ভারত-বাংলাদেশ স্পর্শকাতর সীমান্তে বাসিন্দাদের গতিবিধি সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য রাখতে সীমান্ত গেটে ‘বায়োমেট্রিক’ যন্ত্র বসানো শুরু করল সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী (বিএসএফ)। আজ, সোমবার থেকে এক বছরের জন্য বিএসএফের সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষ উদযাপন শুরু হচ্ছে। রবিবার বাহিনীর উত্তরবঙ্গের সদর দফতর মাটিগাড়ার কদমতলায় নর্থবেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের আইজি সঞ্জীব কৃষ্ণ সুদ একটি অনুষ্ঠানে বিষয়টি জানান। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির বাসিন্দাদের তথ্য নথিভুক্ত করা, ২৪ ঘন্টা ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি চালু ছাড়াও মাদ্রাসাগুলি নিয়েও খোঁজখবর চলছে বলে আইজি জানিয়েছেন।
আইজি জানান, উত্তরবঙ্গের সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া ওপারে এপারের বাসিন্দাদের জমি রয়েছে। রোজ বাসিন্দারা দল বেঁধে ওপারে যান। কাজ সেরে ফেরেন। আমরা তথ্য নথিবদ্ধ করে রাখি। কিন্তু যিনি যাচ্ছেন, তিনিই ফিরছেন কি না, তা পুরোপুরি নিশ্চিত হতে বায়োমেট্রিক যন্ত্র বসানো হচ্ছে। কারণ,কাগজপত্রেও গোলামাল থাকতে পারে। তিনি বলেন, “আমাদের এলাকায় ৩০টি গ্রাম রয়েছে। সেখানকার বাসিন্দারা রোজ ওপারে যান। আপাতত ৪০টি সীমান্ত গেটে ওই মেশিন বসানো হয়ে গিয়েছে। আগামীতে ধীরে ধীরে সব গেটে তা বসানো হবে।”
বিএসএফ সূত্রের খবর, নর্থবেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের অধীণে কোচবিহারের একাংশ থেকে মালদহ অবধি প্রায় ৯৩৩ কিলোমিটার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে। ৫৪ কিলোমিটার নদী সীমান্ত রয়েছে। সব মিলিয়ে ৬০০টির উপর সীমান্ত গেট রয়েছে। আবার দহরগ্রাম-আঙরাপোতার মত ছিটমহলও রয়েছে। প্রতিদিন শতাধিক বাসিন্দা ওপারে যাতায়াত করেন। গত এক বছরে কাঁটাতারহীন এলাকা এবং বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ঢোকার পর ৩৩৮ জনকে গ্রেফতারও করা হয়। যদিও গতবার এই সংখ্যা ছিল ১৯৬ জন মাত্র।
রাজ্যের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির পর উত্তরবঙ্গের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির মাদ্রাসাগুলি নিয়েও খোঁজখবর শুরু করেছে বিএসএফ। আইজি জানান, সীমান্তের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা ৪৭৩টি মাদ্রাসাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে কী কাজকর্ম হয়, কী পড়ানো হয়, কতগুলির অনুমোদন রয়েছে, কারা সেখানে যাতায়াত করেন সবই খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এখনও অবধি কোনও আপত্তিকর কিছু মেলেনি। এদিন মালদহ, মুর্শিদাবাদ এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের কিছু সীমান্ত এলাকা নিয়ে আইজি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “ওই সীমান্ত এলাকাগুলিতে জালনোটের কারবারীরা উত্তরবঙ্গে সক্রিয় হচ্ছে। গত এক বছরে প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষ টাকার জালনোট ধরা হয়েছে। সবই ওই পথে এসেছে বলে জেরায় উঠে এসেছে।”
বিএসএফের কয়েকজন অফিসার জানান, সীমান্তে চোরাকারবার এবং অনুপ্রবেশের চেষ্টার ঘটনা বেড়েছে ঠিকই। তবে বিএসএফ বাড়তি সতর্ক থাকা ধরাও পড়েছে বেশি। আর বর্ধমান কান্ডের পর বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে বিএসএফ ওই যন্ত্র বসানোর কাজে আরও গতি এনেছে। এর সঙ্গেই ‘হ্যান্ড হেল্ড থার্মাল ডিভাইস’ মনিটর দিয়ে ২৪ ঘন্টা সীমান্তে নজরদারিও শুরু হয়েছে। ফ্রন্টিয়ারের ব্যাটেলিয়ানের সংখ্যাও ১৬ থেকে বাড়িয়ে ১৭টি করা হচ্ছে। বিভিন্ন রাজ্যের ভোটের পরই ওই ব্যাটেলিয়ানের জওয়ানেরা সীমান্তে মোতায়েন হয়ে যাবেন।
নতুন সীমান্ত চৌকি নিয়ে আইজি জানান, রাজ্য সরকারের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ থাকে। জমি এই অঞ্চলে অপ্রতুল রয়েছে। এ ছাড়া আইনি জটিলতাও থাকে। সেগুলি কাটিয়ে উঠতে সময় লাগে। তাই আমরা নতুন পদ্ধতিতে সীমান্ত চৌকি তৈরি করছি। কাঁটাতার থেকে আগে অনেক পিছনে চৌকি থাকত। এখন কাঁটাতারের সঙ্গে লম্বালম্বি করে চৌকি করা হচ্ছে। কারণ, কাঁটাতারের বেড়া থেকে ৪০ গজ আমাদের হেফাজতেই থাকে। বর্তমানে থাকা ১৯৯টি সীমান্ত চৌকি বাড়িয়ে ২৭১টি করা হচ্ছে।