এ ব্যাপারে কোনও প্রস্তাব এখনও পাইনি। তবে বিষয়টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরই দেখা উচিত।” মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার অমরেন্দ্র সরকার জানান, পরবর্তী রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে তিনি বিষয়টি তুলবেন। প্রয়োজনে পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে কথা বলবেন।
ফরেন্সিক বিভাগের প্রধান রাজীব প্রসাদ জানান, যে সমস্ত অজ্ঞাত পরিচয় মৃতদেহ মর্গে থাকে তার একাংশ শিলিগুড়ি পুর এলাকা থেকে আনা। তাই পুর কর্তৃপক্ষ ওই কাজে সহযোগিতা করলে ভাল হত।
ফরেন্সিক বিভাগ সূত্রেই জানা গিয়েছে, বর্তমানে মর্গের পিছনে ১৫ কাঠা জমিতে গত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের মৃতদেহ পোঁতা হয়। একটি দেহ পোঁতার পর হাড়-পাঁজরা ছাড়া বাকি অংশ এক দেড় মাসের মধ্যেই মাটিতে মিশে যায়। হাড়-সহ সম্পূর্ণ মাটিতে মিশতে অন্তত বছর সাতেক লাগে। তাই ওই জায়গার মধ্যে সেই কাজ ঠিক মতো হয় না। তা ছাড়া একটি দেহ পোঁতার কাজের জন্য সরকারি ভাবে ৫০ টাকা দেওয়া হয়। তিন দশক আগে থেকে ওই টাকা দেওয়া হচ্ছে। সেটাও বর্তমানে যথেষ্ট নয়। সেই খরচে ৫ ফুট মাটি খোঁড়ার কাজ করতে চান না মাটি কাটার লোকেরা। তাই কর্তৃপক্ষকে পারিশ্রমিক বাড়াতে বলা হয়েছে। তারা বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলে জানিয়েছেন।
বর্তমানে যে জায়গায় দেহ পোঁতা হয় তার পেশে মেডিক্যাল কলেজের এক দেড় বিঘা জমি রয়েছে। সমস্যা মেটাতে তা ঘেরা দিয়ে দেহ পোঁতার ব্যবস্থা করতেও প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে।