সাউথ মালদহ কলেজ পরিচালন কমিটির সভাপতি পদ থেকে ‘অপসারিত’ হলেন কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী। গত বুধবার কলেজের পরিচালন সমিতির ১১ জন সদস্যের মধ্যে ৭ জন সদস্য তলবি সভা করে মেয়াদ শেষের ৭ মাস আগেই সভাপতিকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রসঙ্গত, গত ২১ মে সমিতির ৫ জন সদস্যের সমর্থন নিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ পার্থ চক্রবর্তীকে সরিয়ে কলেজের শিক্ষক প্রতাপচন্দ্র মণ্ডলকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে বাসিয়েছিলেন পরিচালন সমিতির সভাপতি আবু হাসেম। তারই পাল্টা, অন্য সদস্যরা খোদ সভাপতিকে ‘অপসারণে’র সিদ্ধান্ত নিলেন বলে জানা গিয়েছে। আগামী ১৩ জুনের মধ্যে নতুন সভাপতি মনোনীত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও, এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে বির্তক তৈরি হয়েছে। এ ভাবে সমিতির সভাপতিকে সরানো যায় কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষাবিদদের একাংশও।
অপসারণ-পাল্টা অপসারণ নিয়ে সমিতির সভাপতি এবং আগের অধ্যক্ষের মধ্যে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। আবু হাসেম বলেন, “কলেজের অধ্যক্ষ পরিচালন সমিতিকে অন্ধকারে রেখে টেন্ডার ছাড়া, পারচেজ কমিটির অনুমোদন না নিয়ে লক্ষাধিক টাকা খরচ করেছে। খরচের হিসাব দিতে না পারার জন্য আমি পরিচালন কমিটির বৈঠক ডেকে অধ্যক্ষকে বরখাস্ত করেছিলাম।” যদিও, পার্থবাবুর পাল্টা অভিযোগ, “গত ডিসেম্বরে পরিচালন সমিতির শেষ বৈঠক হয়। এরপর সভাপতিকে একাধিকবার বললেও, বৈঠক ডাকেননি। কলেজের উন্নয়ন থমকে গিয়েছে।” তাঁর দাবি, “আমি যে কাজ করিয়েছি তার সবই পরিচালন সমিতির অনুমোদন নিয়ে করেছি।” নির্মাণ কাজ নিয়ে পাল্টা অভিযোগ করেছেন অধ্যক্ষও। সাংসদের ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের দিয়ে কাজ না করানোতেই তাঁকে সরানো হয়েছে বলে অধ্যক্ষের অভিযোগ। গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকেই ফের বহাল করার নির্দেশ দিয়েছেন বলেও অধ্যক্ষ দাবি করেছেন।
অধ্যক্ষকে সাসপেন্ড ও পরিচালন সমিতির সভাপতির অপসারণের বিষয়ে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার শ্যামসুন্দর বৈরাগ্য বলেন, “যে ভাবে কলেজের অধ্যক্ষকে সরানো হয়েছে তা বৈধ নয়। কেননা কাউকে সাসপেন্ড করার আগে তাকে শোকজ করতে হত।” বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ সমূহের পরিদর্শক অপূর্ব চক্রবর্তী বলেন, “পরিচালন সমিতির সিদ্ধান্তের প্রক্রিয়া নিয়ে কেউ অভিযোগ জানালে হস্তক্ষেপ করা হয়। নয়তো সমিতির সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় হস্তক্ষেপ করবে না।”
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালের ৪ ডিসেম্বর সাউথ মালদহ কলেজের পরিচালন সমিতি গঠন হয়েছিল। চার বছরের এই পরিচালন সমিতির মেয়াদ ডিসেম্বরে শেষ হবে। ১২ জনের এই পরিচালন সমিতিতে নির্বাচিত চার জন শিক্ষক প্রতিনিধি ও দু’জন অশিক্ষক কর্মী প্রতিনিধি রয়েছে। এক জন অশিক্ষক প্রতিনিধি চাকরি ছেড়ে চলে যাওয়ায় সমিতির সদস্য কমে হয়েছে ১১। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি খেলালউদ্দিন বলেন, “পরিচালন সমিতির সভাপতি ছ’মাসের বেশি বৈঠক ডাকছেন না। নিজের শক্তি জাহির করতে ইচ্ছে মতো কাজ করছেন। অন্যায় ভাবে অধ্যক্ষকে সাসপেন্ড করেছিলেন। সে কারণেই সভাপতিকে অপসারণ করতে বাধ্য হয়েছি।” যদিও, সমিতির শিক্ষক প্রতিনিধি প্রতাপচন্দ্র মণ্ডল পাল্টা বলেন, “অধ্যক্ষ পরিচালন সমিতির অনুমোদন না নিয়েই নিজের ইচ্ছে মতো নির্মাণ কাজ করেছেন।”