জলস্তর নেমেছে জরদার, আশঙ্কা ভাঙনের

জরদা নদী খাতে তৈরি হওয়া ‘নিক ফলস’ প্রায় পাঁচশো মিটার পিছিয়ে গিয়ে পরিণত হয়েছে গভীর খাদে। গত বছর জল্পেশ মোড় লাগোয়া এলাকাতেও আচমকা নদীগর্ভ অন্তত ৭ ফুট গভীরে তলিয়ে অনেকটা জলপ্রপাতের চেহারা নেয়। নদী স্রোতের শব্দ শুনে বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ময়নাগুড়ি কলেজের ভূগোল বিভাগ থেকে সমীক্ষা করে সে সময়ে জানানো হয়েছিল, ক্রমশ ওই ‘নিক ফলস’ পিছিয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ময়নাগুড়ি শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৪ ০২:০৮
Share:

আগে এমনটাই ছিল নদীর ছবি।

জরদা নদী খাতে তৈরি হওয়া ‘নিক ফলস’ প্রায় পাঁচশো মিটার পিছিয়ে গিয়ে পরিণত হয়েছে গভীর খাদে। গত বছর জল্পেশ মোড় লাগোয়া এলাকাতেও আচমকা নদীগর্ভ অন্তত ৭ ফুট গভীরে তলিয়ে অনেকটা জলপ্রপাতের চেহারা নেয়। নদী স্রোতের শব্দ শুনে বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ময়নাগুড়ি কলেজের ভূগোল বিভাগ থেকে সমীক্ষা করে সে সময়ে জানানো হয়েছিল, ক্রমশ ওই ‘নিক ফলস’ পিছিয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। এক বছরের মধ্যে সেই আশঙ্কা প্রমাণিত হয়েছে। নদী এতটাই গভীর খাতের মধ্য দিয়ে বইতে শুরু করেছে যে আশপাশের জলস্তরও অনেকটা নীচে নেমেছে বলে জানা গিয়েছে। শুকিয়ে গিয়েছে আশেপাশের বাড়ির কুয়ো। চা বাগান ও ফসলের খেতে বাড়তি সেচের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে বলে বাসিন্দাদের দাবি। ময়নাগুড়ি কলেজের ভূগোল বিভাগের প্রধান মধুসূদন কর্মকার বলেন, “এই বিপদের আশঙ্কা ছিলই। এর পরে ভাঙনের সমস্যা দেখা দেবে।”

Advertisement

গবেষকরা জানাচ্ছেন, বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে নির্বিচারে বালি তুলে নেওয়াতেই ওই সমস্যা দেখা দিয়েছে। গত বছর ঘটনার কয়েক মাসের মধ্যে জল্পেশ মোড় লাগোয়া এলাকা থেকে মন্দিরের দিকে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা অন্তত কয়েক ফুট গভীরে তলিয়ে যায়। পরবর্তীতে সেটি ক্রমশ পিছিয়ে ময়নাগুড়ি শহরমুখী হয়েছে বলে সমীক্ষায় জানা গিয়েছে। মধুসুদনবাবু জানান, ভাঙন বন্ধ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।

নদী খাতে তৈরি হওয়া ‘নিক ফলস’ ৫০০ মিটার পিছিয়ে গিয়ে প্রায় ৭ ফুট গভীর হয়ে গিয়েছে নদীটি।

Advertisement

তবে প্রশ্ন উঠেছে, উত্তরবঙ্গের অন্য আরও নদী থেকে বালি তোলা হলেও সেখানে ওই সমস্যা নেই কেন? গবেষকদের দাবি, সেখানে শক্ত পাথর নদীখাতকে ধসে যেতে দেয়নি। জরদা নদীর গর্ভে তেমন শক্ত পাথর নেই। বালির স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হতেই নদীখাতের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। পাল্টে যেতে শুরু করেছে নদী লাগোয়া এলাকার পরিবেশও।

স্থানীয় বাসিন্দা কেশব দেবনাথ ও সুধীর দেবনাথ জানান, অন্য বছরগুলিতে বারো মাস কুয়োর জল ব্যবহার করা যেত। এবার বর্ষা চলে যেতে কুয়ো শুকিয়ে গিয়েছে। আগে ২৫ ফুট পাইপ পুঁতে কলে জল মিলত। এখন ৪০ ফুট গভীরে পাইপ বসানোর পরেও জলের দেখা মিলছে না। নিরুপায় হয়ে পাশের এলাকা থেকে জল বয়ে আনতে হচ্ছে।” এলাকার কৃষক বিমল বর্মন বলেন, “খেতের মাটি শুকিয়ে ধুলো উড়ছে। এবার শাকসব্জি কিছুই চাষ করতে পারিনি। বাড়তি জল সেচের ব্যবস্থা করতে হয়েছে।” একই দশা হয়েছে রমেন দত্ত, ক্ষীরোদ সেনদের। ময়নাগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভাপতি সুভাষ বসু বলেন, “গত বছর জলপ্রপাত সৃষ্টির পরে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে নদী থেকে বালি তোলা বন্ধ করা হয়েছে।”

ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement