জেলা ভাগের সঙ্গে কপাল পুড়ছে জলপাইগুড়ির। জেলা বিভাজনের ফলে একটা অংশ আলিপুরদূয়ারের সঙ্গে জুড়েছে। সেই মতো রাজ্য সরকারের মত কেন্দ্রীয় সরকারের আয়কর দফতরের অফিসও ভাগ হয়েছে। তাতে জেলার কর আদায়ের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য ভাবে কমছে।
জেলা বিভাজনের কাজ জলপাইগুড়ির ক্ষেত্রে তাই সঠিকভাবে হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই সঙ্গে জলপাইগুড়ি জেলার একটা অংশের আয়করের রিটার্ন জলপাইগুড়ির বদলে শিলিগুড়িতে জমা হচ্ছে। তার ওপর আয়কর দফতর কয়েকটি বিভাগ গত নভেম্বর মাসে শিলিগুড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে জলপাইগুড়িতে। জলপাইগুড়ি ট্যাক্সেশন বার এ্যাসোশিয়েশনের পক্ষ থেকে আয়কর দফতরের অফিসগুলিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলন শুরুর হুমকি দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে দিল্লি এবং কলকাতায় আয়কর দফতরে ওপর মহলে চিঠি পাঠিয়ে ক্ষোভের কথা জানানো হয়েছে। কেন না দফতরগুলি চলে যাওয়ায় তাঁরা পেশাগত ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তা ছাড়া কর বা রাজস্ব আদায় কমলে জেলার উন্নয়ন খাতে সরকারি বরাদ্দও কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আগে কলকাতার ইনকাম ট্যাক্স কমিশনারের অধীনে জলপাইগুড়ি এবং শিলিগুড়িতে দু’জন ইনকামট্যাক্স কমিশনার ছিলেন। জলপাইগুড়ির ইনকাম ট্যাক্স কমিশনারের অফিস গত নভেম্বর মাস থেকে অবলুপ্ত করা হয়েছে। এখন জলপাইগুড়ির অফিসটি শিলিগুড়ির ইনকাম ট্যাক্স কমিশনারের অধীনে রয়েছে। শিলিগুড়ির ইনকামট্যাক্স কমিশনার এখন ছুটিতে আছেন। তাঁর জায়গায় দায়িত্বে আছেন সুব্রত সরকার। তিনি বলে, “আমি টেলিফোনে কোনও কিছু জানাব না।”
ট্যাক্সেশন বার অ্যাসোসিয়েশনের জলপাইগুড়ি জেলার সভাপতি সুব্রত পালের দাবি, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে একশ্রেণির আধিকারিকের স্বার্থে আয়কর দফতরের অফিসগুলিকে শিলিগুড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জেলা বিভাজনের ফলে জলপাইগুড়ি জেলার কিছু অংশ আলিপুরদূয়ারের সঙ্গে যোগ হয়েছে।তার ওপর শিলিগুড়ি সংলগ্ন জলপাইগুড়ি জেলার একটা অংশের রিটার্ন শিলিগুড়িতে জমা পড়ছে। তিনি বলেন, “জেলা থেকে কর বা রাজস্ব আদায় কমলে উন্নয়ন খাতে সরকারি সাহায্য এমনিতেই কমে যাবে। জলপাইগুড়ির বাসিন্দাদের ক্ষতি হবে। জলপাইগুড়িকে পঙ্গু করে দেওয়া হচ্ছে। আমরা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বৃহত্তর আন্দোলন শুরু করতে চলেছি।”
প্রশাসনিক সূত্রেই জানা গিয়েছে, জেলা বিভাজিত হওয়ার ফলে বীরপাড়া এবং ফালাকাটার বাসিন্দারা এখন তাদের আয়কর রিটার্ন জলপাইগুড়ির বদলে আলিপুরদূয়ারে জমা দিচ্ছেন। তা জলপাইগুড়িবাসীকে মেনে নিতে হয়েছে। কিন্তু জেলার একটা অংশের বসিন্দাদের রিটার্ন জলপাইগুড়িতে জমা দিতে হচ্ছে না। শিলিগুড়ি সংলগ্ন জলপাইগুড়ি জেলার একাংশের বাসিন্দাদের রিটার্ন জমা হচ্ছে শিলিগুড়িতেই। তাতে জলপাইগুড়ি জেলার আয়তন অনুযায়ী কর আদায়ের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। জেলাভাগের আগে এতদিন সেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং সামাজিক সংস্থার নথিভুক্তকরণ এবং ছাড়ের বিষয়টি (আইটিও এগজাম্পশন) জলপাইগুড়ির অফিস থেকে হত। গত নভেম্বর মাস থেকে তা শিলিগুড়ি থেকে করা শুরু হয়েছে। যুগ্ম কমিশনার ‘ট্যাক্স ডিডাকশন এ্যাট সোর্স’ এবং এই দফতরের সহকারী কমিশনারের অফিস গত নভেম্বর মাসে শিলিগুড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
জলপাইগুড়ির দুটি ব্যবসায়ীদের সংগঠনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে আয়কর দফতরের কলকাতা এবং দিল্লির অফিসে এই ঘটনার প্রতিবাদ করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। জলপাইগুড়ির মার্চেন্ট অ্যাসোশিয়েশনের সম্পাদক সাধন বসু বলেন, “জলপাইগুড়ির ক্ষেত্রে কোনও থেকে সুবিচার করা হচ্ছে না। কোনও অজ্ঞাত কারণে জলপাইগুড়িকে কানা করে দেওয়া হচ্ছে।” নর্থবেঙ্গল চেম্বার আব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সম্পাদক পুরোজি বক্সিগুপ্ত জানান, তাঁরাও বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আয়কর দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন।