পথে নামে না দোতলা বাস, ক্ষোভ কোচবিহারে

নির্মাতা সংস্থা গুলি আগ্রহ না দেখানোয় শহরের রাস্তায় নতুন করে দোতলা বাস নামানোর পরিকল্পনা ধাক্কা খেল কোচবিহারে। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, সত্তরের দশকে এই শহরে বিভিন্ন রুটে চারটি দোতলা বাস চালান হত। এর মধ্যে দু’টি কয়েক বছর আগে পুরোপুরি অকেজো হয়ে পড়ে। ঐতিহ্য রাখতে বাকি দুটি বাস পালা করে উৎসবের মরসুম ও পর্যটন প্যাকেজে রাস্তায় নামানো হত।

Advertisement

অরিন্দম সাহা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৫৩
Share:

নির্মাতা সংস্থা গুলি আগ্রহ না দেখানোয় শহরের রাস্তায় নতুন করে দোতলা বাস নামানোর পরিকল্পনা ধাক্কা খেল কোচবিহারে।

Advertisement

উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, সত্তরের দশকে এই শহরে বিভিন্ন রুটে চারটি দোতলা বাস চালান হত। এর মধ্যে দু’টি কয়েক বছর আগে পুরোপুরি অকেজো হয়ে পড়ে। ঐতিহ্য রাখতে বাকি দুটি বাস পালা করে উৎসবের মরসুম ও পর্যটন প্যাকেজে রাস্তায় নামানো হত। ওই বাস দুটিরও একটি প্রায় ছয় মাস থেকে খারাপ হয়ে রয়েছে। আর যান্ত্রিক সমস্যার কারণে অন্যটিকেও অন্তত তিন মাস ধরে চালানো হচ্ছেনা বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় কোচবিহারের বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নতুন দোতলা বাস নামানোর ব্যাপারে নিগম কর্তাদের গড়িমসির অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা। তবে নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুবল রায় বলেন, “নতুন দোতলা বাস কেনার ব্যাপারে একাধিক নির্মাতা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। কোন সংস্থার তরফেই ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। তাই এখন পুরোনো বাস মেরামতের চেষ্টা চলছে।”

নিগম সূত্রেই জানা গিয়েছে, রাজাদের আমলের ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে নিগম কর্তারা আগেও পুরানো দোতলা বাস দুটি মেরামত করে নতুন চেহারায় রাস্তায় নামানোর চেষ্টা করেন। কলকাতার একটি সংস্থার বিশেষজ্ঞদের এনে কোচবিহারে ওই বাস দুটি দেখানোও হয়েছিল। কিন্তু প্রায় আড়াই দশকের পুরানো লড়ঝড়ে ওই বাস দুটি মেরামত করার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ মেলেনি। তাছাড়া অন্য বাসের তুলনায় পুরোনো দোতলা বাসে প্রায় দ্বিগুণ তেল খরচের সমস্যাও রয়েছে। এই অসুবিধা গুলি সামনে আসার পরেই ঐতিহ্য রক্ষার তাগিদে নতুন দোতলা বাস কেনার পরিকল্পনা হয়। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর ওই নতুন দোতলা বাস কেনার জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক বরাদ্দ দেওয়ার আশ্বাস দেয়। কিন্তু প্রায় এক বছর কেটে গেলেও নতুন দোতলা বাস অবশ্য কোচবিহারের রাস্তায় নামেনি। এনবিএসটিসির পরিচালন বোর্ডের সদস্য আবদুল জলিল আহমেদ অবশ্য বলেন, “এখন গতির যুগ। দোতলা বাসের তুলনায় সাধারণ বাসে অপেক্ষাকৃত কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যায়। তবু ঐতিহ্য রক্ষার তাগিদে নতুন দোতলা বাস কেনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। খোদ নিগম চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী ওই ব্যাপারে উদ্যোগ নেন। আর্থিক বরাদ্দের আশ্বাসও মেলে। কিন্ত নির্মাতা সংস্থাগুলি চাহিদা মত বাস সরবরাহ করতে পারছে না। পুরোনো দোতলা বাসের যন্ত্রাংশ ঠিকঠাক না মেলাতেও সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু ঐতিহ্য রক্ষার চেষ্টায় খামতি নেই।”

Advertisement

নিগম সূত্রেই জানা গিয়েছে, কোচবিহার থেকে পুন্ডিবাড়ি, সোনাপুর, তুফানগঞ্জ ও বক্সিরহাট রুটে মূলত দোতলা বাস চালান হত। ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে দোতলা বাস চলত। চওড়া ও মোটামুটি সোজা রাস্তায় চলাচলের সুবিধের কথা মাথায় রেখেই ওই রুট ঠিক করা হয়। সাধারণ বাস যেখানে এক লিটার ডিজেলে প্রায় ৪ কিমি দূরত্ব যায়, সেখানে ওই দোতলা বাস যায় বড়জোর ২ কিমি। গত রাসমেলার মরসুমেও ওই একটি বাস চালান হয়েছিল। কোচবিহার হেরিটেজ সোসাইটির সম্পাদক অরূপজ্যোতি মজুমদার বলেন, “কলকাতার সংস্কৃতির সঙ্গে যেমন ট্রাম জড়িয়ে রয়েছে, তেমন কোচবিহারের সঙ্গে নিগমের দোতলা বাসের ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। কোন অবস্থাতেই ওই বাস রাস্তা থেকে পুরোপুরি তুলে দেওয়া কাম্য নয়। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের পরিকল্পনা নিয়ে অন্তত পুরানো দুটি বাসকে নিয়মিত রাস্তায় চালান উচিত।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement