দিনবাজারের দীন দশায় ক্ষুব্ধ শহর

ঐতিহ্যের মুকুট থেকে ক্রমশ বিলুপ্তির পথে একটি পালক। জলপাইগুড়ি শহরের ১২৭ বছরের প্রাচীন ‘দিনবাজার’ টিকে আছে না-থাকার মতো। নেই সংস্কারের ব্যবস্থা। বেহাল নিকাশি থেকে প্রায় শতাব্দী প্রাচীন শেড মিলিয়ে ঘিঞ্জি বস্তির মতো পরিবেশ। দমকলের ইঞ্জিন যাতায়াতের রাস্তা নেই। গোড়ালি ডোবা কাদা। সন্ধ্যার পরে অন্ধকার গলিতে দেশি মদের আড্ডা দেখে কেউ বলে না ওই বাজার শহরের প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৫ ০২:৩০
Share:

ঐতিহ্যের মুকুট থেকে ক্রমশ বিলুপ্তির পথে একটি পালক। জলপাইগুড়ি শহরের ১২৭ বছরের প্রাচীন ‘দিনবাজার’ টিকে আছে না-থাকার মতো। নেই সংস্কারের ব্যবস্থা। বেহাল নিকাশি থেকে প্রায় শতাব্দী প্রাচীন শেড মিলিয়ে ঘিঞ্জি বস্তির মতো পরিবেশ। দমকলের ইঞ্জিন যাতায়াতের রাস্তা নেই। গোড়ালি ডোবা কাদা। সন্ধ্যার পরে অন্ধকার গলিতে দেশি মদের আড্ডা দেখে কেউ বলে না ওই বাজার শহরের প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান আনন্দগোপাল ঘোষ বলেন, “সুদূর অতীতে করলা নদীর পাড়ে বাজারের ঘাটে এসে ভিড়ত পণ্য বোঝাই খেয়া। সাবেক বাংলাদেশের পাবনা, পাটগ্রাম এবং তিস্তা পাড়ের বার্নিশ, বাকালি বাজার থেকে পণ্য আসত।”

Advertisement

পুরসভার মানচিত্রে প্রশস্ত রাস্তা আছে। বাস্তবে এখন সবই গলি-ঘুপচি। পুরনো রাস্তার বেশির ভাগ জুড়ে দোকান বসেছে। জায়গা না পেয়ে রাস্তার উপরে পসরা সাজিয়ে বসতে শুরু করেছেন ফল বিক্রেতারা। পচা জল কাদার গন্ধে দু’দণ্ড দাঁড়িয়ে থাকার উপায় নেই। বর্ষায় আরও করুণ দশা হয়। ফিশ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিশ্বজিত্‌ মিত্র বলেন, “পাইকারি মাছ ও সবজি বাজারকে শহরের বাইরে কোথাও নিয়ে যাওয়ার জন্য বার কয়েক আবেদন জানিয়ে লাভ হয়নি। এটা হলে দিনবাজার বাঁচত।”

গবেষকরা জানান, ১৮৮৫ সালের জানুয়ারি মাসে জলপাইগুড়ি শহর ৩.৭১ একর এলাকা নিয়ে পুরসভায় উন্নীত হয়। নদী পথে বিভিন্ন বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগের সুব্যবস্থার কথা ভেবে দু’বছর পরে ১৮৮৭ সালে রানি জগদীশ্বরী, বাজার তৈরির জন্য বর্তমান দিনবাজার এলাকায় জমি চেয়ে পুরসভার কাছে আবেদন করেন। জমি পেতে সমস্যা হয়নি। ১৮৮৮ সালে বাজার চালু হয়। ওই বাজারের প্রায় পুরোটাই ১৯০৫ সালে পুড়ে ছাই হয়।

Advertisement

এর পরে ফের বাজার নতুন রূপে সেজে ওঠে। যদিও সেই ঐতিহ্য বর্তমানে নেই বলে দাবি করেন প্রবীণ ব্যবসায়ীদের একাংশ। দিনবাজার কল্যাণ সমিতির সম্পাদক দেবু চৌধুরী বলেন, “গত বছর পুরসভা কর্তাদের সঙ্গে বাজারের পরিকাঠামো ঢেলে সাজানো নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। আশ্বাস মিলেছে পাবলিক প্রাইভেট মডেলে কাজের। কিন্তু লাভ হয়নি।”

যদিও পুর কর্তারা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের পাল্টা দাবি, তিন বার পরিকাঠামো তৈরির জন্য উদ্যোগ নিয়েও লাভ হয়নি। সাময়িক কালের জন্য ব্যবসায়ীদের কেউ বাইরে সরে যেতে রাজি নয়। পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “দিনবাজারকে ঢেলে সাজতে সব পরিকল্পনা তৈরি আছে। ব্যবসায়ীরা সহযোগিতার হাত বাড়ালে কাজ আটকে থাকবে না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement