ডুয়ার্সের চা বাগানে তৃণমূলের দাদাগিরি

দার্জিলিঙে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ‘দাদাগিরি’তে মাস তিনেক আগে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল শতবর্ষ প্রাচীন জঙ্গপানা চা বাগান। এ বার ডুয়ার্সের ক্যারন চা বাগানে তৃণমূলের দাদাগিরির অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার তৃণমূলের চা শ্রমিক সংগঠনের ৪ নেতা ওই বাগানের ম্যানেজারকে নিগ্রহ করেছেন ও তাঁর অফিসে ভাঙচুর চালিয়েছেন বলে বুধবার নাগরাকাটা থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ওই ৪ নেতাকে সাসপেন্ড করেছেন বাগান কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালবাজার শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৪ ০২:০২
Share:

ভাঙচুরের পরে। ক্যারন চা বাগানের দফতরে সব্যসাচী ঘোষের তোলা ছবি।

দার্জিলিঙে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ‘দাদাগিরি’তে মাস তিনেক আগে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল শতবর্ষ প্রাচীন জঙ্গপানা চা বাগান। এ বার ডুয়ার্সের ক্যারন চা বাগানে তৃণমূলের দাদাগিরির অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

মঙ্গলবার তৃণমূলের চা শ্রমিক সংগঠনের ৪ নেতা ওই বাগানের ম্যানেজারকে নিগ্রহ করেছেন ও তাঁর অফিসে ভাঙচুর চালিয়েছেন বলে বুধবার নাগরাকাটা থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ওই ৪ নেতাকে সাসপেন্ড করেছেন বাগান কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে, এমন চলতে থাকলে তাঁরা বাগান বন্ধ করে চলে যেতে বাধ্য হবেন বলেও বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। পুলিশ অভিযোগ পেলেও তৃণমূলের কোনও নেতাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে মালবাজারের এসডিপিও নিমা ভুটিয়া বলেন, “অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।” তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীর দাবি, তিনি এই বিষয়ে কিছুই জানেন না। তাঁর কথায়, “কী ঘটেছে খোঁজ নিয়ে দেখে পদক্ষেপ করব।”

বাগান কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিজের দফতরেই আক্রান্ত হন ম্যানেজার সুভাষ বসু। অভিযোগ, তৃণমূলের চা শ্রমিক সংগঠন তৃণমূল টি প্ল্যানটেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের ক্যারন চা বাগানের শাখা সম্পাদক শঙ্কর বড়াইক ওই দিন সন্ধ্যায় বাগানের আরও তিন নেতাকে নিয়ে ম্যানেজারের দফতরে যান। অনুমতি না নিয়েই শঙ্করবাবুরা ঢুকে পড়েন সুভাষবাবুর ঘরে। তার পরে বাগানের অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করছেন এমন কিছু কর্মীর স্থায়ীকরণ ও পদোন্নতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ম্যানেজারের সঙ্গে তাঁরা আলোচনাও শুরু করেন।

Advertisement

সুভাষবাবু জানান, একই বিষয় নিয়ে সোমবারই তিনি শ্রমিক সংগঠনদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “ওই বৈঠকে দাবি মেনে নেওয়ার কথাও জানিয়েছি। সেখানে এক দিন পরেই কেন তৃণমূলের নেতারা ফের বিনা অনুমতিতে আলোচনা করতে চাইলেন সেটাই বুঝছি না।” ওই নেতারা সুভাষবাবুকে ঠিক তখনই ওই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চাপ দেন বলে দাবি। অভিযোগ, তাঁদের কথা না শুনলে তৃণমূল নেতারা ম্যানেজারের দফতরের চেয়ার, টেবিল উল্টে ফাইলপত্র লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে সুভাষবাবুকে ধাক্কা দিয়ে দফতরের বাইরে বার করে নিয়ে যান। সুভাষবাবুর অন্য সহকর্মীরা ছুটে গিয়ে তাঁকে তৃণমূল নেতাদের হাত থেকে রক্ষা করেন।

শঙ্করবাবুর অবশ্য দাবি, “ম্যানেজারকে নিগ্রহ করা হয়নি।” তাঁর বক্তব্য, জানুয়ারি থেকেই বাগানের ৪৫ জন অস্থায়ী সাব স্টাফের স্থায়ীকরণের দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা, কিন্তু ম্যানেজার তাতে কোনও উৎসাহ দেখাননি। তিনি বলেন, “সেটা বলতেই ওঁর দফতরে গিয়েছিলাম। কিন্তু আলোচনার কথা শুনেই তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। বাদানুবাদ হয়। কিন্তু মারধর হয়নি।”

প্রায় তিন মাস আগে কার্শিয়াং মহকুমার জঙ্গপানা চা বাগানে মোর্চা প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠনের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে দাদাগিরির অভিযোগ ওঠে। ৩১ জুলাই বাগানে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্কের’ নোটিসও ঝুলিয়ে দেয় মালিকপক্ষ। বাগান খুলতে দু’টি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়। দু’টি বৈঠকেই মালিকপক্ষ বাগান খোলার শর্ত দেয়, বাগান পরিচালনার কাজে শ্রমিকপক্ষ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। সেই শর্ত মোর্চা প্রভাবিত ইউনিয়ন মেনে নেওয়ায় ফের বাগান খোলে।

এ বার তৃণমূলের দাদাগিরির অভিযোগ উঠল ডুয়ার্সের এই বাগানে। আদিবাসী নেতা জন বার্লা বলেন, “দাবি জানানোর অনেক পদ্ধতি আছে। এ ভাবে ভাঙচুর, নিগ্রহে কোনও লাভ হয় না। তৃণমূলের এই আচরণে বাগানের পরিবেশই নষ্ট হতে পারে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement