অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা যথাযথ নেই। তাই দমকলের স্থায়ী ছাড়পত্রও নেই। ২০১১ সালের ২৯ ডিসেম্বর আমরি-কাণ্ডের পর রাজ্যের নানা প্রান্তে থাকা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার খামতি মেটাতে উদ্যোগী হয় প্রশাসন। তার পরেও বহু ক্ষেত্রেই যে পরিস্থিতি বদলায়নি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল তার অন্যতম উদাহরণ।
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এই দমকলের অনুমোদন না থাকার ব্যাপারটি অনেকের কাছেই স্পষ্ট নয়। রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “দমকলের ছাড়পত্রের বিষয়টি কী অবস্থায় আছে তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।” স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেছেন, “আমরি কাণ্ডের পর থেকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।” কিন্তু দমকলের অনুমোদনের বিষয়টি ঠিক কী অবস্থায় রয়েছে তা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অনুপ রায় বলেন, “দমকলের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করা হয়েছে। তারা কিছু পরিকাঠামো গড়ার পরামর্শ দিয়েছেন। সে সব কাজ এখনই করার ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। তবে চেষ্টা করা হচ্ছে।” হাসপাতাল সূত্রেই জানা যায়, যথাযথ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার জন্য দমকলের তরফে বলা হয়েছে ভূগর্ভস্থ জলাধার করতে। ১ লক্ষ গ্যালন জল ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন জলাধার করতে বলা হয়েছে। হাসপাতালের ভবন ও পুরো পরিকাঠামোর নকশা দমকলের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে। ৫০ বছরেরও বেশি পুরনো ভবনের নকশা নেই। হাসপাতাল ক্যাম্পাসে থাকা পূর্ত বিভাগের আধিকারিকরা একটি নকশা তৈরি করেছেন। তবে পুরনো ভবনের বৈদ্যুতিক সংযোগে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু তারা বুঝতে পারছেন না।
বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে হাসপাতাল ক্যাম্পাস। অনেক জায়গায় দোতলা ভবন। সম্প্রতি ৩ তলার নির্মাণ কাজও করা হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে মোকাবিলার জন্য তাই পরিকাঠামো গড়া যে দরকার তা জানান দমকল কর্তৃপক্ষ। তা ছাড়া অধিকাংশ ওয়ার্ডের ঢোকার এবং বেরনোর একটি দরজা। অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনা হলে রোগী ও তাদের আত্মীয়, চিকিৎসক, কর্মীদের বেরনোর বিকল্প পথ নেই। সে ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে দমকলের আধিকারিকদের একাংশ মনে করেন। দমকলের উত্তরবঙ্গের ডেপুটি ডিরেক্টর দীপক নন্দী বলেছেন, “পরিকাঠামোর কাজ শেষ হলে যৌথ পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” হাসপাতালের সুপার অমরেন্দ্রনাথ সরকার বলেছেন, “স্টোর ব্যবহারের মতো কিছু কাজ করার ক্ষেত্রে প্রাথমিক ভাবে দমকলের অনুমোদন নেওয়া হয়। পাশাপাশিই, স্থায়ী ছাড়পত্র পেতে চেষ্টা চলছে।”
এই প্রসঙ্গে চিকিৎসকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্থ সার্ভিসেস ডক্টর্সের উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ইউনিটের সম্পাদক পার্থ ঘোষ বলেন, “হাসপাতালে দমকলের কথা মতো পরিকাঠামো গড়ে তোলা এবং তাদের ছাড়পত্র থাকাটা যে জরুরি তা বলাই বাহুল্য। নানা সময় এ বিষয় তুলেছি।” প্রোগ্রেসিভ ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের মেডিক্যাল কলেজ ইউনিটের সম্পাদক মৃদুময় দাস বলেন, “দমকলের স্থায়ী ছাড়পত্র পেতে যাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয় সে জন্য রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে বিষয়টি তুলব।” রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন মেডিক্যাল কলেজ ইউনিটের সম্পাদক প্রশান্ত সরকার জানান, কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই কিছু কাজ করেছে। বাকি কাজও যাতে হয় সে জন্য তাঁরাও বলবেন।