মালদহে সালিশি সভা নিয়ে তোপের মুখে পড়েছেন শাসক দল তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের অনেকেই। এ বার সিপিএমের কাউন্সিলরের বিরুদ্ধেও সালিশির মাধ্যমে ধর্ষণের চেষ্টার মামলা ‘রফা’র পরামর্শ দেওয়ার অভিযোগ উঠল। ইংরেজবাজার পুরসভার ২৩ নম্বর ওর্য়াডের তেলিপুকুর এলাকার এই ঘটনায় সরব হয়েছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সরব নির্যাতিতা ছাত্রীর পরিবার।
ইংরেজবাজারের একটি এলাকার সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ২২ ফেব্রুয়ারি এলকারই দুই যুবক জোর করে পাশের একটি মাঠে নিয়ে গিয়ে তাকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। সেই সময় ছাত্রীটি অভিযুক্তদের হাতে কামড় বসিয়ে কোনও রকমে পালিয়ে যায়। বাড়িতে গিয়ে পরিবারের লোকেদের ঘটনাটি জানালে পরের দিন তাঁরা থানায় গিয়ে দুই যুবকের নামে লিখিত অভিযোগ করেন। ওই নির্যাতিতা ও তার পরিবার থানায় গিয়ে অভিযোগ করায় অভিযুক্তরা হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ। তাদের হুমকির ভয়ে গৃহবন্দি হয়ে রয়েছে ওই ছাত্রী। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজ চালানো হচ্ছে।”
পুলিশ সূত্রের খবর, অভিযুক্ত দুই যুবকের নাম সুজিত সাহানি ও মনোতোষ দাস। ওই এলাকাতেই তাদের বাড়ি। ওই ছাত্রীর বাবার অভিযোগ, “অভিযুক্তরা ওর্য়াডের কাউন্সিলার শুভদীপ স্যানালের ঘনিষ্ঠ। তাই পুলিশ দোষীদের গ্রেফতার করছে না। উল্টে কাউন্সিলর বিষয়টি এলাকাতে সালিশি করে মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। অভিযুক্তেরা আমাদের ক্রমাগত দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলেছে।”
কিছু দিন আগে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে মামলার পরে মন্তব্য করে বিপাকে পড়েছিলেন রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন দফতরের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। অভিযোগ, ইংরেজবাজারের লরহাট্টা গ্রামের এক বিধবা মহিলাকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে প্রতিবেশী গ্রামের এক যুবক। ঘটনাটি গ্রামের তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য সালিশি সভা করে মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। এমনকী, এই ঘটনায় রাজ্যের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুবাবু তদন্তের আগে মহিলার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিতর্কে পড়ে যান। একই সঙ্গে মানিকচকের এক মহিলা নিজের দেওরকে বিয়ে করায় গ্রামে সালিশি করে মাথার চুল ছেঁটে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তাতে নাম জড়িয়ে ছিল স্থানীয় এক তৃণমূল নেত্রীর।
সাম্প্রতিক ঘটনায় যাঁর নাম জড়িয়েছে, সেই সিপিএম কাউন্সিলর শুভদীপবাবু অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, “এমন কথা কখনওই বলিনি। ব্যক্তিগত কাজে কলকাতায় রয়েছি। পুরো ঘটনা জানি না। তবে শুনেছি এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এখানে আমার কোনও বিষয় নেই। পুলিশের ব্যাপার। আমি পুলিশকে বলব, যাতে অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার করা হয়। অভিযুক্তরা আমার ঘনিষ্ঠ বলে মিথ্যে প্রচার হয়েছে।’’ মালদহের তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার উপ-পুরপ্রধান তথা তৃণমূলের জেলার কার্যকরী সভাপতি দুলাল সরকার বলেন, “অতীতে সিপিএম এমন সালিশি করে বহু ঘটনাকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করত। সেই পথেই হাঁটছেন তাদের দলের কাউন্সিলর। এমন ঘটনা কাম্য নয়। পুলিশকে বলব, সঠিক তদন্ত করতে।”