রাস্তায় লঙ্কা ফেলে বিক্ষোভ চাষিদের। ছবি তুলেছেন অমিত মোহান্ত।
দাম মিলছে না। তাই পথে লঙ্কা ফলে বিক্ষোভ দেখালেন শতাধিক চাষি।
মঙ্গলবার সকালে দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর থানার ফুলবাড়ি এলাকায় রাস্তায় ফেলে বিক্ষোভ দেখালেন শতাধিক চাষি। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ফুলবাড়ির আড়তে এদিন লঙ্কা বিক্রি করতে গেলে প্রতি কেজি ৫ টাকা দর বেঁধে দেন পাইকারেরা। অথচ সোমবার আড়তে কাঁচালঙ্কা বেচে প্রতি কেজির দাম মেলে ১৫ টাকা। এক রাতের মধ্যে কাঁচালঙ্কার দাম ১৫ টাকা কেজি থেকে ৫ টাকা কেজিতে নেমে যাওয়ায় পিছনে এক শ্রেণির আড়ত ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কারসাজির অভিযোগ তুলে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা বিক্ষোভ শুরু করেন। দাম না পেয়ে আড়ত থেকে বস্তা নিয়ে এসে রাস্তায় লঙ্কা ঢেলে দেওয়া হয়। অবরোধের জেরে বালুরঘাট-গঙ্গারামপুরের মধ্যে সমস্ত যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ গিয়ে আশ্বাস দেওয়ার পরে প্রায় দেড় ঘন্টা বাদে বেলা ১০টা নাগাদ অবরোধ ওঠে। এর পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এই এলাকায় হঠাৎ করে কাঁচালঙ্কার দাম পড়ে যাওয়ার বিষয়ে কৃষি বিপণন দফতরের তরফে এদিন কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি বলে চাষিদের অভিযোগ। দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক তাপস চৌধুরী জানান, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চাষিদের অভিযোগ, কৃষি বিভাগের উদাসীনতার জন্যই লঙ্কার দামের জন্য আড়তদারদের উপর নির্ভর করে থাকতে হয়। তবে ফুলবাড়ি এলাকার আড়তদারদের বক্তব্য, হঠাৎ করে বাজারে প্রচুর কাঁচালঙ্কা নিয়ে চাষিরা ভিড় করায় পাইকারি বাজারে দাম নেমে যায়। গত কয়েক দিনের বৃষ্টির জেরে লঙ্কা গাছ মরে যেতে দেখে সমস্ত লঙ্কা তুলে চাষিরা বিক্রি করতে আসছেন।
জেলায় গঙ্গারামপুরের ফুলবাড়ি এলাকায় কাঁচালঙ্কার হাট বলে পরিচিত। তপন, গঙ্গারামপুর, কুমারগঞ্জ, বালুরঘাট এলাকার চাষিরা উৎপাদিত লঙ্কা বিক্রির জন্য ফুলবাড়ির আড়তদারদের উপর নির্ভর করেন। চাষিদের কাছ থেকে আড়তদারেরা লঙ্কা কিনে তা শিলিগুড়ি, আসানসোল, কলকাতার বাজারে চালান করেন। জেলায় উদ্যান পালন দফতর থাকা সত্ত্বেও লঙ্কা চাষ, সংরক্ষণ কিংবা বাজার দরের বিষয়ে তাঁরা উদ্যোগী নন বলে অভিযোগ। উদ্যানপালন দফতরের আধিকারিক জয়দীপ বর্মন বলেন, “প্রতি বছর বর্ষার সময় কাঁচালঙ্কার দাম নিয়ে সমস্যা হয়। বিষয়টি নিয়ন্ত্রণের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরকে বলা হয়েছে।” লঙ্কা চাষি মধুসূদন সরকার, যোগেন বর্মন, সালাম আলিদের মতো গঙ্গারামপুর এলাকার চাষিরা কেউ ২ বিঘা, কেউ ৩ বিঘা জমিতে কাঁচালঙ্কার চাষ করেছিলেন। তাঁরা জানিয়েছেন, ঋণ করে লঙ্কার চাষ করেছেন। শুরুতে একবার ভাল দাম পেয়েছেন চাষিরা। দ্বিতীয়বার জমি থেকে ফসল তুলে বাজারে আনতেই কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হচ্ছে।