পুরসভা নিয়ে বৈঠকে গৌতম, হস্তক্ষেপের নালিশ বামেদের

কংগ্রেস পুরসভায় ক্ষমতায় থাকার সময় রাজ্য সরকার তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে নানা অসহযোগিতার অভিযোগ উঠেছিল। মেয়র এবং তাঁর পারিষদরা ইস্তফা দেওয়ার পর এখন অবশ্য পুরসভার হাল ধরতে উদ্যোগী হয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব-ই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৪ ০১:৫৮
Share:

কংগ্রেস পুরসভায় ক্ষমতায় থাকার সময় রাজ্য সরকার তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে নানা অসহযোগিতার অভিযোগ উঠেছিল। মেয়র এবং তাঁর পারিষদরা ইস্তফা দেওয়ার পর এখন অবশ্য পুরসভার হাল ধরতে উদ্যোগী হয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব-ই। সোমবার পুর কর্তৃপক্ষকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর শাখা সচিবালয় উত্তরকন্যায় ৩ ঘণ্টা বৈঠক করেন তিনি। বিভিন্ন কাজের পরিকল্পনা নেন। আগেও ৩ দফায় বৈঠক করেছেন। তাতে পরিষেবা নিয়ে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছেন কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা। প্রাক্তন মেয়রের অভিযোগ, রাজ্য সরকারের কাছে তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা চেয়েও পাননি। অথচ এখন মন্ত্রী রাজনৈতিক উদ্দশ্যে পুরসভার আর্থিক সংস্থান থেকে সমস্ত কিছু করতে তত্‌পর হয়েছেন। বামেরা অবশ্য পুরসভার কাজকর্মে মন্ত্রীর হস্তক্ষেপকে অনৈতিক বলে মনে করছেন।

Advertisement

মন্ত্রী হলেও গৌতমবাবু এখনও শিলিগুড়ি পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিল এবং পুরসভার তৃণমূলের পরিষদীয় দলনেতা। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘‘যদিও আমি এখনও পুরসভার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছি। তবু মন্ত্রী হিসাবে পুরসভায় এই পরিস্থিতিতে নাগরিক পরিষেবার যাতে সমস্যা না হয় তা দেখা কর্তব্য। মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে যে নজর দিয়েছেন তাতে শিলিগুড়ির উন্নয়ন একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তা কখনও অবহেলিত থাকতে পারে না। বিরোধীরা নানা কথা বলছেন। তবে আমরা বাসিন্দাদের পাশে থেকে সব সময় কাজ করতে চাই।” কংগ্রেসের অভিযোগ নিয়ে মন্ত্রীর পাল্টা অভিযোগ, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের ব্যাপার নেই। কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকার সময় কোনও পরিকল্পনা পাঠাতে পারেনি। আমরা জোটের বোর্ডে থাকার সময় কিছু কাজ করেছি। তবে রাজ্যের তরফে পুরসভাকে সবচেয়ে বেশি এই সরকারই দিয়েছে।”

মন্ত্রীর হিসেব দেন, বাম জমানায় ২০০৯ থেকে ২০১০ সালের জুন পর্যন্ত এই পুরসভাকে কেন্দ্র দিয়েছে ৪৪ কোটি, রাজ্য ৩০ কোটি। ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৩ সালের মার্চ পর্যন্ত কেন্দ্রের তরফে ৬৩ কোটি এবং রাজ্যের তরফে রেকর্ড অর্থ প্রায় ৭৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। এই সময় জোটের পুরবোর্ড ছিল। এর পর কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকার সময় ১৪ মাসে কেন্দ্র থেকে ১৮ কোটি এবং রাজ্য থেকে ৩১ কোটি পেয়েছে পুরসভা। ‘বেসিক মিনিমাম সার্ভিস’ খাতে বছরে ২ কোটি টাকার বেশি আর্থিক বরাদ্দ মেলে। অথচ দুই বছর তারা পরিকল্পনাই পাঠায়নি বলে অভিযোগ। তা না হলে এই খাতে সাড়ে ৪ কোটি টাকা পেত পুরসভা। গৌতমবাবুর দাবি, তাঁর তত্‌পরতায় রাজীবআবাস যোজনা প্রকল্পে পাইলট প্রজেক্ট করার সিদ্ধান্ত হয়। অথচ পুরসভার উদাসীনতায় সেই কাজও হয়নি। ডাম্পিং গ্রাউন্ডের জন্য গৌতমবাবুর দফতর থেকে ১ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। অথচ একাংশ কাজের পর পুর কর্তৃপক্ষ ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট দিতে না পারার বাকি কাজ আটকে রয়েছে। পুরসভার নতুন ভবনের জন্য ২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে পুর কর্তৃপক্ষ উদাসীন থাকায় কাজ এগোয়নি। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রকল্পের খরচও বেড়ে গিয়েছে।

Advertisement

মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত অবশ্য জানান, পুরসভা থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনা রাজ্যে পাঠানো হয়েছিল। তার মধ্যে পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থায় ফুলবাড়িতে দিঘি খোঁড়া, দুর্গাপুরের একটি নাম করা বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে হাসপাতাল তৈরি, বর্জ্য থেকে বিদ্যুত্‌ তৈরির মতো বিষয়গুলি রয়েছে। অথচ কোনও ক্ষেত্রেই সহযোগিতা মেলেনি। এমনকী স্টেট ফিনান্স কমিশনের প্রায় ৩ কোটি টাকা মেলেনি। গঙ্গোত্রী দেবী বলেন, “শিলিগুড়ি বলে নয় জলপাইগুড়ি পুরসভাও যতদিন কংগ্রেসের ক্ষমতায় ছিল ততদিন আর্থিক সহায়তা করা হচ্ছিল না।”

বিরোধী বামেদের অভিযোগ, সম্প্রতি পুর কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে তারা জানতে পেরেছেন ত্রয়োদশ অর্থযোজনার টাকা এবং স্টেট ফিনান্স কমিশন অর্থ মিলিয়ে প্রায় ৮ কোটি টাকা মেলেনি। বিভিন্ন নাগরিক পরিষেবা বন্ধ হয়ে পড়ছে। বিধবা ভাতা, বার্ধক্যভাতার মতো সুবিধা বাসিন্দারা গত নভেম্বর মাস থেকে পাচ্ছেন না। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “পুরসভা স্বশাসিত। সে ক্ষেত্রে মন্ত্রী হিসাবে তিনি পুরসভার কাজকর্মে হস্তক্ষেপ করে অনৈতিক কাজ করছেন।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী জানান, মার্চে স্টেট ফিনান্স কমিশনের টাকা আসার কথা। নির্বাচনী বিধি নিষেধের জেরেই তা সময়ে আসেনি। তিনি তা খোঁজ নেবেন। যোজনা কমিশনের টাকা পাঠানোর বিষয়টি কেন্দ্রের। নির্বাচনী বিধি নিষেধের জন্য এ ক্ষেত্রেও ওই টাকা সঠিক সময়ে রাজ্যের হাতে আসেনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement