বিধানসভা নির্বাচনের আগে ময়নাগুড়িকে পুরসভায় উন্নীত করার দাবিতে আন্দোলন সংগঠিত করে বামফ্রন্টকে চাপে রেখেছিল তৃণমূল। এ বার তৃণমূলকে চাপে রাখতে একই ইস্যুতে আন্দোলনের পথে সিপিএম।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ফেব্রুয়ারি থেকে পুরসভার দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন শুরু হবে। এ দিকে শহরাঞ্চলে নিজেদের পালে হাওয়া টানতে তৎপর হয়েছে বিজেপিও। মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে আন্দোলনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, ময়নাগুড়িকে পুরসভায় উন্নীত করার তৎপরতা শুরু হয় ২০১০ সালে। ওই বছর সেপ্টেম্বরে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মহাকরণ থেকে ব্লক প্রশাসনের কাছে প্রস্তাবিত পুরসভার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়। ২০১১ সালের ১৮ জানুয়ারি ব্লক প্রশাসন ওই তথ্য পুর ও নগর উন্নয়ন দফতরে পাঠায়। ওই সময় তৃণমূল নেতৃত্ব প্রচার শুরু করে, সবটাই চমক।
তাঁরা রাজ্যে ক্ষমতাসীন হলে এক বছরের মধ্যে জনপদকে পুরসভায় উন্নীত করা হবে। কিন্তু রাজ্যে পালা বদলের প্রায় চার বছর পরেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
দলের ময়নাগুড়ি জোনাল কমিটির সম্পাদক অরুণ ঘোষ বলেন, “বিধানসভা নির্বাচনের আগে যারা বামফ্রন্টের উদ্যোগকে কটাক্ষ করে ক্ষমতাসীন হল, তাঁরা এখন চুপ। আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে আমরা আন্দোলনে নামছি। পুরসভার দাবিতে লাগাতার আন্দোলন চলবে।” অন্য দিকে, বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, পুরসভা ঘোষণা না হলেও গত বছর ১১ জুন তৃণমূল নেতা ও কর্মীরা ব্যান্ডপার্টি নিয়ে উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠেন। বাজি পোড়ানো হয়। শহরবাসীকে মাইকে জানানো হয়, তাঁদের প্রতীক্ষার অবসান হতে চলেছে। অথচ সাত মাস পরেও ওই বিষয়ে সরকারি ভাবে কিছু জানা সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি তাঁদের। বিজেপির ময়নাগুড়ি মণ্ডলের সভাপতি অনুপ পাল বলেন, “তৃণমূল নেতৃত্ব পদে পদে মানুষকে প্রতারিত করছেন।”
বিরোধী দুই দলের আন্দোলনের কর্মসূচির কথা শুনে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। প্রশাসনের তরফে পুরসভার বিষয়ে নবান্নে প্রস্তাব পাঠানো হলেও কবে তা কার্যকরী হবে, সে বিষয়ে তাঁরা অন্ধকারে। দলের ব্লক সভাপতি মনোজ রায় বলেন, “পুরসভার জন্য সমস্ত নথিপত্র প্রশাসনের তরফে পুর মন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়েছে। আশা রাখছি, খুব তাড়াতাড়ি সেটা হবে।”
দলের বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারী বলেন, “আশা করছি, অল্পদিনের মধ্যে ময়নাগুড়িকে পুরসভা ঘোষণা করা হবে। কিন্তু সেটা কবে নাগাদ, বলতে পারছি না।” প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জানুয়ারিতে পুরসভা গঠনের বিষয়ে রাজ্য সরকার জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ময়নাগুড়ি ব্লক প্রশাসনের কাছে তথ্য তলব করে। ১৮ জানুয়ারি তথ্য পাঠানো হয়। পরে আরও কিছু তথ্য পাঠানো হয়েছে।
ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা জানান, ময়নাগুড়ি, খাগরাবাড়ি-১ এবং মাধবডাঙা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ৭টি মৌজা নিয়ে ছয় বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ময়নাগুড়ি পুরসভা গঠনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে পুরসভার জনসংখ্যা হবে প্রায় ৫০ হাজার। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জন ঘনত্ব ৭ হাজার ৪৫৮ জন। ময়নাগুড়ির বিডিও শ্রেয়সী ঘোষ বলেন, “রাজ্য সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য পাঠানো হয়েছে। কবে পুরসভা হবে সেটা আমাদের পক্ষে বলা সম্ভব নয়।”