শিলিগুড়ি পুরসভার ভবনের বাইরে অবস্থানে বামেরা। ছবি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।
পরিষেবা পুরোপুরি বেহাল হয়ে পড়ার অভিযোগ তুলে সোমবার দুপুর থেকে শিলিগুড়ি পুরসভায় অবস্থানে বসেছেন বাম কাউন্সিলররা। তাঁদের দাবি, রাতভর অবস্থান করা হবে। পুরভবন চত্বরে মঞ্চ গড়ে পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের মুন্সি নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে অবস্থান চলছে। বামেদের অভিযোগ, প্রায় সাড়ে ৪ বছর ধরে নাগরিকেরা সুষ্ঠু পরিষেবা পাচ্ছেন না। সেই সঙ্গে নানা ক্ষেত্রে স্বজনপোষণ, দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কোনও ক্ষেত্রেই কাজের কাজ হচ্ছে না।
বিরোধী দলনেতার অভিযোগ, “পরিষেবা মুখ থুবড়ে পড়ার দায় কংগ্রেস-তৃণমূল উভয় পক্ষকেই নিতে হবে। কারণ, দু-দলের ক্ষমতার লড়াইয়ের জেরে পুরসভার কর্মসংস্কৃতি তলানিতে পৌঁচেছে। রাস্তাঘাট, পানীয় জল, পথবাতি, ট্রেড লাইসেন্স, পার্কিং, বিল্ডিং, জঞ্জাল সাফাই সহ সব ক্ষেত্রেই অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সে জন্য আমরা ১৩ দফা দাবিতে ২৪ ঘন্টা অবস্থানে বসতে বাধ্য হয়েছি।”
শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র কংগ্রেসের গঙ্গোত্রী দত্ত অবশ্য বামেদের আন্দোলনকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁর বক্তব্য, “বিরোধীরা আন্দোলন করতেই পারেন। তবে সীমিত ক্ষমতার মধ্যে পুর এলাকায় যথেষ্ট কাজ হয়েছে ও হচ্ছে। শহরবাসীরা সে জন্য সন্তুষ্ট। আমরা কী কাজ করেছি ও করছি তা তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি। আগামী দিনেও দেব।” সেই সঙ্গে আজ, মঙ্গলবার শিলিগুড়ির বাঘা যতীন পার্ক থেকে শহরের নানা এলাকায় ১০১টি প্রকল্পের কাজের সূচনা করা হবে বলে পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে।
তৃণমূলের পক্ষ থেকে অবশ্য বামেদের অবস্থানের উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তৃণমূল কাউন্সিলর কৃষ্ণ পাল বলেন, “সংখ্যালঘু কংগ্রেস বোর্ড যাতে ক্ষমতাচ্যুত না হয়, সে জন্য বামেরাই তো বরাবর তৎপর। শহরবাসীরা জানেন, আমরা অনাস্থা জ্ঞাপনের পরেও বামেদের সমর্থনেই কংগ্রেস পুরবোর্ডে ক্ষমতায় রয়েছে। বামেরা যদি মনে করেন কংগ্রেস বোর্ড কাজ করতে ব্যর্থ, তা হলে তাঁরা কেন কংগ্রেসকে ক্ষমতায় রাখতে তৎপর? কেন তাঁরা পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থায় সায় দেননি?” কৃষ্ণবাবু জানান, সামনেই লোকসভা ভোট ও তার পরে পুরভোট হওয়ার কথা। তাঁর দাবি, ভোটের সময়ে কংগ্রেসের সঙ্গে আঁতাতের প্রশ্নে অস্বস্তিতে পড়তে হবে আঁচ করেই অবস্থানের নামে নাটক করছেন বামেরা।
যদিও প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য তৃণমূলের অভিযোগের সারবত্তা নেই বলে দাবি করেছেন। তাঁর যুক্তি, “শহরবাসী আমাদের বিরোধী আসনে বসার রায় দিয়েছেন। তা আমরা মাথা পেতে নিয়েছি। কংগ্রেস-তৃণমূলের বোর্ড চালানোর কথা। ওই দু-দলের ক্ষমতার লড়াই শহরবাসী দেখছেন। তাতে শহরের উন্নয়ন কী ভাবে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে, সেটাও বুঝতে পারছেন তাঁরা। আমাদের অনাস্থা আনার প্রয়োজন নেই। শহরবাসীই ওই বোর্ডের উপরে তিতিবিরক্ত। আগামী দিনেই তাঁরা সমুচিত জবাব দেবেন।”
এ দিন দুপুর ২টো থেকে অবস্থান শুরু হয়। চলবে মঙ্গলবার দুপুর ২টো পর্যন্ত। তবে পুরসভা চত্বরেই এ দিন পরীক্ষা চলাকালীন ‘সাউন্ড বক্স’ বাজিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করতে থাকেন বাম নেতারা। এলাকাবাসীদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ এসে সাউন্ড বক্স বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগ মোহন বলেন, “বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে সভা করার অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। বক্স বাজানোর অনুমতি নেওয়া হয়নি। মাধ্যমিক চলাকালীন সাউন্ড বক্স বাজানো যাবে না। আমরা অভিযোগ পেয়েই তা বন্ধ করিয়ে দিয়েছি।” যদিও বিরোধী দলনেতা বলেন, “আমরা মৃদু আওয়াজে বক্স বাজাচ্ছিলাম।” তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, “তৃণমূলও তো মাইক বাজিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের শিলান্যাস করছে। তাদের কেন পুলিশ আটকাচ্ছে না?”