প্রহৃতর বিরুদ্ধে জামিনঅযোগ্য ধারা, মন্ত্রীর বিরুদ্ধে লঘু মামলা

শ্মশানের বৈদ্যুতিক চুল্লির শিলান্যাস অনুষ্ঠানে এক বিক্ষোভকারীকে চড়-লাথি মারার অভিযোগে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। যাঁকে তিনি মেরেছিলেন বলে নালিশ করা হয়েছে, সেই মহানন্দ মণ্ডল সহ তিন জনের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে জামিন অযোগ্য মামলা দায়ের হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৪৬
Share:

গৌতম দেবকে গ্রেফতারের দাবিতে বামেদের বিক্ষোভ। শিলিগুড়ি থানার সামনে। ছবি: রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শ্মশানের বৈদ্যুতিক চুল্লির শিলান্যাস অনুষ্ঠানে এক বিক্ষোভকারীকে চড়-লাথি মারার অভিযোগে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। যাঁকে তিনি মেরেছিলেন বলে নালিশ করা হয়েছে, সেই মহানন্দ মণ্ডল সহ তিন জনের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে জামিন অযোগ্য মামলা দায়ের হয়েছে।

Advertisement

রবিবার শিলিগুড়ির রামঘাট শ্মশানের ওই বৈদ্যুতিক চুল্লির শিলান্যাসের সরকারি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন গৌতমবাবু। তখন স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজন ওই চুল্লি হলে দূষণ ছড়াবে বলে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের তরফে এক ইঞ্জিনিয়ার বাসুদেব মানি পরে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, মহানন্দবাবু সহ বিক্ষোভকারীরা সরকারি কাজে বাধা দিয়েছেন এবং মন্ত্রী ও অফিসারদের হেনস্থা করেছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই মহানন্দবাবু সহ তিন জনের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। তার মধ্যে সরকারি অফিসারদের মারধর করে কাজে বাধা ও অপরাধমূল উদ্দেশ্যে সরকারি অফিসারকে নিগ্রহের ধারা দু’টি জামিন অযোগ্য। সেই রাতেই মহানন্দবাবুও মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তাঁকে চড়, লাথি মারার অভিযোগ করেন। তার ভিত্তিতে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মারধর, জোর করে আটকে রাখা সহ তিনটি জামিনযোগ্য ধারায় অভিযোগ দায়ের হয়।

এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন বলেন, “দু’টি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। যেমন অভিযোগ রয়েছে, সেই অনুযায়ী ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে। প্রয়োজনে মামলায় অভিযুক্তদের সকলকেই গ্রেফতার করা হতে পারে।” তবে সোমবার রাত পর্যন্ত পুলিশের তরফে দু’টি মামলায় সংশ্লিষ্ট কাউকেই জেরা করা হয়নি।

Advertisement

গৌতমবাবু অবশ্য মারধরের অভিযোগ স্বীকার করেননি। তাঁর বক্তব্য, “সরকারি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখানে কী হয়েছে, পুলিশ-প্রশাসনের সকলেই দেখেছেন।” তিনি জানান, সরকারি প্রকল্প নিয়ে আপত্তি থাকতেই পারে, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তিনি বলেন, “কিন্তু অভব্য আচরণ, হুমকি দিয়ে গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করলে তো সরকারি অফিসাররা হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারেন না।” তৃণমূলের নেতাদের একাংশের দাবি, ওই দিন ‘বিক্ষোভের নামে ক্রমাগত অভব্য আচরণ’ করায় মন্ত্রী মুহূর্তের জন্য মেজাজ হারিয়ে ফেললেও তা সামলে নিয়েছেন। দলীয় মহলে একান্ত আলোচনাতেও মন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘বিরোধী দলগুলির নানা প্ররোচনা’ সত্ত্বেও দলের কেউ কোনও অবস্থায় যাতে মেজাজ না হারায়, সে ব্যাপারে সকলকেই সতর্ক থাকতে হবে।

ঘটনাচক্রে, তৃণমূল বিরোধী সব ক’টি দলই এদিন মহানন্দবাবু ও তাঁর বাড়ির লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে নেমে পড়েছেন। মহানন্দবাবু নিজে ছিলেন কংগ্রেসের আন্দোলনে। তাঁর স্ত্রী ছিলেন বামেদের আন্দোলনে। দু’পক্ষই এ দিন আলাদা ভাবে শিলিগুড়ি থানার সামনে মন্ত্রীকে গ্রেফতারের দাবিতে অবস্থান বিক্ষোভ করে। মহানন্দবাবুর বক্তব্য, “আমরা রাজনীতি করি না। তবে মন্ত্রীর আচরণে ক্ষুব্ধ।” তাঁর বক্তব্য, তাঁকে কংগ্রেস ডেকেছিল, তাই তিনি তাঁদের সঙ্গে যান। তাঁর স্ত্রীকে বামেরা ডেকেছিল, তাই তিনি তাঁদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেন। সেই সঙ্গেই মহানন্দবাবুর দাবি, “পুলিশ নিরপেক্ষ নয়। আমি মার খেলাম অথচ আমার বিরুদ্ধেই জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করা হয়েছে।”

জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকারের হুঁশিয়ারি, মন্ত্রীর গ্রেফতারের দাবিতে কংগ্রেস টানা আন্দোলন করবে। বিধি ভেঙে কংগ্রেসের মিছিল উড়ালপুল দিয়ে যাওয়ায় এ দিন তীব্র যানজট হয় শহরে। বামেদের তরফে শিলিগুড়ি থানায় বিক্ষোভ দেখানো হয়। বিজেপি-র জেলা সভাপতি রথীন বসু এদিন মহানন্দবাবুর কয়েকজন আত্মীয়র সঙ্গে কথা বলে জানান, তাঁদের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে, তা প্রত্যাহার করলেই ভাল। তিনি বলেন, “প্রয়োজনে মন্ত্রী এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা বসুন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement