সেবক রোডের পানিট্যাঙ্কি মোড় এলাকায় দুর্ঘটনায় জখম দুজনের চিকিত্সার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট গাড়ির মালিক তথা তৃণমূল কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলার কার্যকরী সভাপতি নান্টু পালের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী মহিন্দর সিঙ্ঘল কেন সহযোগিতা করছেন না সেই প্রশ্ন তুললেন প্রাক্তন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিলিগুড়ি পুরসভার কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বোর্ডের প্রাক্তন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত জখম দুই ভাইয়ের শারীরিক পরিস্থিতির খোঁজ নেন। পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে, তাঁরা গাড়ির মালিক তথা ব্যবসায়ীর দিক থেকে কোনও সহযোগিতা পাননি শুনেও প্রাক্তন মেয়র গঙ্গোত্রী দেবী উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
ঘটনাচক্রে, গঙ্গোত্রীদেবী যখন মেয়র ছিলেন, সেই সময়ে গোড়ায় ডেপুটি মেয়র ছিলেন নান্টুবাবু। প্রাক্তন মেয়র বলেন, “যে পরিবারের দুটি ছেলে জখম হয়েছে তাদের সকলকে আমি চিনি। অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। যাঁরা গাড়িতে ছিলেন, যিনি গাড়ির মালিক তাঁদের সকলেরই মানবিক কারণে ওই পরিবারের পাশে দাঁড়াতো উচিত। জখমদের একজনের পায়ের একটি আঙুল কাটা গিয়েছে। আরেকজনের চোয়াল ভেঙেছে। অনেক সময় লাগবে সুস্থ হতে। প্রচুর অর্থও দরকার। সংশ্লিষ্টরা মানবিকতা না দেখালে তা হবে অত্যন্ত দুর্ভা্যজনক ব্যাপার।” এর পরে প্রাক্তন মেয়রের দাবি, “প্রভাবশালী কেউ ওই দুর্ঘটনা চেপে দেওয়ার চেষ্টা করলেও পুলিশের তরফে কড়া আইনি পদক্ষেপ করা উচিত।” তিনি জানান, ওই পরিবারকে সবরকম সাহায্য করার কথা তিনি জানিয়ে দিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা দুই ভাই স্নেহাশিস এবং শৌভিক মোবাইলের কার্ড কিনতে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। সেবক রোডে বাঁক ঘুরতে গিয়ে একটি বিলাসবহুল গাড়ি বাইকটিকে জোরে ধাক্কা মারলে দুই ভাই ছিটকে পড়ে। দু’জনকেই প্রথমে শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোনে ভর্তি করানো হয়। পরে স্নেহাশিসকে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে সেখানকার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে।
প্রথম থেকেই ওই দুর্ঘটনা ঘিরেই বির্তক তৈরি হয়। যে গাড়িটি ধাক্কা মেরেছিল, সেটি শেঠ শ্রীলাল মার্কেটের ব্যবসায়ী মহিন্দর সিঙ্ঘলের। মহিন্দরবাবু জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি নান্টু পালের একান্ত ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী বলে দলীয় মহলেও পরিচিত। দুর্ঘটনার ঘণ্টাখানেক আগে নান্টুবাবু এবং মহেন্দরবাবুকে ওই গাড়িতে চড়ে সার্কিট হাউসে দেখা গিয়েছিল। যেখানে ছিলেন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’জনেই অবশ্য দুর্ঘটনার সময় গাড়িতে থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। অথচ দুর্ঘটনার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই নান্টুবাবু ও মহেন্দরবাবু যে ভাবে ঝাঁপিয়ে জখমদের উদ্ধার করে নার্সিংহোমে পাঠিয়েছেন তা নিয়ে এখনও ওই এলাকায় আলোচনা চলছে। শুধু তাই নয়, ঘটনার পরে পুলিশ গেলেও গাড়ি আটক করেনি। কোনও মামলাও দায়ের করেনি। তা নিয়ে গোটা শহরে হইচই হওয়ার পরে পুলিশ গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করে মামলা দায়ের করেছে। পরে চালক আত্মসমর্পণ করেন। কিন্তু, কে গাড়ি চালাচ্ছিলেন তা নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে প্রশ্ন ওঠায় পুলিশ ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহে নেমেছে। এখনও অবধি ফুটেজ মিলেছে কি না তা পুলিশ স্পষ্ট জানাতে পারেনি।
মহিন্দরবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁরা ওই পরিবারের পাশে রয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা কখনও বলিনি সাহায্য করব না। সব রকম সাহায্য করব।” তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতা তথা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি নান্টুবাবু বলেন, “মানবিক কারণেই জখমদের পরিবারের ক্ষতিপূরণ পাওয়া উচিত। পরিবারের তরফে যদি চাওয়া হয়, তবে গাড়ির মালিককে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ওই পরিবার চাইলে আমিও সাহায্য করতে রাজি আছি।”