প্র্যাকটিসে অম্র্ুতা দাস। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
মধুমিতা গোস্বামী বিস্তের পর দীর্ঘদিন পর শিলিগুড়ি থেকে ফের কোনও ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় জাতীয় আসরে নামতে চলেছে। শিলিগুড়ির রামকৃষ্ণ ব্যায়াম শিক্ষা সঙ্ঘের খেলোয়াড় অম্রুতা দাস অনূর্ধ্ব ১৫ বিভাগে বাংলা দলে খেলার জন্য মনোনীত হয়েছে। আগামী ১৬ থেকে ১৯ নভেম্বর বিশাখাপত্তনমে জাতীয় ব্যাডমিন্টনের আসর বসতে চলেছে। সেখানে নিজের বিভাগে বাংলা থেকে আরও দু’জনের সঙ্গে সেও মনোনীত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত এটাই তার সেরা প্রাপ্তি হলেও আপাতত এটাকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে আরও দূরে এগিয়ে যেতে চায় বলেই জানাল সে। তার ইচ্ছে অমূলক নয় বলে জানালেন তাঁর কোচ প্রসেনজিত সাহা। আপাতত অনুশীলনে বাড়তি সময় দিয়ে নিজের ভুল ত্রুটি মেরামতিতে মগ্ন সে।
এ দিন নিজের ক্লাব রামকৃষ্ণ ব্যায়াম শিক্ষা সঙ্ঘেই পাওয়া গেল তাকে। এক মনে কোচের কাছ থেকে দেখে নিচ্ছিল ভুল ত্রুটিগুলি। অনুশীলনের ফাঁকে জানাল সে, আপাতত চ্যাম্পিয়ন হওয়া নয়, ভাল খেলার উপরে জোর দিচ্ছে সে। মনকেও তৈরি করছে সে ভাবে । তার বক্তব্য, ‘‘এখন থেকে জিততেই হবে লক্ষ্য নিয়ে নামলে নিজের উপরে বাড়তি চাপ তৈরি করে ফেলা হবে। তার প্রভাব খেলায় পড়তে পারে। তাই চাপমুক্ত থাকতে চাইছি।’’ জানাল ১৪ বছরের কিশোরী। এর কারণও রয়েছে, চলতি বছরের শুরুতেই আসানসোলে একটি জাতীয় র্যাঙ্কিং প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হলেও পরেই কোচবিহার ও চিত্তরঞ্জনে পরপর দুটি র্যাঙ্কিং প্রতিযোগিতায় ফাইনালে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে সে। দুটিতেই সেমিফাইনালে হার স্বীকার করতে হয়। তাই এবার অনেকটাই সাবধানী অম্রুতা। তবে নিজে অত্যুৎসাহী না হলেও তার কোচ কিন্তু আশা করছেন ভাল ফলের ব্যাপারে।
তিনি বলেন, ‘‘শরীর আরও পোক্ত করার উপরেই জোর দিচ্ছি। সকালেও মাঠে গিয়ে র্যাকেট ছাড়া অনুশীলন করানো হচ্ছে।’’ স্ম্যাশ মারার ক্ষেত্রে অম্রুতার দুর্বলতা আছে। তা কাটিয়ে তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা চলছে। এই দুর্বলতা শুধরে নিলে অম্রুতার অনেকটাই শক্তি বাড়বে বলে আশা কোচের। রাজ্য দলে খেলতে যাওয়ার আগে উৎসাহ দিচ্ছেন ক্লাবের প্রাক্তন ও সিনিয়র খেলোয়াড়রাও। তার জন্য নিজেরা চাঁদা তুলে নতুন র্যাকেট ও স্পোর্টস শু কিনে দেওয়া হয়েছে। এটা পরেই সে জাতীয় স্তরের খেলোয়াড়দের মোকাবিলা করবে।
ছোট থেকেই এই ক্লাবেই ব্যাডমিন্টনের হাতেখড়ি। নিজের খেলার বাইরে ক্রিকেট ও লন টেনিসের ভক্ত অম্রুতা। প্রিয় খেলোয়াড় রোহিত শর্মা ও এবি ডেভিলিয়ার্স। লন টেনিসে সেরেনা উইলিয়ামস। প্রত্যেকের খেলার পাশাপাশি তাঁদের ‘অ্যাটিটিউড’ পছন্দ শিলিগুড়ির নামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের এই নবম শ্রেণির ছাত্রীর। তবে আস্তে আস্তে পেশাদার সার্কিটে খেলতে চায়। তাতে পড়াশোনার দিক থেকে সময় কমিয়ে আরও বেশি মন দিতে হবে খেলায় তা-ও জানেন। বাড়িতে তাতে আপত্তি থাকবে না বলে জানাল সে। বাবা অমিতাভবাবু মালবাজারে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাতে সিনিয়র সহকারী হিসেবে কর্মরত। মা রাখিদেবী প্রথমে খেলার চেয়ে পড়াকে বেশি গুরুত্ব দিলেও মেয়ের উৎসাহ ও সাফল্যের কাছে হার মেনেছেন। এখন তাঁদের একটাই ইচ্ছে মেয়ে বড় খেলোয়াড় হোক।