সহিদুল আলম প্রধান।
চাকরির টোপ দিয়ে এক কলেজ ছাত্রীকে দিনের পর দিন সহবাসে বাধ্য করার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের হলদিবাড়ি ব্লকের প্রাক্তন সম্পাদক সহিদুল আলম প্রধান ওরফে কমলের বিরুদ্ধে। ছাত্রীটির দাবি, পুলিশে অভিযোগ জানানোর কথা বলায় রীতিমতো হুমকি দিয়ে তাঁর মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করেন সহিদুল। ওই ছাত্রী তখন মরিয়া হয়ে লোকলজ্জা উপেক্ষা করে ওই নেতার সঙ্গে তাঁর সহবাসের ছবি ও কথোপকথন মোবাইল ফোনে ‘ভিডিও রেকর্ড’ করেন। যা দেখেই পুলিশ শেষ পর্যন্ত সহিদুলকে গ্রেফতার করেছে।
বিএ দ্বিতীয় বর্ষের এই ছাত্রীটির সাহসিকতাকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন এলাকাবাসী ও পুলিশ-প্রশাসনের একটি বড় অংশ। তবে তার পর সহিদুলের উপর থেকে অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রী। তাই ‘সাহসী’ মেয়ের চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে গোটা পরিবার।
শুক্রবার ওই ছাত্রী বলেন, “আমাকে হুমকি আগেও অনেকবার দেওয়া হয়েছে। তাতে যদি ভয় পেতাম, তা হলে ঝুঁকি নিয়ে ভিডিও তুলতে পারতাম না।” ওই ছাত্রীর শুভার্থীদের দাবি, সহিদুলকে বাঁচাতে তৃণমূলের কিছু নেতা সক্রিয়। তিনি বলেন, “তাই বাড়ির সকলের ভয়ের কথা পুলিশকে জানিয়েছি।” কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব জানান, অভিযুক্ত এখনও জেলে রয়েছেন। তিনি বলেন, “ছাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সব রকম পদক্ষেপ করছে।”
তৃণমূলের হলদিবাড়ির ব্লক সভাপতি গোপাল রায়ের দাবি, “সহিদুলকে ২০১১ সালেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু সহিদুল তুফানগঞ্জের বিধায়ক অর্ঘ্য রায়প্রধানের ছায়াসঙ্গী হয়ে দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে ভিড়ত।” এলাকার দলের অন্য নেতারাও জানিয়েছেন, সহিদুল এলাকায় দাপটের সঙ্গেই তৃণমূল করতেন। ছাত্রীটি যে কলেজে পড়তেন, তার পরিচালন সমিতির সদস্যও ছিলেন সহিদুল। গোপালবাবু জানান, “অর্ঘ্যবাবুর সঙ্গী হওয়াতেই সহিদুল কলেজের কমিটিতেও ঢোকে।” সহিদুলের সঙ্গে সখ্য অস্বীকার করেননি অর্ঘ্যবাবুও। তিনি অবশ্য দাবি করেন, “সহিদুল গ্রেফতারের দু’দিন আগে সমিতি থেকে ইস্তফা দিয়েছে। এখন আইন আইনের পথে চলবে।” তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ জানান, ওই ছাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশকে বলা হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত বছরখানেক আগে। ছাত্রীটি তখন এলাকার ওই কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া। তিনি জানান, সে সময় কলেজে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি হলে তাঁকে আবেদন করার পরামর্শ দেন পূর্বপরিচিত সহিদুলই। ছাত্রীটির অভিযোগ, এর পর থেকেই চাকরির টোপ দিয়ে বারবার মদ খাইয়ে তাঁর সঙ্গে সহবাস করেন সহিদুল। কিন্তু কলেজে ওই পদে অন্য একজনকে নিযুক্ত করা হবে জানতে পেরে ছাত্রীটি থানায় অভিযোগ জানাবেন বলে ঠিক করেন। কিন্তু প্রমাণ ছাড়া মামলা করার সাহস পুলিশের নেই বলে হুমকি দেন সহিদুল। তার পরেই জমানো টাকা দিয়ে একটি থ্রি জি মোবাইল কেনেন ওই ছাত্রী। গত ২৪ সেপ্টেম্বর সহিদুল তাঁকে ফের ডেকে পাঠালে তিনি মোবাইল ক্যামেরায় ঘটনা রেকর্ড করে নেন। ওই ছাত্রীর দাবি, ১৭ অক্টোবর থানায় গিয়ে অভিযোগ করতে গেলে পুলিশ তা নিতে ইতস্তত করে। তিনি বলেন, “তখন আমি আইসি-র ঘরে ঢুকে মোবাইলের ভিডিও চালিয়ে দেখালে তিনি স্তম্ভিত হয়ে যান।” সহিদুলকে গ্রেফতার করা হয়।
ছাত্রীর বাবা-মা দুজনেই বৃদ্ধ। সামান্য চাষের জমির উপরে ৫ ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার। ছাত্রীটিই বড়। তিনি একটা চাকরি পেলে সংসারে দু’বেলার খাবার নিশ্চিত হতে পারে। সেই তাগিদেই এত দূর আসতে হয়েছে। এখন তাই শেষ দেখতে চান।
(সহ প্রতিবেদন: রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়)