শিলিগুড়ি আদালত

টানা কর্মবিরতিতে ক্ষুব্ধ প্রধান বিচারপতি

কলকাতার আইনজীবীদের কর্মবিরতির দিন কমাতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন আগেই। এ বার নানা দাবিতে শিলিগুড়ি আদালতে টানা কর্মবিরতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর। প্রয়োজনে কলকাতা হাইকোর্ট অন্য আদালতে মামলা সরিয়ে দিতে পারে, আইনজীবীদের তা-ও বলেছেন তিনি। শিলিগুড়ি আদালত ভবন বর্তমান অবস্থান থেকে সরানো চলবে না, এই দাবিতে টানা ৩২ দিন শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা কর্মবিরতি করছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৫৭
Share:

শিলিগুড়ি আদালত চত্বর ঘুরে দেখছেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

কলকাতার আইনজীবীদের কর্মবিরতির দিন কমাতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন আগেই। এ বার নানা দাবিতে শিলিগুড়ি আদালতে টানা কর্মবিরতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর। প্রয়োজনে কলকাতা হাইকোর্ট অন্য আদালতে মামলা সরিয়ে দিতে পারে, আইনজীবীদের তা-ও বলেছেন তিনি।

Advertisement

শিলিগুড়ি আদালত ভবন বর্তমান অবস্থান থেকে সরানো চলবে না, এই দাবিতে টানা ৩২ দিন শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা কর্মবিরতি করছেন। ওই আদালতে ১০ হাজার মামলা বিচারাধীন। রোজ গড়ে ২০০টি মামলার শুনানি হয়। ফলে আরও মামলা জমছে। এই পরিস্থিতিতে শনিবার শিলিগুড়ি আদালত পরিদর্শনে গিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি।

তাঁর সঙ্গে ছিলেন হাইকোর্টের আরও চার বিচারপতি। আদালত সূত্রের খবর, আদালত পরিদর্শনের পর আইনজীবীদের অনুরোধে বার লাইব্রেরিতে বসে কথা বলেন প্রধান বিচারপতি।

Advertisement

ওই কথাবার্তার সময়েই প্রধান বিচারপতি জানিয়ে দেন, দিনের পর দিন কর্মবিরতি চলা কখনও বাঞ্ছনীয় নয়। এমন হলে শিলিগুড়ি আদালতের মামলা অন্য আদালতে সরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা যে তাঁর হাতে রয়েছে, তা-ও উল্লেখ করেন তিনি। দ্রুত কর্মবিরতি তুলে স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরুর জন্য আন্দোলনকারী আইনজীবীদের পরামর্শ দেন প্রধান বিচারপতি, জানিয়েছেন আলোচনায় উপস্থিত আইনজীবীদের একাংশ।

আদালত থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রধান বিচারপতি বলেন, “আদালতে স্বাভাবিক কাজ শুরু করার আর্জি জানিয়েছি।” আইনজীবীদের দাবির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, প্রধান বিচারপতি বলেন, “এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।”

কেন এক মাস ধরে অচল আদালত? শিলিগুড়িতে বর্তমানে আদালত রয়েছে পুর এলাকার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে। ওই এলাকাতেই রয়েছে এসডিও অফিস ও পরিবহণ দফতর। ফলে, সব সময়ই ভিড়ে ঠাসা থাকে এলাকাটি। রাজ্যে তৃণমূল সরকার আসার পর ঠিক হয়, ওই জায়গায় পাঁচতলা ভবন হবে। শিলান্যাস অনুষ্ঠানে ছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি জয়নারায়ণ পটেল। ইতিমধ্যে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট গঠন হলে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের (সিএমএম) আদালতও গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় শিলিগুড়িতে। সিএমএম আদালত হলে সেখানে ভক্তিনগর থানার মামলা স্থানান্তর হওয়ার কথা।

কিন্তু এই সব উদ্যোগই থমকে গিয়েছে। মাস দু’য়েক আগে জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। গত ডিসেম্বর মাসে উত্তরবঙ্গ সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী ভক্তিনগরকে জলপাইগুড়ির সঙ্গে রাখার ঘোষণাও করেন। এর পরে নতুন ভবনের কাজ স্থগিত করে দেয় রাজ্য সরকার। তাতে নারাজ হ’ন শিলিগুড়ির আইনজীবীরা। তাঁদের দাবি, ভক্তিনগর থানা এলাকাকে শিলিগুড়ি আদালতের বিচারবিভাগীয় এলাকার অধীনে আনতে হবে।

পাশাপাশি, শিলিগুড়ি আদালতের নয়া ভবনের জন্য শিলিগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজার লাগোয়া এলাকা, নকশালবাড়ির হাতিঘিষা এবং মাল্লাগুড়ি, তিনটি এলাকা চিহ্নিত করে রাজ্য সরকার। তাতেও আপত্তি আইনজীবীদের। তাঁরা চান, বর্তমান আদালতের জায়গাতেই স্থায়ী ভবন নির্মাণ করতে হবে।

এই দুই দাবিতে গত ৮ ডিসেম্বর থেকে কর্মবিরতি শুরু করেছে শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশন। ঘটনাচক্রে, ওই অ্যাসোসিয়েশনে তৃণমূলের একাধিক প্রথম সারির নেতাও রয়েছেন। খোদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। তবু শাসক দল কিংবা সরকার, কোনও তরফেই কর্মবিরতি তোলার কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

আদালত সূত্রের খবর, এ দিনও বর্তমান অবস্থানে নতুন আদালত ভবন রাখার পক্ষে সওয়াল করেন আইনজীবীরা। তাতে কলকাতা হাইকোর্টের এক বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, শিলিগুড়ি আদালতের প্রায় হাজারখানেক আইনজীবীর যানবাহন রাখার জায়গা বর্তমান আদালত চত্বরে কী করে হবে? প্রধান বিচারপতি-সহ অন্য বিচারপতিরা আদালতের নতুন ভবনের জন্য তিনটি জায়গাই ঘুরে দেখেন।

কিন্তু প্রধান বিচারপতির আর্জি মেনে কর্মবিরতি উঠবে কি? শিলিগুড়ির কংগ্রেস পুরবোর্ডের প্রাক্তন মেয়র তথা আইনজীবী গঙ্গোত্রী দত্তের কথায়, “বার অ্যাসোসিয়েশনের পরবর্তী বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা করব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement